গুরু ভাই বোনসহ সকল সনাতনী ভাই বোনদের জানাই স্বাগত ,উদ্দেশ্য গুরু দেবের অমৃত বানী সকলের মাঝে প্রচার করা।

মনের স্থিরতা ও প্রাণের মধ্যঅবস্থা — বেদবাণী ২য় খন্ড/১২০ | বাংলা ব্যাখ্যা

মনের স্থিরতা ও প্রাণের মধ্যঅবস্থা — বেদবাণী ২য় খন্ড/১২০ | বাংলা ব্যাখ্যা ও শিক্ষা

মনের স্থিরতা ও প্রাণের মধ্যঅবস্থা — বেদবাণী ২য় খন্ড/১২০

শ্রীশ্রী রামঠাকুরের বাণী থেকে অনূদিত এই পাঠ আমাদের শেখায় কিভাবে মনের ধৈর্য ও প্রাণের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জীবনের ভক্তি-অনুশীলনকে ঘনীভূত করা যায়।

মূল পাঠ (উদ্ধৃত)

"এই জগতে যাহা কিছু উপস্থিত সুখ দুঃখকর সকলই ভ্রমাত্মক বুদ্ধির পরিচায়ক। একমাত্র ভগবানই সত্য। যে সকল সঙ্গলাভে সুখ কি দুঃখের উপলব্ধি হয় সে সকলি অস্থায়ী, উদয় হইয়া ক্ষয় হইয়া যায়। অতএব মনের দ্বারা যে সকল শান্তি আহরণ হয় তাহাতে মুগ্ধ হইতে সত্যস্বরূপ ব্রহ্মপদ লাভ করিতে পারে না। মনের যে কোন অবস্থাই হউক না, সকল অবস্থায় সর্ব্বদা ধৈর্য্য ধরিয়া শুদ্ধ প্রাণের সেবা করিয়া গেলে সনাতন নিত্যধর্ম্ম অধিষ্ঠান হইয়া মনকে এবং বুদ্ধিকে কুহকগণ বদ্ধ জ্বালাদি উপসর্গ মুক্ত করিয়া লয়। শ্বাস-প্রশ্বাস বলিতে যে প্রাণ নাকের পথ দিয়া এবং মুখ দিয়া বাহিরে এবং শরীরের ভিতর যায়, তাহাকে শ্বাস-প্রশ্বাস বলে। যেই বায়ু ফেলিয়া দেয় সেই বায়ুকে না টানিয়া, না ফেলিয়া শরীরের মধ্যে যতক্ষণ রাখা যায় ততক্ষণ সময়কে প্রাণের মধ্যাবস্থা বলে, অর্থাৎ ফেলিবেও না, টানিবেও না। এইরূপ স্থির অবস্থাকে যত বেশী সময় রাখা যায় তৎপ্রতি লক্ষ্য রাখিবার নামকে শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যস্থল বলিয়া থাকে। যে শ্বাস-প্রশ্বাস আসে ও যায় তাহাকে আদি-অন্ত জগৎ বলে। এই জগৎ হইতে উদ্ধারের জন্য প্রাণের মধ্য অবস্থাকে সর্ব্বদা যত্ন করিয়া উদ্ধারের জন্য প্রাণের মধ্য অবস্থাকে সর্ব্বদা যত্ন করিয়া রাখিবার চেষ্টা করাকে যজ্ঞ বলে। ইহাতে জগৎ মিত্র হইয়া পরমানন্দ দিবে।"

সূত্র: বেদবাণী, ২য় খন্ড — ১২০
উপসংহারে: জয়রাম জয়গোবিন্দ — গুরু কৃপাহি কেবলম্

মেইন স্ক্রিপ্ট (ভিডিও/অডিও/প্রেজেন্টেশনের জন্য)

নীচের সরল ভাষার স্ক্রিপ্টটি তুমি ইউটিউব ভিডিও বা অডিও ক্লিপের জন্য ব্যবহার করতে পারো — ধীর, সুবক্ত্র কণ্ঠে পড়লে ভক্তি ও শিক্ষার সংমিশ্রণ ভালোভাবে পৌঁছবে।

(শান্ত সুরে, মৃদু ধীরে)
নমস্কার। আজকের বাণী— বলছে, এই জগতে যা কিছু ‘উপস্থিত’ — সুখ হোক বা দুঃখ — সবই ভ্রমাত্মক। একমাত্র যা স্থায়ী, তা হল — ভগবান। 

আমরা যখন কোনো বস্তু বা সম্পর্ক থেকে শান্তি খুঁজি, সেটি অস্থায়ী। উদয় আসে, ক্ষয় ঘটে। তাই মনের ক্ষণিকের শান্তিতে ভান করলে আমরা সত্যস্বরূপ ব্রহ্মপদে পৌঁছতে পারব না। 

তবে, যদি আমরা প্রত্যেক অবস্থাতেই ধৈর্য ধার্য করে ‘শুদ্ধ প্রাণের সেবা’ করি — অর্থাৎ অন্তরের সদিচ্ছা বজায় রেখে নিয়মিত ভক্তি ও পরিশ্রম করি — তাহলে ধীরে ধীরে মনের তলে থাকা মিথ্যা ভাব, জ্বলন্ত কামনা-দেবতা ইত্যাদি মুক্তি পায়। 

শ্বাস-প্রশ্বাসকেও এখানে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে: নাক-মুখ দিয়ে যে বাতাস আসে-যায়, তার মধ্যে একটা স্থির মধ্যাবস্থা আছে — 'ফেলা-ও-টানা নয়' এমন এক নিয়ন্ত্রণ। এই স্থির অবস্থাকে যতই ধরে রাখা যায়, ততই প্রাণ মজবুত হয়। 

এই প্রাণ-অবস্থার যত্ন নেওয়াকে শাস্ত্র 'যজ্ঞ' বলে — যা জগৎকে বন্ধু করে এবং পরমানন্দের দান করে। 

জয়রাম। জয়গোবিন্দ। গুরু কৃপাহি কেবলম্।
      

বিন্দু-ভিত্তিক ব্যাখ্যা (Point-to-Point Explanation)

  1. উপস্থিত সুখ ও দুঃখ ভ্রমাত্মক: বাইরের যেটুকু শান্তি বা দুঃখ তুমি উপলব্ধ করো, তা অস্থায়ী — দিনের মতো উঠবে ও নামবে।
  2. একমাত্র ভগবান সত্য: দুনিয়ার বস্তুগত আনন্দের বাইরে যে স্থির সত্য আছে, সেটাই ভগবান; সেটাই চিরন্তন।
  3. মনের অস্থায়ী শান্তি পর্যাপ্ত নয়: অল্প সময়ের মনের শান্তি দিয়ে নির্বোধভাবে আত্মতুষ্ট হলে আসল মুক্তি (ব্রহ্মপদ) আসে না।
  4. ধৈর্য্য ও শুদ্ধ প্রাণের সেবা: প্রতিটি অবস্থাতেই ধৈর্য ধরে সৎ ও নিষ্কলুষ কর্ম করলে ধীরে ধীরে মনের অস্থিরতা দূর হয়।
  5. শ্বাস-প্রশ্বাস ও প্রাণের মধ্যাবস্থা: শ্বাস-প্রশ্বাস কেবল শারীরিক প্রক্রিয়া নয় — এর মধ্যে একটি 'মধ্যস্থ স্থিরতা' আছ। না টানতে-না ফেলতে পারা অবস্থাই প্রাণের স্থিতি গঠন করে।
  6. যজ্ঞ হিসেবে প্রাণের যত্ন: এই স্থির অবস্থাকোরে ধরে রাখার চর্চাকেই বেদবাণী 'যজ্ঞ' বলেছে — এটি আমাদের জগতের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করে ও পরম আনন্দ দেয়।

শিক্ষামূলক অংশ — অনুশীলন ও প্রয়োগ

নিচে কয়েকটি সহজ অনুশীলন যেগুলো তোমার প্রতিদিনের জীবনে মনের স্থিরতা এবং প্রাণের মধ্যঅবস্থা গঠনে সাহায্য করবে:

  • ১। সচেতন শ্বাস-প্রশ্বাস অনুশীলন (Pranayama-like): ব্রিফ অনুশীলন — ৪ সেকেন্ড ধরে শ্বাস নাও, ৪ সেকেন্ড ধরে রাখ (কষ্ট হলে কমাও), ৪ সেকেন্ডে ছেড়ে দাও। ধীরে ধীরে সময় বাড়াও। লক্ষ্য — না টানা, না পুরো ফেলে দেওয়া, একটি সমতা বজায় রাখা।
  • ২। প্রতিদিন ৫–১০ মিনিট ধ্যান: চোখ বন্ধ করে মনকে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক করো — ইমোশন আসবে যাবে, তবে নিজের শুদ্ধ ইচ্ছাকে বজায় রাখো।
  • ৩। সহিষ্ণু ধৈর্যের অনুশীলন: সমস্যায় পড়লে প্রথমে থামো, একটি গভীর নিশ্বাস নাও, এরপর কণ্ঠস্বর শান্ত রেখে সৎ কাজ করো।
  • ৪। নিয়মিত সেবা ও ভক্তি: দৈনন্দিন কিছু কাজ (পরিবার, সমাজ, ধর্ম) নিষ্কামভাবে করো — এতে মনের অস্থিরতা কমবে।
  • নোট: যদি স্বাস্থ্যের কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন করো, চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

End Script / সমাপনী (ভিডিও ব্লক বা ব্লগের কনক্লুশন)

শ্রোতারা/পাঠকগণ, আজকের বাণী থেকে আমরা শিখলাম — সবই অস্থায়ী, শুধুই ভগবান চিরন্তন। মনের শান্তি টিকাতে হলে বাহ্যিক আস্রয় নয়, অন্তরের স্থিরতা—প্রাণের নিয়ন্ত্রণ—এগুলোর চর্চা জরুরি। প্রতিদিন একটু সময় নিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর সচেতন হও, ধৈর্য্য ধারণ করো, এবং শুদ্ধ প্রাণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করো।

জয়রাম, জয়গোবিন্দ। গুরু কৃপাহি কেবলম্।

আরো বাণী পড়ুন / Subscribe করুন

🔔 যদি তুমি এই লেখাটি পছন্দ করো, তবে ব্লগে শেয়ার করো এবং সাবস্ক্রাইব করতে ভুলিও না — যাতে প্রতিদিনের বাণী ও অনুশাসন তোমার কাছে পৌঁছায়।

© Subrata Majumder — বাংলা রূপকথা ও কাহিনি | AudioKotha

মনের স্থিরতা ও প্রাণের মধ্যঅবস্থা — বেদবাণী ২য় খন্ড/১২০ | বাংলা ব্যাখ্যা মনের স্থিরতা ও প্রাণের মধ্যঅবস্থা — বেদবাণী ২য় খন্ড/১২০ | বাংলা ব্যাখ্যা Reviewed by শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ(SriSriramthakur O gan Ganer vhovon Youtube channel) on November 10, 2025 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.