দম্ভের দান, দণ্ডের সমান — শ্রীশ্রী রামঠাকুরের লীলা অমৃত
পরম প্রেমময় শ্রীশ্রী রামঠাকুরের অতুলনীয় লীলা–অমৃত ভক্তহৃদয়ে চিরন্তন হয়ে আছে। সুধীরচন্দ্র সরখেল মহাশয়ের জীবনে সংঘটিত তেতো আমের লীলা ভক্তি–বিনয়–গুরুকৃপা ও অহংকার–বর্জনের একটি অসামান্য শিক্ষা।
“বড় ভাল আম, বড় মিষ্ট আম সুধীর আনছে।”
— শ্রীশ্রী রামঠাকুর
🔶 সুধীরচন্দ্রের দুঃসময় ও ঠাকুরের প্রতি আকর্ষণ
ফরিদপুর জেলার মাঐসার গ্রামের বেকার যুবক সুধীরচন্দ্র। কাজ নেই, পথ নেই, সংসারের দুর্দশা। এমন সময় খবর এল—শ্রীশ্রী রামঠাকুর পার্শ্ববর্তী গ্রামে এসেছেন। মায়ের আশীর্বাদ ও তিরস্কারের মধ্য দিয়ে তিনি রওনা দিলেন ঠাকুরের কাছে।
🔶 ঠাকুরের কাছে সুধীরের প্রয়াস ও গুরুবাণী
সুধীর পূর্বে যেভাবে ছোট্ট দান করতেন, ঠাকুর তা “হরির লুট” হিসেবে দান করতেন। একদিন তিনি নিজেই লুটের পয়সা কুড়িয়ে নিলে ঠাকুর বললেন—
“গুরুকে দান করা ধন কিছু নিতে নাই, গুরুর কাছে কিছু চাইতেও নাই।”
এই বাণী সারা জীবন সুধীরচন্দ্রকে পথ দেখিয়েছে।
🔶 দারিদ্র্যের দিনে পথের ধারে পাওয়া ‘তেতো আম’
পরদিন সুধীরচন্দ্র ঠাকুরের কাছে কিছু নিয়ে যেতে চাইলেন। কিন্তু ঘরের হাঁড়ি ফাঁকা। অপার দারিদ্র্যের মাঝে হঠাৎ পথের ধারে একটি বড় আম পড়ে থাকতে দেখে তিনি সেটিকেই ঠাকুরের জন্য নিবেদন করলেন।
আমটি তেতো ছিল—তবু ঠাকুর বললেন—
“না, বড় ভাল আম, বড় মিষ্ট আম সুধীর আনছে।”
তেতো আম ঠাকুর দীর্ঘক্ষণ চেটে চেটে খেলেন—কারণ এতে দম্ভ ছিল না, ছিল ভক্তির দান।
🔶 কটকে সুধীরচন্দ্র—সাফল্যের চূড়ায়
সময়ের স্রোতে সুধীরচন্দ্র আর দরিদ্র রইলেন না। কটকের বিখ্যাত সরকারি ঠিকাদার, বিপুল সম্পদ, বিশাল ব্যবসা—সমৃদ্ধ জীবন। তখনই আবার পেলেন ঠাকুরমহাশয়ের আগমন সংবাদ।
🔶 বারো ঝুড়ি আম—অহংকারের পরীক্ষা
সুধীরচন্দ্র এবার ঠাকুরের জন্য আনলেন কটকের শ্রেষ্ঠ বারো ঝুড়ি আম। ঘর ভরে গেল সুগন্ধে। কিন্তু বারংবার অনুরোধ করলেও ঠাকুর বললেন—
“এখন থাক।”
তিন দিন ধরে একটিও আম স্পর্শ করলেন না ঠাকুর। শেষপর্যন্ত সব আম পচে নষ্ট হয়ে গেল—কারও ভাগ্যে একটি আমও জুটল না।
🔶 সুধীরচন্দ্রের উপলব্ধি
অবশেষে সুধীরচন্দ্র গভীর উপলব্ধিতে বুঝলেন—
“যে তেতো আম আমি দারিদ্র্যের দিনে ঠাকুরকে দিয়েছিলাম, তাতে অহংকার ছিল না। কিন্তু কটকের বার ঝুড়ি আম—সেগুলো আম নয়, অহংকারের ঝুড়ি।”
🌼 চূড়ান্ত শিক্ষা
“দম্ভের দান, দণ্ডের সমান।”
ভক্তির প্রকৃত মূল্য ‘দ্রব্যে’ নয় — ‘দ্রব্যের পেছনের মানসিকতায়’। গুরুর কাছে দান মানে সমর্পণ, অহংকারহীন ভালোবাসা, আর বিনয়।
✔ সম্বল বড় নয়, সমর্পণ বড়।
✔ দারিদ্র্যের দানও মহামূল্যবান যদি তাতে দম্ভ না থাকে।
✔ অহংকারের দান কখনও গৃহীত হয় না।
✔ গুরুর কাছে ভক্তির মধুরতা দ্রব্যে নয়, হৃদয়ে।
হঠাৎ শুনিতে পাইলাম একটি কীর্ত্তনের দল — একটি রাতের সাক্ষ্য
“সারারাত খুব কীর্তন হইয়াছে, ঘুমের প্রশ্নই উঠে না।” — শ্রীশ্রী ঠাকুর
একবার অনেক মানুষ মিলিয়া গভীর আড্ডা শেষে প্রায় একটার দিকে ঠাকুর বিশ্রাম নিলেন। পরদিন ভোরে উঠে দেখলাম ঠাকুর বিছানার ওপর বসিয়াছেন। জিজ্ঞাসা করলে বললেন সারারাত কীর্ত্তন হইয়াছিল তাই ঘুম হয়নি। আমি বিস্মিত হয়ে বলিলাম— “আমরা তো কিছুই শুনিতে পাই নাই”।
কিছুদিন পরে আবার এমনই এক রাত্রে আমার কাছে ঘুম এলে চুপ করে শুইলাম। হঠাৎ মনে হল দূর হইতে কীর্ত্তনের সুমধুর কণ্ঠ আসিতেছে; উঠিয়া দরজা খুলিতে গেলাম—কিন্তু বাহিরে কীর্ত্তনের কোনো চিহ্ন ছিল না। আবার শুইলে শোনা গেল কীর্ত্তন, মনে হইল দলটা পেছনের গলির ফাঁকে আসিতেছে, উঠিলাম—অপরাজেয় নীরবতা।
একপর্যায়ে বুঝলাম—এটি আশেপাশের কোনো বাস্তব শোরগোল নয়; বরং মন-অবস্থা বা স্বরূপের সঙ্গে যুক্ত এক আধ্যাত্মিক অনুভব। কীর্ত্তনের সুরে শোনাইয়া কখনো অনিষ্টহীন ঘুম এসে পড়িল। সকালের প্রশ্নে ঠাকুর মৃদুভাবে জিজ্ঞেস করিলেন—“ক্যান আপনি শোনেন নাই?” এবং প্রকাশ করিলেন যে তিনি প্রায়ই এই রাত্রিকালীন কীর্ত্তন শুনিয়া থাকেন।
শিক্ষা ও প্রকাশ
- কীর্ত্তন সবসময় বাহ্যিক নয় — কখনো তা অন্তরজাগ্রতির রূপে প্রकट হয়।
- গুরুদেবের অভিজ্ঞতা আমাদের অন্তরের উচ্চতাকে স্পর্শ করে; সবকিছুই অত্যন্ত সূক্ষ্ম।
- মন-ভ্রান্তি ও প্রত্যক্ষতা আলাদা: অনেকে নীরবতায় শুনতে না পেলেও গুরুর অন্তর-দৃষ্টি উপলব্ধি করে থাকেন।
Reviewed by শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ(SriSriramthakur O gan Ganer vhovon Youtube channel)
on
November 14, 2025
Rating:






.jpg)
No comments: