রাম ঠাকুর ও যোগীশ্বর কালীপদ গুহরায়ের প্রথম মহা-মিলন

একদিন 'পরমবন্ধু' যোগীশ্বরকে বললেন, 'রাম তোমার সঙ্গে দেখা করতে চায়।'
যোগীশ্বর আশ্চর্য হয়ে বললেন, 'রাম আবার কে?'
যোগীশ্বর তাঁকে কখনো দেখেন নি। সানন্দে রাজী হন। 'বন্ধু' বললেন, 'আগামী কাল বেলা তিনটের সময় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের উত্তরে প্রধান ফটকের সামনে রাম অপেক্ষা করবে। সে সময় যেয়ো।'
যোগীশ্বর নিজেই এই সাক্ষাৎকারের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনটের সময় উত্তর গেটে গিয়ে দেখেন গৌরকান্তি, দীর্ঘদেহ, উজ্জ্বল নয়ন এক ব্যক্তি খড়ম পায়ে দাঁড়িয়ে আছেন। পরনে ধুতি এবং একটি হাফহাতা ফতুয়া। যোগীশ্বর বুঝতে পারলেন ইনিই সাধুমহলে বহুলশ্রুত খ্যাতনামা ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ রামঠাকুর।
স্থানটি জনবিরল। জাপানী বোমার ভয়ে শহর থেকে লোক প্রায় গ্রামের দিকে চলে গেছে। এগিয়ে যেতেই শ্রীমৎ রামঠাকুর সহাস্যে অভ্যর্থনা করলেন যোগীশ্বরকে।
বললেন, 'এসো, এসো, কালীভাই।' প্রেমভরে জড়িয়ে ধরলেন। পরম উৎসাহে বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা হলো। দেখে মনে হচ্ছিল পূর্ণ ব্রহ্মজ্ঞ রামঠাকুর যেন নন, ইনি আনন্দোজ্জ্বল এক তরুণ।
কথাপ্রসঙ্গে রামঠাকুরকে যোগীশ্বর প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা, এই যাঁকে আমি 'বন্ধু' বলে ডাকি, আসলে ইনি কে?'
শুনেই দিব্য আনন্দের আভা ছড়িয়ে পড়লো রামঠাকুরের চোখে মুখে। বললেন, 'ভাই, ইনি হচ্ছেন সেই মহাশক্তি-ঋষি, মুনিরা, আমাদের মতো সাধকেরা যুগে যুগে যাঁকে ভক্তিভরে ধ্যেয়ায়।'
যোগীশ্বর বললেন, 'তা আমায় ইনি এমন করে ধরেছেন কেন বলুন তো?'
উত্তর দিলেন রামঠাকুর, 'কালীভাই, তোমার যে জন্ম জন্মান্তরের সুকৃতি আছে। তাই তোমার পেছনে এমন ভাবে লেগে রয়েছেন।' রসিকতা করে মন্তব্য করলেন, 'ভাই, ইনি তো সব সময় মানুষকে এড়িয়ে চলেন, সহজে ধরা দেন না, তোমার কাছে যখন ধরা পড়ে গেছেন, আচ্ছা করে শিক্ষা দিয়ে দাও তো ভাই।' বলেই কিশোর বালকের মতো হাসিতে ফেটে পড়লেন।
কথাবার্তায় প্রায় দু'ঘণ্টা কেটে গেছে। যোগীশ্বরের হঠাৎ মনে হলো পাঁচটার সময় নিমতলায় একজনের সঙ্গে দেখা করতে হবে। রামঠাকুর প্রশ্ন করলেন, 'তোমার কি হলো? চিন্তা করছ যেন।'
যোগীশ্বর বললেন, 'নিমতলায় পাঁচটার সময় একজনের সঙ্গে দেখা করার কথা। খুব জরুরী কাজ। তা দেখছি পাঁচটা তো বেজেই গেল। তাকে আর ধরা যাবে না।'
দিব্য মধুর হাসি ছড়িয়ে রামঠাকুর বললেন, 'এই কথা? তবে যাও নিমতলায়।'
যোগীশ্বর বললেন, 'কি আশ্চর্যের কথা, পর মুহূর্তেই আমি দেখছি- যার বাসায় আমি যাবো ঠিক তার বাড়ীর স্টপে নিমতলার ট্রাম থেকে আমি নামছি, রাস্তার উপরে পা রাখছি। বেলা পাঁচটার সময়, দিনের বেলাতে রামভাই আমাকে ফিজিকালি মুহূর্তের মধ্যে চালান করে দিলেন পাঁচ মাইল 'দূরেকার গন্তব্যস্থলে।'
পরদিন 'বন্ধু'র সঙ্গে সাক্ষাৎ হতেই তিনি সহাস্যে বললেন, 'রামের সঙ্গে দেখা করে কাল কেমন লাগলো তোমার?'
সব কথা বলে যোগীশ্বর বললেন, 'হিপনোটিজম্ নয়, ফিজিক্যালি রাম ভাই মুহূর্তে আমার এই শক্ত সমর্থ দেহটাকে দূরে চালান করে দিলেন?'
প্রসন্নকণ্ঠে 'বন্ধু' বললেন, 'হ্যাঁ রাম বললো-দিলাম আমার কালীভাইকে একটা ধাক্কা দিয়ে। আমাদের দুই সখার মধ্যে একটা মজা হয়ে গেল।'
জয় শ্রীশ্রী রাম ঠাকুর। জয় যোগীশ্বর শ্রীশ্রী কালীপদ গুহ রায়।
No comments: