ঠাকুর ঐ ভদ্রলোকের দিকে এক দৃষ্টে চাহিয়াছিলেন, হঠাৎ তিনি ভেউ ভেউ করিয়া কাঁদিয়া উঠিলেন এবং এই কান্না কিছুক্ষণ ধরিয়া চলিল।
ঠাকুর ঐ ভদ্রলোকের দিকে এক দৃষ্টে চাহিয়াছিলেন, হঠাৎ তিনি ভেউ ভেউ করিয়া কাঁদিয়া উঠিলেন এবং এই কান্না কিছুক্ষণ ধরিয়া চলিল।
মতিবাবু তখন বৌবাজারে গিনি হাউসের নিকটে একটি গলিতে থাকতেন। ভদ্রলোক পশ্চিমাঞ্চলে সেচ বিভাগে চাকুরী করিতেন। ৩ বৎসর পূর্ব্বে অসময়ে চাকুরী হইতে অবসর গ্রহণ করিয়াছেন। ভদ্রলোকের দুইটি কন্যা, বিবাহ হইয়া গিয়াছে। স্ত্রীও ৫ বৎসর পূর্ব্বে গত হইয়াছেন, সুতরাং এখন তাহার ঝাড়া হাত-পা। প্রায় দু’শ টাকা পেন্সন পান এবং এখানে সেখানে ঘুরিয়া বেড়ান। তাহার পরিচয় জিজ্ঞাসা করিতে তিনি বলিলেল, “সে পরে হবে এখন, আগে আমার একটা কথা শুনুন।
এই দুনিয়াটা কি ক’রে ভাল করা যায় বলতে পারেন?” আমি কোন উত্তর না দিয়া একটু নিবিষ্টভাবে ভদ্রলোকের দিকে তাকাইলাম। আমি একদৃষ্টে তাহার দিকে তাকাইয়া আছি দেখিয়া ভদ্রলোক বলিলেন, “হয়েছে তো, এইবার আমার প্রশ্নে জবাব দিন।”
আমি একটু লজ্জিত হইলাম এবং বিনীতভাবে বলিলাম, “ঠাকুরের কাছে আসিয়াছেন, তাঁহাকেই জিজ্ঞাসা করিবেন, আমি আর কি জবাব দিব।” উত্তরে তিনি আমাকে জানাইলেন যে গত রাত্রে ঠাকুরের সঙ্গে তাহার সাক্ষাৎ হইয়াছিল এবং তাঁহাকেও তিনি এই প্রশ্ন করিয়াছিলেন। কিন্তু ঠাকুর তাহার কথার জবাব না দিয়া উল্টা তাহাকে প্রশ্ন করিয়াছেন, “দুনিয়াটা ভাল করার আপনার কি প্রয়োজন?”
ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপচারিতার মধ্যে হঠাৎ দেখি যে ছোট একটা মাটির খোরা হাতে লইয়া ঠাকুর নিজেই নীচে নামিয়া আসিয়াছেন। আমরা সস্ত্রস্ত হইয়া উঠিয়া দাঁড়াইলাম এবং পরে ঠাকুরকে প্রণাম করিলাম। খোরাটি আমার হাতে দিয়া ঠাকুর তক্তাপোশের এক পার্শ্বে উপবেশন করিলেন। খোরার ভিতরে চারটি রসগোল্লা ছিল, আমরা দুইজনে তাহা প্রসাদ পাইলাম এবং উঠানের কলে হাত মুখ ধুইয়া আসিয়া ঠাকুরের নির্দ্দেশানুসারে তক্তাপোশের উপরে তাঁহার সম্মুখে বসিলাম। ইহার পর যে দৃশ্যের অবতারণা হইল তাহা যেমন আকষ্মিক, তেমনিই অভাবনীয়। ঠাকুর ঐ ভদ্রলোকের দিকে এক দৃষ্টে চাহিয়াছিলেন, হঠাৎ তিনি ভেউ ভেউ করিয়া কাঁদিয়া উঠিলেন এবং এই কান্না কিছুক্ষণ ধরিয়া চলিল।
ভদ্রলোক কি যেন একটা বলিতে চেষ্টা করেন কিন্তু কথা বাহির হয় না, কেবল কাঁদিতেই থাকেন। এইরূপ প্রায় ১০ মিনিট চলিবার পর ভদ্রলোক ক্রমে ক্রমে প্রকৃতিস্থ হইলেন এবং কিছুক্ষণ ঠাকুরের পায়ে মাথা রাখিয়া পড়িয়া রহিলেন। ঠিক এই সময় মতিবাবু বাজার লইয়া ফিরিয়া আসিলেন। ঠাকুর উঠিলেন এবং আমিও তাঁহার সহিত উপরে যাইবার জন্য প্রস্তুত হইলাম, কিন্তু দেখিলাম যে ঐ ভদ্রলোক বাহির হইয়া যাইতেছেন।
তাহার আচরণে আমার এমন একটা কৌতূহলের উদ্রেক হইয়াছিল যে এত সহজে তাহাকে ছাড়িয়া দিতে ইচ্ছা হইল না। আমি ঠাকুরকে প্রণাম করিয়া রাস্তায় আসিয়া ভদ্রলোককে ধরিলাম এবং অনেক পীড়াপীড়ি করিয়া তাহাকে আমার মেসে লইয়া আসিলাম। জামা কাপড় ছাড়িয়া, হাত মুখ ধুইয়া একটু সুস্থ হইয়া বসিয়াই আমি ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করিলাম যে তিনি ঠাকুরের সম্মুখে হঠাৎ এমন হাউ হাউ করিয়া কাঁদিয়া উঠিয়াছিলেন কেন। তিনি নীরবেই রহিলেন এবং একাধিকবার কথাটা জিজ্ঞাসা করা সত্ত্বেও কিছুই বলিতে চাহিলেন না।
কিন্তু আমিও নাছোড়বান্দা, অত্যন্ত পীড়াপীড়ি শুরু করিয়া দিলাম।
অবশেষে তিনি বলিলেন,“কথাটা বলিবার ইচ্ছা আমার আদৌ ছিল না, কিন্তু আপনি যখন কিছুতেই ছাড়িবেন না, তখন না বলিয়াই বা করি কি। মতিবাবুর বাড়ীতে সেই তক্তাপোশের উপর বসিয়া আমার মনে হইল যেন বহুদিনের এক বিস্মৃতির আবরণ ধীরে ধীরে সরিয়া গেল, দেখিলাম যে যিনি সম্মূখে বসিয়া রহিয়াছেন তিনি যেন আমার চিরপরিচিত নিতান্ত আপনার জন।” কথা কয়টি বলিয়াই তিনি আরার কাঁদিতে শুরু করিলেন।
জীবনে আর তাহার সহিত সাক্ষাৎ হয় নাই। শুধু একবার ৪/৫ ঘন্টার জন্য এই ভদ্রলোকের সঙ্গ পাইয়াছিলাম, তাহার নামটাও জানিয়া রখি নাই, কিন্তু তথাপি তিনি আমার মনে বরাবরই একটা বিশিষ্ট স্থান অধিকরার করিয়া রহিয়াছে। তিনি যে অভাবনীয় রকমে ঠাকুরের কৃপালাভ করিয়াছিলেন তাহা আমি আজও ভুলিতে পারি নাই।
জয় শ্রীশ্রী রামঠাকুর।
সূত্র- রাম ঠাকুরের কথা। লেখক-শ্রী ইন্দুভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
ঠাকুর ঐ ভদ্রলোকের দিকে এক দৃষ্টে চাহিয়াছিলেন, হঠাৎ তিনি ভেউ ভেউ করিয়া কাঁদিয়া উঠিলেন এবং এই কান্না কিছুক্ষণ ধরিয়া চলিল।
Reviewed by শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ(SriSriramthakur O gan Ganer vhovon Youtube channel)
on
April 07, 2024
Rating:
Reviewed by শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ(SriSriramthakur O gan Ganer vhovon Youtube channel)
on
April 07, 2024
Rating:
.jpg)
.jpg)
.png)
.png)
.png)
.png)
.png)





.jpg)
No comments: