🌸 শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ পূজোপাঠ 🌸 (শ্রীশ্রী রামঠাকুরের দর্শনে ব্যাখ্যাসহ) 🕉️ প্রারম্ভিক প্রণাম “ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়” 👉 হে পরমাত্মা, হে বিশ্বরূপ ভগবান, আপনাকে আমি ভক্তিভরে প্রণাম জানাই। 🌿 নিবেদন শ্লোক যন্ময়া ভক্তিযোগেন পত্রং, পুষ্পং, ফলং জলম্। নিবেদিতঞ্চ নৈবেদ্যং তদ্ গৃহাণানুকম্পয়া।। 📖 বাংলা অনুবাদ : “ভক্তির সঙ্গে আমি পাতা, ফুল, ফল ও জল আপনাকে নিবেদন করছি। হে ভগবান, করুণাবশে তা গ্রহণ করুন।” ✨ ব্যাখ্যা (শ্রীশ্রী রামঠাকুরের দর্শন) : ঠাকুর বলেছেন— ‘সামান্য নিবেদনও আন্তরিক হলে তা অসীম মূল্যের হয়।’ ভগবান জিনিস নয়, ভক্তির অন্তর স্পর্শ খোঁজেন। 🙏 সমর্পণ মন্ত্র ত্বদীয়ং বস্তু গোবিন্দ তুভ্যমেব সমর্পয়ে। গৃহাণ সুমুখো ভুত্বা প্রসাদ পুরুষোত্তম।। 📖 বাংলা অনুবাদ : “হে গোবিন্দ, এই বস্তু আসলে তোমারই। আমি তোমাকেই সমর্পণ করছি। প্রসন্ন মনে তা গ্রহণ করো।” ✨ ব্যাখ্যা : সবই ভগবানের দান— দেহ, মন, ধন, জীবন। তাই ভক্ত বলে, “তুমি যা দিলে, আমি তা-ই তোমায় ফিরিয়ে দিচ্ছি।” 🕉️ অক্ষমতা নিবেদন মন্ত্রহীনং ক্রিয়াহীনং ভক্তিহীনং জনার্দ্দন। যৎ পূজিতং ময়া দেব পরিপূর্ণং তদস্তুমে।। 📖 বাংলা অনুবাদ : “হে জনার্দন, আমার পূজায় হয়তো সঠিক মন্ত্র নেই, শুদ্ধ ক্রিয়া নেই, ভক্তিও কম। তবুও তুমি তা পূর্ণ করো।” ✨ ব্যাখ্যা : শ্রীশ্রী রামঠাকুর বারবার বলেছেন— “ভক্তির আসল রূপ অন্তরের ডাক। মন্ত্র-ক্রিয়া শুদ্ধ না হলেও আন্তরিকতা থাকলে ভগবান খুশি হন।” 🌺 ভগবানের বহুরূপ বন্দনা অমোঘং পুন্ডরীকাক্ষং নৃসিংহং দৈত্যসূদনম্। হৃষীকেশং জগন্নাথং, বাগীশং বরদায়কম্।। সগুণঞ্চ গুণাতীতং, গোবিন্দং গরুড়ধ্বজম্। জনার্দ্দনং জনানন্দং জানকীবল্লভং হরিম্।। 📖 বাংলা অনুবাদ : “পদ্মলোচন, নৃসিংহ, দৈত্যদমন, হৃষীকেশ, জগন্নাথ, বরদাতা, সগুণ ও নির্গুণ, গোবিন্দ, জনার্দন, জনানন্দ, সীতা-বল্লভ— এই সকল রূপের ভগবানকে আমি বন্দনা করি।” ✨ ব্যাখ্যা : ঠাকুর বলেছেন— “ভগবান এক, রূপ-নামে নানা।” যে-নামেই ডাকো, সাড়া দেন তিনিই। 🌸 প্রণাম ও প্রার্থনা প্রণমামি সদা ভক্ত্যা নারায়ণমতঃপরম্। দুর্গমে বিষমে ঘোরে, শত্রুণা পরিপীড়িতে।। নিস্তারয়তু সর্ব্বেষু তথানিষ্ট ভয়েষু চ।। 📖 বাংলা অনুবাদ : “আমি সর্বদা ভক্তিভরে নারায়ণকে প্রণাম করি। জীবনের দুঃখ-সঙ্কটে, শত্রুর দমনকালে, ভয় ও বিপদে তিনি যেন উদ্ধার করেন।” ✨ ব্যাখ্যা : শ্রীশ্রী রামঠাকুর বলেছেন— “ভক্ত ভগবানকে অন্তরে অনুভব করলে ভয় দূর হয়, শান্তি আসে।” 🌼 ফলপ্রাপ্তি মন্ত্র নামান্যেতানি সংকীর্ত্ত্য ঈপ্সিতং ফলমাপ্নুয়াৎ।। 📖 বাংলা অনুবাদ : “ভগবানের নাম জপ করলে মনোকামনা পূর্ণ হয়।” ✨ ব্যাখ্যা : ঠাকুরের বাণী— “নামের মধ্যেই ভগবান বিরাজমান। নাম জপে জীবের সকল মঙ্গল হয়।” 🌿 সত্যনারায়ণ স্তব সত্যনারায়ণং দেবং বন্দেহহং কামদং প্রভুম্। লীলয়া বিততং বিশ্বং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।। 📖 বাংলা অনুবাদ : “আমি সত্যনারায়ণ দেবকে বন্দনা করি, যিনি ভক্তদের ইচ্ছা পূর্ণ করেন এবং লীলার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত। তাঁকেই গুরু বলে প্রণাম।” ✨ ব্যাখ্যা : ঠাকুরের দৃষ্টি— “সত্যই ভগবান। সত্যনারায়ণ মানে সেই আত্মা যিনি বিশ্বকে ধারণ করেছেন।” 🌸 সমাপন প্রণাম ওঁ নমস্তে বিশ্বরূপায়, শঙ্খচক্র ধরায় চ। পদ্মনাভায় দেবায়, হৃষীক-পতয়ে নমঃ।। নমোহনন্ত স্বরূপায়, ত্রিগুণাত্ম বিভাসিনে। এষ পুষ্পাঞ্জলিঃ ওঁ সত্যনারায়ণ নমঃ।। 📖 বাংলা অনুবাদ : “বিশ্বরূপধারী, শঙ্খচক্রধারী, পদ্মনাভ, হৃষীকেশ, অনন্তস্বরূপ, ত্রিগুণময় ভগবানকে প্রণাম। এই পুষ্পাঞ্জলি তাঁকেই নিবেদন।” ✨ ব্যাখ্যা : ঠাকুর বলেছেন— “ভগবান বিশ্বরূপ। তাঁকে পুষ্প নিবেদন মানে হৃদয়ের ফুল নিবেদন।” 🌹 উপসংহার এইভাবে শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ পূজোপাঠে বোঝা যায়— ভক্তি আসল, বাহ্য উপকরণ গৌণ। ভগবান সকল রূপে, সকল নামে এক। সত্যনারায়ণ মানে সেই পরম সত্য, যিনি বিশ্বে লীলা করছেন। শ্রীশ্রী রামঠাকুরের বাণীর সঙ্গে এই স্তোত্রের সার একেবারে মিলে যায়।
শ্রীশ্রী সত্যনারায়ণ — পূজোপাঠ
(শ্লোক, বাংলা অনুবাদ ও শ্রীশ্রী রামঠাকুরের দর্শনে ব্যাখ্যা — প্রিন্ট-ফ্রেন্ডলি)
🌿 নিবেদন শ্লোক
যন্ময়া ভক্তিযোগেন পত্রং, পুষ্পং, ফলং জলম্। নিবেদিতঞ্চ নৈবেদ্যং তদ্ গৃহাণানুকম্পয়া।।
ব্যাখ্যা (শ্রীশ্রী রামঠাকুরের দর্শনে)
শ্রীশ্রী রামঠাকুর বারবার বলেছেন— আন্তরিক ভক্তিই প্রকৃত নিবেদন; বাহ্যিক উপকরণ ক্ষুদ্র হলেও তা যখন হৃদয় থেকে আসে, তখন তা পরমতের কাছে প্রিয় হয়।
🙏 সমর্পণ মন্ত্র
ত্বদীয়ং বস্তু গোবিন্দ তুভ্যমেব সমর্পয়ে। গৃহাণ সুমুখো ভুত্বা প্রসাদ পুরুষোত্তম।।
ব্যাখ্যা
এই মন্ত্রে আত্ম-নিবেদন ও সমর্পণের ভাব রয়েছে— যে কোনো বস্তুই ভগবানের দান, তাই তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভক্তির ঝুলিতে। ঠাকুর বলতেন— সবই ভগবানের যৌগিক প্রদত্ত।
অক্ষমতা নিবেদন
মন্ত্রহীনং ক্রিয়াহীনং ভক্তিহীনং জনার্দ্দন। যৎ পূজিতং ময়া দেব পরিপূর্ণং তদস্তুমে।।
ব্যাখ্যা
শ্রীশ্রী রামঠাকুরের যোগ-দর্শনে অগণিত মানুষই ধর্মকর্মে অসম্পূর্ণ; তবু ভগবান অন্তরের আন্তরিকতাকে দেখে। তিনি পুণ্যকে বড় করেন যখন সেটা নিষ্কলঙ্ক ভক্তি থেকে আসে।
ভগবানের বহুরূপ বন্দনা
অমোঘং পুন্ডরীকাক্ষং নৃসিংহং দৈত্যসূদনম্। হৃষীকেশং জগন্নাথং, বাগীশং বরদায়কম্। সগুণঞ্চ গুণাতীতং, গোবিন্দং গরুড়ধ্বজম্। জনার্দ্দনং জনানন্দং জানকীবল্লভং হরিম্।।
ব্যাখ্যা
শ্রীশ্রী রামঠাকুর বলেন— ভগবানকে নানা নামে ডাকো, তিনিই প্রত্যুত্তর দেন। সাগুণ-নির্গুণ—সবই এক অভিন্ন বাস্তবতার প্রকাশ।
প্রণাম ও প্রার্থনা
প্রণমামি সদা ভক্ত্যা নারায়ণমতঃপরম্। দুর্গমে বিষমে ঘোরে, শত্রুণা পরিপীড়িতে।। নিস্তারয়তু সর্ব্বেষু তথানিষ্ট ভয়েষু চ।
ব্যাখ্যা
ঠাকুরের ভাষায়— ভগবানের অন্তর্দর্শন পেলেই ভয় ও দুঃখ হ্রাস পায়। ভক্তি মুক্তি ও নিরাপত্তার পথ।
নামজপ ও ফলপ্রাপ্তি
নামান্যেতানি সংকীর্ত্ত্য ঈপ্সিতং ফলমাপ্নুয়াৎ।।
ব্যাখ্যা
শ্রীশ্রী রামঠাকুরের বাণী: নামের মধ্যে ভগবান বিরাজমান—নামজপ করলে অন্তর পরিশুদ্ধ হয় এবং জীবনের মঙ্গল হয়।
সত্যনারায়ণ স্তব
সত্যনারায়ণং দেবং বন্দেহহং কামদং প্রভুম্। লীলয়া বিততং বিশ্বং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।
ব্যাখ্যা
রামঠাকুরের দৃষ্টিতে 'সত্য' শব্দটি পরম আত্মার পরিচয়— সেইকে আরাধ্য করলে জীব মুক্তি ও সত্য-জ্ঞান অর্জন করে।
সমাপন প্রণাম
ওঁ নমস্তে বিশ্বরূপায় ,শঙ্খচক্র ধরায় চ। পদ্মনাভায় দেবায় ,হৃষীক-পতয়ে নমঃ।। নমোহনন্ত স্বরূপায়, ত্রিগুণাত্ম বিভাসিনে এষ পুষ্পাঞ্জলিঃ ওঁ সত্যনারায়ণ নমঃ।।
ব্যাখ্যা
পুষ্পাঞ্জলি মানে কেবল বাহ্যিক ফুল নয়—হৃদয়ের ফুল; রামঠাকুরের ভাষায় এই অন্তরসিক্ত নিবেদনই প্রকৃত পূজা।

No comments: