রাম ঠাকুরের কথা
সেদিন অনেকেই ঠাকুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে আসিলেন কিন্তু রাত্রি ৮/৮-৩০'র মধ্যেই সকলে চলিয়া গেলেন। কাঁচকলার ব্যাপারের পর দিদি আর ঠাকুরের নিকট আসেন নাই, এখন নিরিবিলি পাইয়া ধীরে ধীরে আসিয়া ঠাকুরের নিকট বসিলেন এবং তাঁহার একখানা পায়ে হাত বুলাইতে লাগিলেন। কিছুক্ষণ এই ভাবে নীরবে কাটিয়া গেল, আমরা কেহই কিছু বলিলাম না। প্রভাতবাবুর বোধ হয় হঠাৎ মনে পড়িয়া গেল যে কাঁচকলার ব্যাপারটা দিদির সঙ্গে বোঝাপড়া করিয়া লওয়া হয় নাই, তাই তিনি দিদিকে কথাটা জিজ্ঞাসা করিয়া বসিলেন। আমি ভাবিয়াছিলাম যে দিদি অত্যন্ত লজ্জিত ও অপ্রস্তুত হইবেন, সেই জন্যই প্রসঙ্গটা আর উত্থাপন করি নাই কিন্তু এখন দেখিলাম যে মস্ত একটা ভুল করিয়া বসিয়াছিলাম। দিদি প্রভাতবাবুর অনুযোগটাকে মোটে আমলেই আনিলেন না এবং বেশ সপ্রতিভ ভাবেই বলিলেন: “কেন তাতে হইয়াছে কি? কাঁচকলা সিদ্ধ আগুনের জ্বালেও হইতে পারে, ভাপেও হইতে পারে, সিদ্ধ সিদ্ধ, তাহা যে আবার ঘি'য়ে স্যাঁৎলাইয়া লইতে হয় এমন কথা জীবনেও শুনি নাই, রামের যত সব আজগুবি ফরমাশ।” ইহার পর আর কথা চলে না, আমরাও কিছু বলিলাম না, ঠাকুরও কিছু বলিলেন না, আবার কিছুক্ষণ নীরবে কাটিয়া গেল। হঠাৎ এক সময় দিদি ঠাকুরের পায়ে মাথা ঠেকাইয়া প্রণাম করিলেন এবং পরে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন: “রাম, আমার কি কোন ব্যবস্থাই করবে না? তোমাকে বলিয়া বলিয়া যে হয়রান হইয়া গেলাম।”
ঠাকুর বলিলেন: "আপনাকে তো বলাই হইয়াছে যে পতিসেবাই ধৰ্ম্ম।”
এই কথাটায় দিদির বেশ একটু আঁতে ঘা লাগিত; পূর্ব্বেও দেখিয়াছি, এখনও দেখিলাম যে কথাটা তিনি মোটেই সহ্য করিতে পারেন না। দিদি একেবারে তেলেবেগুনে জ্বলিয়া উঠিলেন এবং কতকটা উষ্মার সহিত বলিলেন: “এ সব বাজে কথা তোমার কাছে কে শুনতে চায়? আসল কথাটা বল।"
ঠাকুর বলিলেন যে আসল নকল তিনি কিছু জানেন না, এক কথাই জানেন এবং তাহাই বলিয়াছেন। পরে বিশদভাবে পতিব্রতা ধৰ্ম্ম কি, পতিসেবা কাহাকে বলে, ইত্যাদি বুঝাইয়া দিলেন।
দিদির দিকে চাহিয়া মনে হইল যে তিনি নিতান্ত তাচ্ছিল্যের সহিত কথাগুলি শুনিতেছেন। ঠাকুরের কথা শেষ না হইতেই তিনি উঠিয়া গেলেন। দিদির সহিত কথাবার্তায় পরে বুঝিয়াছিলাম যে ব্রজগোপীরা যেমন স্বামী ছাড়িয়া কৃষ্ণভজন করিয়াছিলেন, সেই জাতীয় একটা কোন নির্দেশ তিনি ঠাকুরের নিকট চাহিতেছিলেন। তাহা হইলেই তিনি তাহার এই অসামাজিক আচরণের এবং স্বামী ও অন্যান্য আত্মীয় পরিজনাদির প্রতি অমার্জনীয় তাচ্ছিল্যের একটা সমর্থন পাইয়া যাইতেন।
জয় শ্রীশ্রী রাম ঠাকুর।
লেখক: ডক্টর শ্রী ইন্দুভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
“রাম, আমার কি কোন ব্যবস্থাই করবে না? তোমাকে বলিয়া বলিয়া যে হয়রান হইয়া গেলাম।”
Reviewed by শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ(SriSriramthakur O gan Ganer vhovon Youtube channel)
on
August 24, 2024
Rating:

No comments: