পরম প্রেমময় শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর এর
লীলা অমৃত
"ভাগ্যই বলবান"
ভুবনমোহন মুখোপাধ্যায়ের আইন পরীক্ষা
স্বর্গীয় ভুবনমোহন মুখোপাধ্যায় চট্টগ্রামে কৈবল্যধাম প্রতিষ্ঠার কিছুপর থেকে ওই ধামে বহু বৎসর ছিলেন। যাদবপুরে কৈবল্যধাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কিছু পরে তিনি সেখানে আসেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ঐ ধামেই কাটিয়ে গেছেন।
যে সময়ের কথা সে সময়ে ভুবনবাবু আসন্ন আইন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। সারাটা দিন তিনি পড়াশুনা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। বেশী রাত অবধি জেগেও পাঠাভ্যাস করতেন।
ভুবনবাবুদের বাড়ীতে সে সময় ঠাকুর মহাশয় কদিন ধরে আছেন। এত রাত অবধি জাগরণে থাকলে শরীরের পক্ষে হানিকর হবে,
এজন্য একদিন ঠাকুর মহাশয় ভুবনবাবুকে অত রাত অবধি পড়াশুনা করতে নিষেধ করলেন।
ভুবনবাবু জানালেন বেশী পড়াশুনা না করতে পারলে পরীক্ষায় ভাল ফল হবে না। ভুবনবাবুর কাছে একটি পেনসিল চেয়ে নিলেন ঠাকুর মহাশয়। আইনের মোটা মোটা অনেকগুলি বই টেনে নিয়ে কিছুক্ষণ ধরে তিনি দাগ দিয়ে পরে ভুবনবাবুকে বললেন,
"এই দাগান অংশগুলিই পরীক্ষায় জিজ্ঞাসা করবে। এইগুলি পড়লেই যথেষ্ট এবং পাসও নিশ্চিত।"
ঠাকুরমহাশয় লেখাপড়ার ধার ধারেননি কোনদিন।
সুতরাং আইন পরীক্ষার জন্য তাঁহার দাগান অংশগুলি পড়ে গিয়েই পরীক্ষার হলে তো বসা যায় না।
অন্যায় হলেও তাঁহার এই কথায় বিশ্বাস স্থাপন করতে অসমর্থ হয়েছিলেন ভুবনবাবু,
তাই তিনি নির্ভর করতে পারেননি। নিজের অভিরুচী অনুযায়ী পূর্বের মত তিনি পূর্ণোদ্যমে পাঠাভ্যাসে নিমগ্ন রইলেন।
পরের দিন ঠাকুর মহাশয় অন্যত্র চলে গেলেন।
কয়েকদিন পরে ভুবনবাবুর পরীক্ষা আরম্ভ হোল।
প্রথম দিনের প্রশ্ন দেখে পরীক্ষার হলেই ভুবনবাবুর মনে হোল এর উত্তরগুলি তো ঠাকুরমহাশয় দাগ দিয়ে রেখেছিলেন।
কিন্তু ভাল করে সেই অংশগুলি পড়া না থাকায় উত্তর দাগ দেওয়া তার মনোমত হোল না। পরীক্ষা শেষে বাড়ী ফিরে বই খুলে প্রশ্নপত্রের সঙ্গে ঠাকুর মহাশয়ের দাগান অংশগুলি মিলিয়ে দেখলেন-
সবগুলি প্রশ্নই ঠাকুর মহাশয়ে দাগান অংশ থেকেই এসেছে। মনস্তাপ হোল ভুবনবাবুর। পরক্ষণেই আবার মনে হোল আজকের প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে যে দাগ দেওয়া অংশগুলি মিলন সেটা হয়তো কাকতালীয়।
পরের দিনের প্রশ্ন যে এই দাগান অংশ থেকেই আসবে তার নিশ্চয়তা কী?
সুতরাং ছাত্রমহলে প্রচলিত সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তরের উপরই জোর দিয়ে ভুবনবাবু পড়াশুনা করলেন। পরে ভুবনবাবু মিলিয়ে দেখেছেন বাকি ক'দিনের পরীক্ষার প্রশ্নও ঠাকুর মহাশয়ের দাগ দেওয়া অংশ থেকেই এসেছে। দাগ দেওয়া অংশের বাইরে একটি প্রশ্নও আসেনি।
নিজের হঠকারিতায় ভুবনবাবু মনস্তাপ ভোগ করেছিলেন। পরীক্ষায় পাশ হওয়ার আশা ভুবনবাবুর আছে। ঠাকুর মহাশয়ের কথার ওপর নির্ভর করে যদি ঐ অংশগুলি ভাল করে পড়তেন তাহলে পরীক্ষার ফল নিশ্চিত ভাল হোত।
এই ঘটনার কয়েক মাস পরে অন্য একস্থানে ভুবনবাবু ঠাকুর মহাশয়ের সাক্ষাৎলাভ করেন। ভুবনবাবু কেমন পরীক্ষা দিয়েছেন ঠাকুর মহাশয়ের এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন, পরীক্ষা মোটামুটি হয়েছে। ঠাকুর মহাশয়ের দাগ দেওয়া অংশ থেকেই সব প্রশ্ন এসেছিল, কিন্তু ঐ অংশগুলি তিনি তেমন ভাল করে পড়েননি। তাঁহার বাছা অংশ পড়া থাকলে পরীক্ষার ফল আরও অনেক ভাল হোত।
বড় ভুল করেছেন তিনি তাঁহার দাগ দেওয়া অংশগুলি যত্ন করে না পড়ে গিয়ে।
ক্ষণকাল নীরব থেকে ঠাকুর মহাশয় বললেন,
"ভাগ্যই বলবান,
ভাগ্যে না থাকলে বাইট্যা দিলেও খাইতে পারে না।
তুমি কোন ভুল কর নাই।
বুদ্ধি সর্বদা কর্মেরই অনুসরণ করে।"
জয় রাম জয় রাম জয় রাম





.jpg)
No comments: