শ্রী শ্রী ঠাকুরের কথা:--
শ্রী শ্রী ঠাকুর তখন তাঁর আশ্রিত ভক্ত রাজেন্দ্র লাল ব্যানার্জী মহাশয়ের বাড়ীতে শুভবিজয় করিতেছিলেন। রাজেন্দ্রবাবু মৈনামতী সার্ভে স্কুলের অধ্যক্ষ ছিলেন। কুমিল্লা ও অন্যান্য স্থান হইতে বহু ভক্ত সেখানে আসিয়াছিলেন। তখন সকাল প্রায় ১১ টা .... রাজেন্দ্র বাবুর স্ত্রী শ্রী ঠাকুরকে গরদের জামা, গরদের ধুতি ও গরদের চাদর দিয়া সাজাইয়া তাঁহাকে প্রণাম করিলেন। ঠাকুর মশাই বলিলেন, "মা,আমাকে খুব সাজাইয়া- ছেন, এবার এগুলি খুলিয়া ফেলেন।" এদিকে তখন দুপুর ২-৪০ বাজে... আমি ক্ষুধায় খুব কাহিল হইয়া পড়িয়াছিলাম। ঠাকুরমশাই ত অন্তর্যামী। রাজেন বাবুকে ডাকিয়াবলিলেন...."আপনাদের যাহা রান্না হইয়াছে তাহা যেন এখনই দেওয়া হয়।" রাজেন বাবুর জামাতা ও কন্যাগণ সঙ্গে সঙ্গে ভক্তদের পংক্তিতে বসাইয়া অন্ন পরিবেশন করিতে আরম্ভ করিলেন।
ঠাকুরমশাই আমার নিকটেই একখানা ইজিচেয়ারে বসিলেন। আস্তে আস্তে আমাকে বলিলেন..."আপনি মাংস মাছ ডিম খান না ক্যান ?" আমি বলিলাম..."মাংস খাইলে শরীরে সাত্ত্বিক ভাব আসে না। শাস্ত্রে মাংস খাওয়া নিষেধ - তাই।"
তিনি বলিলেন, "অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়া দেখিলে দেখিবেন শত শত পোকা আপনার মুখে ঢুকিতেছে । সেগুলি খাইলে পাপ হয় না,অথচ তিন টুকরা মাংস খাইলে পাপ হয় তা আমি বলি না। একটা প্রাণী অন্য একটা প্রাণীকে আহার করে। ইহা সৃষ্টি বৈচিত্র্য, ইহাতে কোন পাপ হয় না। আপনার বয়স প্রায় ৩০-৩১ বছর, বাঙ্গালী হইয়া মাছ মাংস না খাইলে শরীর রক্ষা করা কঠিন হইবে।" অগত্যা আমি মাছ মাংস খাইব বলিয়া স্বীকার করিলাম।
তিনি আরও বলিয়াছেন...." হাজার বৎসর নিরামিষ খাইলেও কোন কাজ হইবে না। চাবিকাঠি গুরুর হাতে।" আজ পর্যন্ত তাঁহার আদেশ লঙ্ঘন করি নাই।
একবার ঠাকুর মশাইকে প্রণাম করিয়া বসিবার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলিলেন --"আপনে সারা রাত্রি না ঘুমাইয়া নাম করেন ক্যান ?" আমি বলিলাম -- "মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পতন-- ভগবানের দর্শন না পাওয়া পর্যন্ত রাত্রে আর ঘুমাইব না।"
তিনি বলিলেন --"ভগবান আপনার সম্মুখেই বসিয়া আছেন, সর্বদা দর্শন করিতেছেন, তথাপি এত কষ্ট করেন ক্যান ?" তাঁহার কথায় আমার চৈতন্য হইল।
তিনি আরও বলিলেন -- গীতায় বলিয়াছেন,
" যুক্তাহার বিহারস্য যুক্ত চেষ্টস্য কর্মসু।
যুক্ত স্বপ্নাব বোধস্য যোগো ভবতি দুঃখ হা।"
অর্থ:-- যিনি নিয়মিত আহার ও বিহার করেন, সর্বব কাজে যাঁহার পরিমিত ও নিয়মিত চেষ্টা থাকে, যাঁহার নিয়মিত নিদ্রা জাগরণ তাহার যোগ বা ধ্যান দুঃখ নিবর্তক হয়।
সুতরাং আপনি নিয়মিত নিদ্রা যাইবেন ও সময়মত আহার করিবেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে বলিলাম...." আপনার কথা অবহেলা করিব না।"
তিনি আবার বলিলেন -- "আপনি ভোরে স্নান করেন ক্যান ? আপনার সান্নিপাতিকের দেহ, দুইবার সাংঘাতিক জ্বরে ভুগিয়াছেন। যদি আবার সকালে স্নান করেন তবে তার ফল খুব মারাত্মক হইবে। সকলেই তিন বেলা স্নান করিতে পারেন না।"
ঠাকুর মহাশয় এও বলিলেন -- "আপনি নিরম্বু একাদশী করেন ক্যান ? আপনার খুবই কষ্ট হয়। এরূপ কষ্ট করিয়া উপবাস করার কোন অর্থ নাই। আপনি কোন দিন উপবাস করিবেন না। যাহারা সহ্য করিতে পারেন তাঁহারা করিবেন। আবার বলিলেন -- "উপ অর্থ নিকটে বাস করা, অর্থাৎ সর্বদা নামের সঙ্গে থাকা।"


No comments: