শ্রীশ্রীঠাকুর আমার সর্ব্বজ্ঞ ।
এখানে বর্ণিত হয়েছে শ্রীশ্রীঠাকুরের সর্ব্বজ্ঞতার কথা—কীভাবে তিনি রোহিনী কুমার মজুমদারের গোপন ভাবনাগুলি জানতেন এবং নিজের অসীম করুণায় তাকে সংসারত্যাগের পথে যাওয়া থেকে বিরত রেখেছিলেন।
আমাদের মনের কথা আরেক জনকে এমনভাবে বলিতেন যে , তাহাতে মনে হইত আমাদের মনে যেসব চিন্তার উদয় হইয়াছিল , তাহা বুঝি অকপটে শ্রীঠাকুরকে বলিয়াছি । বহুদিন পর্য্যন্ত আমার কোন সন্তানাদি হয় নাই । আমি ও আমার স্ত্রী মহা আনন্দে শ্রীঠাকুরের সহিত যত্রতত্র বেড়াইতাম । এইসময় আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হইলেন । আমার মনে সংসারের প্রতি কেমন যেন একটা উদাসীন ভাবের উদয় হইল । মনে করিলাম , এই বুঝি সংসার একটু একটু করিয়া জড়াইতে আরম্ভ করিল । স্থির করিয়া বসিলাম , সকলের অগোচরে গৃহত্যাগ করিয়া চলিয়া যাইব । ভাবী সন্তানের জন্য কোন চিন্তাই হইল না । আমি জানি আমার শিক্ষিতা স্ত্রী নিজের সন্তানের ভার অনায়াসে বহন করিতে পারিবেন । তাহা ছাড়া , তাঁহাদের সঙ্গে রহিলেন শ্রীঠাকুর , স্বয়ং ভগবান । আমার মনে কোন চিন্তা ব ভয় রহিল না ।
![]() |
শ্যামা সঙ্গীত # Shyama Sangeet | Bengali Devotional Song"#samasangit |
স্থির করিলাম , সুযোগ পাইলেই দুই-এক দিনের মধ্যেই গৃহ ছাড়িয়া পলায়ন করিব । এই কথা কাহাকেও বলি নাই । আমি একটি ঘরে রাত্রিতে একই শয়ন করিতাম । পাশের ঘরে আমার স্ত্রী ও আমার অল্পবয়সী বিধবা ভগনীর সহিত শয়ন করিতেন । নির্দ্ধারিত দিনে খাওয়ার পরে গিয়া শুইয়া পারিলাম । আমার স্ত্রী অন্যান্য দিনের মত পান ও জল লইয়া আসিলেন , কিন্তু অবাক হইয়া দেখিলাম যে , তিনি নিজের শয়ন ঘরে না যাইয়া আমারই শয়নঘরে রহিলেন । তাঁহার এই কার্য্যকলাপে আমি বিস্মিত ও বিরক্ত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম , তুমি এখানে এলে কেন ? স্ত্রী বলিলেন , আজ এখানেই শয়ন করিব । আমি বলিলাম , তোমার এ কোন্ আবদার ? যুবতী বোন একাকী ঘরে শয়ন করিবে , আর আমরা দুজনে এখানে শয়ন করিব , ইহা কখনো হইতে পরে না । তুমি ঐ ঘরে চলিয়া যাও । আমার স্ত্রী তখন কাঁদিয়া ফেলিলেন এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন , তুমি নাকি আমাদের ত্যাগ করিয়া চলিয়া যাইতেছ ? এই প্রশ্নে আমি অবাক হইয়া ভাবিতে লাগিলাম , যে কথা একমাএ আমি নিজেই জানি , এ জগতের কাহাকেও মুখ খুলিয়া বলি নাই , সে কথা আমার স্ত্রী কি করিয়া জানিলেন ? আমি বলিলাম , কে তোমাকে এই কথা বলেছে ? আমার স্ত্রী কাঁদিয়া কাঁদিয়া বলিলেন , আগে তুমি প্রতিজ্ঞা কর , যতদিন আমি বাঁচিয়া থাকিব তুমি গৃহত্যাগ করিবে না । তাহা হইলে আমি সবই বলিব । অগত্যা স্ত্রীর নিকট কথা দিতে হইল , তিনি বাঁচিয়া থাকিতে গৃহত্যাগ করিব না । তখন আমার স্ত্রী বলিলেন , শ্রীঠাকুর আমাকে ও তোমার বোনকে বলিয়াছেন যে , রোহীনীবাবু গৃহত্যাগ করিয়া যাইতে মনস্থ করিয়াছেন । আপনার তাহাকে ধরিয়া রাখার চেষ্টা করেন , কিছুতেই যেন পালাইতে না পারেন । শ্রীঠাকুরের উপর খুবই অভিমান হইল । সারা রাত্রি আর ঘুম হইল না ।
![]() |
Hara Rama Hara Krishna Maha Mantra Kirtan | Bhakti Bhajan | হরে রাম হরে কৃষ্ণ महा मंत्र" |
প্রভাতে হাত-মুখ ধুইয়া শ্রীঠাকুরের ঘরে প্রবেশ করিলাম । শ্রীঠাকুর আমাকে দেখিয়াই হাসিতে লাগিলেন । খাতা-পেন্সিল লইয়া ছবি আঁকিয়া আমাকে বুঝাইতে লাগিলেন যে , সংসার ত্যাগ না করিয়া বরং সংসারে থাকিয়া ভগবৎ সেবায় আত্মোৎ্সর্গ করিলে মুক্তিলাভ সহজ হয় । এতক্ষণ পরে শ্রীঠাকুরকে বলিলাম , এমন ভাবে আমাকে জব্দ না করিয়া এই সকল কথা তো আগেই আমাকে বুঝাইতে পারিতেন । এই কথা শুনিয়া শ্রীঠাকুর একটু হাসিয়া অন্য প্রসঙ্গ আরম্ভ করিলেন । সেই দিন হইতে আর সংসার ত্যাগের বাসনা কোন দিনই মনে আসে নাই । রোহীনী কুমার মজুমদার । " শ্রীগুরু শ্রীশ্রীরাম ঠাকুর " পৃষ্টা সংখ্যা ৪৬ হইতে ।
এই লেখাটির মর্মার্থ আমাদের জীবনের এক গভীর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা এবং শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতি অপরিসীম আস্থা ও বিশ্বাসের গল্পকে তুলে ধরে। এখানে বর্ণিত হয়েছে শ্রীশ্রীঠাকুরের সর্ব্বজ্ঞতার কথা—কীভাবে তিনি রোহিনী কুমার মজুমদারের গোপন ভাবনাগুলি জানতেন এবং নিজের অসীম করুণায় তাকে সংসারত্যাগের পথে যাওয়া থেকে বিরত রেখেছিলেন।
![]() |
Hara Rama Hara Krishna Maha Mantra Kirtan | Bhakti Bhajan | হরে রাম হরে কৃষ্ণ महा मंत्र" |
রোহিনী বাবু সন্তানাদি লাভ করতে না পারায় স্ত্রীকে নিয়ে শ্রীঠাকুরের আশ্রয়ে ঘুরে বেড়াতেন এবং ঈশ্বর ভক্তির মাঝে পরম সুখে ছিলেন। একসময় যখন তাঁর স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হলেন, তাঁর মনে সংসার পরিত্যাগের ইচ্ছা জাগে। তিনি মনে করতে থাকেন যে সংসারের মায়া তাকে আবদ্ধ করছে, তাই সুযোগ পেলেই একা সন্ন্যাস গ্রহণ করবেন বলে স্থির করেন।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, তিনি এই চিন্তা কাউকে জানাননি, তবুও তাঁর স্ত্রী হঠাৎ একদিন তাকে প্রশ্ন করেন যে তিনি সংসার ত্যাগের ইচ্ছে পোষণ করেছেন কিনা। স্ত্রী জানান যে শ্রীশ্রীঠাকুর তাদের এই বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন, এবং তাকে সাথে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। রোহিনী বাবুর মনে বিস্ময় এবং ঠাকুরের প্রতি অভিমান জাগে। তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা মুখে না বললেও ঠাকুরের সর্ব্বজ্ঞতার ফলে তিনি তা জানলেন।
![]() |
ॐ ह्रीम श्रीम क्रीम श्रीं कुबेराय अष्टा लक्ष्मी मम ग्रह धनं पुरया पुरया नमः 🕉 অষ্ট লক্ষ্মী মন্ত্র |
পরের দিন তিনি ঠাকুরের কাছে যান এবং শ্রীঠাকুর তাকে সংসারে থেকে ভগবৎ সেবায় আত্মোৎসর্গ করার পরামর্শ দেন। ঠাকুর তাকে বোঝান যে সন্ন্যাসগ্রহণের পরিবর্তে সংসারে থেকেও আত্মা মুক্তি সম্ভব, কারণ প্রকৃত মুক্তি মানুষের মনের ভাবনাতেই নিহিত।
এই অভিজ্ঞতার পর থেকে রোহিনী বাবুর আর কখনো সংসার ত্যাগের বাসনা জাগেনি।
%20%E0%A6%B8%E0%A6%AC%20(%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE)%20%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%87%20%E0%A6%B8%E0%A6%96%E0%A7%80%E0%A6%97%E0%A6%A8%E0%A7%87%20%E0%A6%89%E0%A7%8E%E0%A6%B8%E0%A6%AC%20%E0%A6%98%E0%A6%9F%E0%A6%A8%E0%A6%BE%20%E0%A6%B9%E0%A6%87%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%20%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A5%A4%20%E0%A6%A6%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%AF%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%9E%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE%20%E0%A6%B8%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%A8%20%E0%A6%A6%E0%A7%82%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%80%20%E0%A6%B9%E0%A6%87%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%20%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A5%A4%20(1).png)
No comments: