নাম করার রহস্য — শ্রীশ্রীঠাকুরের নির্দেশ: “মনের দিকে নয়, নামের দিকে লক্ষ্য রাখো”
অনেকেই বলেন—নাম করতে বসলে মন নানা স্থানে ঘুরে বেড়ায়, একাগ্র হয় না। তখন প্রশ্ন জাগে—“তবে কি নাম দিলেন?” এই প্রশ্নের জবাবে শ্রীশ্রীঠাকুর যে অমূল্য উপদেশ দিয়েছেন, সেটিই এই নিবন্ধের মর্ম।
ঠাকুরের বাণী: পূর্বজন্মের সাধিত নাম
“তোমার পূর্বজন্মের সাধিত নাম শুনাইছি, নাম দেই নাই। মাতৃজঠরেও নাম শুনাইছিলাম। প্রকৃতির রাজ্যে আইস্যা ভুইলা গেছ। পুনরায় নাম স্মরণ করাইয়া দিছি। নাম করে শিবরুপী প্রাণে। নাম আবরনহীন। তাই মনের সংকল্প-বিকল্পের অপেক্ষা রাখে না, অবিরাম নাম হয়।”
মন নয়, নাম—লক্ষ্যের কেন্দ্র
“মন যেইখানে ইচ্ছা ঘুইরা বেড়াক। তুমি নাম শুনার জন্য চেষ্টা করবা। মনের দিকে লক্ষ্য রাখবা না, লক্ষ্য রাখবা নামের দিকে।”
মন স্বভাবতই চঞ্চল। তাকে জোর করে টেনে ধরার থেকে নামের ধ্বনির প্রতি শ্রবণকে অভ্যাসে পরিণত করাই শ্রেয়। অভ্যাসই একসময় মনকে সুকোমলভাবে নামের স্রোতে ফেরায়।
চিরচঞ্চল মনের স্বাভাবিক প্রত্যাবর্তন
“মনের গতি চিরচঞ্চল… যত চঞ্চল হউক, আর যেইখানে যাউক না কেন, ফিরা আবার নিজের জায়গায় আসবো… তুমি যেই নাম শুনছ, মনও সেই নাম শুনতে পাইব।”
নদীর জল যেমন অনেক বাঁক নিয়েও সাগরেই মেশে, তেমনি মনও বারংবার নামের আশ্রয়ে ফিরে আসে—যদি আমরা কেবল শ্রবণকে ধারাবাহিক রাখি।
করণীয়: নাম-শ্রবণের অভ্যাস
- ১ নীরবে, শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে নাম শ্রবণ করুন—বলবার চেয়ে শুনুন।
- ২ লক্ষ্য রাখুন কেবল নামের উপর; মনের ওঠানামাকে মন্তব্য করবেন না।
- ৩ সংক্ষিপ্ত, কিন্তু নিয়মিত সময়—সকাল/রাত ৫–১০ মিনিট থেকে শুরু।
- ৪ চলতে ফিরতে, কাজের ফাঁকে নামের অনুরণনটি কানে-কাছে রাখুন।
আধুনিক জীবনে প্রয়োগ
চাপ, উদ্বেগ ও ডিজিটাল বিচ্ছুরণের যুগে নাম-শ্রবণ মনকে শীতল করে। এটি কেবল আধ্যাত্মিক সাধনাই নয়, বরং এক ধরনের স্নায়বিক-মনস্তাত্ত্বিক পুনঃসংযোজন—যা মনোযোগকে কেন্দ্রে ফিরিয়ে আনে।
উপসংহার
মনকে থামাতে যাবেন না—নামের দিকে ধারা রেখে দিন। কিছুদিনের মধ্যেই মন নিজে থেকেই নামের কাছে ফিরে আসবে।
জয় রাম। জয় গোবিন্দ।

No comments: