গুরু ভাই বোনসহ সকল সনাতনী ভাই বোনদের জানাই স্বাগত ,উদ্দেশ্য গুরু দেবের অমৃত বানী সকলের মাঝে প্রচার করা।

ঠাকুরমহাশয়ের ফেনী দর্শন — এক নবীন ছাত্রের অভিজ্ঞতা | শ্রীশ্রী রামঠাকুর লীলা

 

ঠাকুরমহাশয়ের ফেনী দর্শন — এক নবীন ছাত্রের অভিজ্ঞতা | শ্রীশ্রী রামঠাকুর লীলা

ঠাকুরমহাশয়ের ফেনী দর্শন — এক নবীন ছাত্রের অভিজ্ঞতা

প্রকাশিতঃ • লেখক: Subrata Majumder • বিভাগ: ভক্তিলীলার কাহিনী
ঠাকুরমহাশয় ও নবীন ছাত্র — শ্রীশ্রী রামঠাকুরের লীলা

পঁয়ষট্টি থেকে সত্তর বছর আগেকার ঘটনা।
ঠাকুরমহাশয় দীর্ঘদিন বাদে এসেছেন ফেনী শহরে। খবরটি স্বাভাবিকভাবেই জানাজানি হতে লাগল ছোট্ট শহরটিতে। সেই জানার ঢেউ কানে এসে পৌঁছূল জপসা গ্রাম থেকে আসা ফেনী কলেজের এ বছরের ভর্তি হওয়া আই.এ. প্রথম বৎসরের ছাত্রটির কানেও। গ্রাম থেকে যখন শহরের জীবনে আসেন তখন তার ঠাকুরমা ও পিতা-মাতার কথা মনে পড়ছিল, তারা বলেছিলেন ফেনীতে রামঠাকুরমহাশয় মাঝে মাঝে আসেন, খোঁজ খবর রাখিস একবার তাঁর দর্শন পাওয়ার জন্য।

শিশুকাল থেকে ঐ ছাত্রটি শুনে এসেছেন রামঠাকুরের কথা। দু'একবার ঠাকুর জপসা গ্রামেও গিয়েছেন। ঐ গ্রামেই ছিলেন ঠাকুরমহাশয়ের পিতৃদেব রাধামাধব চক্রবর্তী মহাশয়ের ও তাঁহার মাতা-ঠাকুরানীর কুলগুরু। পিতৃবিয়োগের পর ঠাকুরমহাশয় তাঁহার শোকাতুরা মাতা কমলাদেবীকে নিয়ে কয়েক বারই গিয়েছেন জপসায়। তখন ঠাকুরমহাশয়ের বয়স সাত বছরের কাছাকাছি। ঠাকুরমহাশয়ের পিতা-মাতার কুলগুরু আর এই ছাত্রটির সম্পর্ক ওদের বাড়িতে আলোচিত হতো। ছাত্রটির বাড়িতে আলোচনার সময় তার পূর্বপুরুষ সগৌরবে বলতেন, রামঠাকুরের বাবা-মা তাদের দশ-রাত্রির জ্ঞাতি। ঠাকুরমহাশয়ের পিতা-মাতার কুলগুরু এবং তারা জ্যাঠতোতো খুড়তোতো ভাই।

ছাত্রটি রাত্রে অনেকক্ষণ ভাবলেন ঠাকুরমহাশয় সম্পর্কে তাদের বাড়িতেই যা যা আলোচনা হয়েছে সে সব কথা। পরদিন থেকে তিনি তৎপর হয়ে উঠলেন ঠাকুরমহাশয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবার জন্য। অনেককে তিনি অনুরোধ করেছিলেন ঠাকুরমহাশয়ের কাছে যাওয়ার সময় তিনি যেন তাকে একটু দয়া করে নিয়ে যান। কিন্তু তা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি কারণ তারা আপন কর্মস্থল থেকেই সোজা চলে যেতেন ঠাকুরমহাশয়ের কাছে। নবীন যুবকটি একথাও শুনেছেন যে ঠাকুরমহাশয়ের স্থিতি সর্বত্রই প্রায় স্বল্পকালীন। সুতরাং আর অপেক্ষা করা নয়।

পরদিন সকালবেলা ছাত্রটি তার এক সহপাঠীর সঙ্গে গিয়ে ঠাকুরমহাশয়ের আবাসস্থল দেখে এলেন। দুপুর কাটল কলেজে। বিকেলে একলা শুধু সাহসের উপর নির্ভর করে প্রবেশ করলেন সেই বাড়িতে। বাড়ির লোক ঠাকুরমহাশয়ের ঘরখানা দেখিয়ে দিলেন। এবার নবীন যুবকটি দুরু দুরু বক্ষে ঠাকুরমহাশয়ের দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হলেন। দেখলেন, ঘরে দশ-পনেরো জন নর-নারী বসে আছেন আর ঠাকুরমহাশয় বলে যাচ্ছেন সাবিত্রী-সত্যবানের কথা। পরিণত বয়সেরই নর-নারী ওখানে উপস্থিত। সুতরাং তার প্রবেশ করা কী সমীচীন হবে? অথচ মনের দুর্বার আকর্ষণ এবার ঠাকুরমহাশয়ের দর্শন লাভের।

সহসা ঠাকুরমহাশয়ের একটানা কন্ঠস্বর স্তব্ধ হয়ে গেল। বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালেন ঠাকুরমহাশয়। দু'পা এগিয়ে ঠাকুরমহাশয় বললেন, "আপনি খাড়াইয়া আছেন?" আর সঙ্গে সঙ্গেই ঠাকুরমহাশয় তার দুইচরণে প্রণাম করলেন। টলছে যুবকটির সারা দেহ। কন্ঠ, তালু সব শুকিয়ে গেছে। ঠাকুরমহাশয় নবীন যুবকটির দুই কম্পমান হস্ত ধরে নিয়ে এলেন সযত্নে তাঁর শয্যার পাশে। অতি দ্রুতহস্তে ঠাকুরমহাশয় উল্টে দিলেন তাঁর ব্যবহৃত বিছানার চাদরখানা। দু'হাত দিয়ে মার্জনা করলেন তাঁর ব্যবহৃত বিছানা পরিষ্কার করার উদ্দেশ্যে। পরে ঐ যুবকটিকে বসালেন তাঁর নিজ শয্যায়। উপস্থিত নরনারীর চোখমুখে আশ্চর্যের চিহ্ন ফুটে ওঠেছে আর নবীন যুবকটি বিহ্বল, একটি হাড়-মাংসের স্তুপ।

ঠাকুরমহাশয় আবার দ্রুত চলে গেলেন বাড়ির ভিতরে। প্রসাদ না হওয়া এমন কোনও খাদ্যবস্তু যদি ঘরে থাকে তাহলে তা এক্ষুনি যেন কেটে দেন গৃহিণী--কাতর কন্ঠে ঠাকুরমহাশয় বললেন। ভদ্রমহিলাও ফল ধুয়ে, কেটে এবং আজ মধ্যাহ্নে যে নারকেল-ছাপা উনি তৈরী করেছিলেন তা নিয়ে যেতে উদ্যত হলেন। ঠাকুরমহাশয় তখন তাকে বাধা দিয়ে বললেন--না মা, এইখানে আমারেই দিয়া আসতে হইব। ঠাকুরমহাশয় একখানা টুলের উপর রাখলেন ঐ ফল-মিষ্টান্ন নবীন যুবকটির সামনে। পরে এক গ্লাস জলও এনে রাখলেন ঐ টুলেরই এক পাশে। করজোড়ে ঐ নবীন যুবকটিকে বললেন, আপনি দয়া কইরা একটু খান। যন্ত্রচালিতের মত যুবকটি খেয়ে গেলেন।

হাত বাড়িয়ে ঠাকুরমহাশয় কাঙালের মত বললেন, "আমার তো কিছুই নাই।আপনেরা যদি কেউ পারেন আমারে দুই একটা টাকা দিবেন?" সঙ্গে সঙ্গে দু'একজন ঠাকুরের হাতে টাকা তুলে দিলেন। ঠাকুর আনত শিরে যুবকটির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যেই তার জলযোগ সমাপ্ত হলো সঙ্গে সঙ্গেই ঠাকুরমহাশয় সংগৃহীত অর্থ তার হাতে দুইচরণে রেখে দুইচরণে প্রণাম করলেন। উপস্থিত নরনারী শুনছেন শুধু আপন নিঃশ্বাস। এবার ঠাকুরমহাশয় একজনকে বললেন, "আপনি একটু চেষ্টা কইরা দেখেন, একখানা ঘোড়ার গাড়ী পান কিনা। পাইলে নিয়া আসেন।"

ভাগ্যক্রমে গাড়ি দরজায় এসে গেল। ঠাকুরমহাশয় এতক্ষণ দাঁড়িয়েই ছিলেন নির্বাক যুবকটির পাশেই, করজোড়ে বললেন, "আমারে দিয়া আপনের যদি কোন কাম হয় তবে আপনি কষ্ট কইরা আসবেন না। প্রমথনাথ (অধ্যাপক প্রমথনাথ চক্রবর্তী), আপনি যেই কলেজে পড়েন, সেই কলেজেই তো পড়ান, তারে একটু বইলা দিবেন আমি আপনের লগে গিয়া দেখা করুম আর আপনের কাজ সাধ্যমতন করতে পারলে আমি বড়ই উপকৃত হইতাম।"

এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে একটি কথা বলারও মত তার শক্তি ছিল না। যেমন নির্বাক হয়ে তিনি এই ঘরে প্রবেশ করেছিলেন তেমনই নীরবে ঠাকুরমহাশয়ের হাত ধরে নিজের একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও এবার গাড়িতে উঠে বসলেন ঠাকুরমহাশয়ের কথা মত। আবার ঠাকুরমহাশয় ভিক্ষার জন্য হাত বাড়ালেন। একজন একটা টাকা দিলেন। ঠাকুরমহাশয় নিজ হস্তে কোচওয়ানকে তা দিয়ে বললেন, "ফেরৎ পয়সা আর আমারে দিতে হইবে না। বাকি পয়সায় আপনি কিছু কিন্যা খাইয়েন।"

জয় রাম। জয় গোবিন্দ।

ঠাকুরমহাশয়ের ফেনী দর্শন — এক নবীন ছাত্রের অভিজ্ঞতা | শ্রীশ্রী রামঠাকুর লীলা ঠাকুরমহাশয়ের ফেনী দর্শন — এক নবীন ছাত্রের অভিজ্ঞতা | শ্রীশ্রী রামঠাকুর লীলা Reviewed by শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ(SriSriramthakur O gan Ganer vhovon Youtube channel) on November 15, 2025 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.