শ্রীশ্রীরামঠাকুরের লীলা প্রসঙ্গে – ভক্তাধীনে ভগবান
একদিন জনৈক ভক্ত চারটি কমলা লেবু আন্তরিক আকাঙ্ক্ষায় শ্রীশ্রীরামঠাকুরের ভোগে নিবেদন করতে নিয়ে আসেন। নরেনদা বিনয়ের সাথে বললেন— “ভাণ্ডারে বহু লেবু আছে; ঠাকুরের নামে যখন আনিয়াছেন, দর্শনেই ভোগ হইয়া গিয়াছে। আপনি লেবু নিয়া প্রসাদ করুন।” কিন্তু ভক্তের মন তাতে সন্তুষ্ট হলো না। তিনি লেবুগুলি দ্বারিকানাথ-এর নিকট রেখে বললেন— “সুযোগমতো ঠাকুরের ভোগে দেবেন।”
পরদিন রাত্রি প্রায় ন’টা-দশটার সময় শ্রীশ্রীরামঠাকুর হঠাৎ বললেন— “এখন কমলা পাইলে খাওয়া যাইত।” তখন দ্বারিকানাথ নিজ হেপাজতে রাখা চারটি কমলা উপস্থিত করলেন। ঠাকুর তা তৃপ্তির সঙ্গে গ্রহণ করে বললেন— “অতি সুমিষ্ট লেবু।”
মূল শিক্ষা: ভগবান ভক্তের হৃদয়ের ভোগ গ্রহণ করেন—এই কারণেই বলে, “ভক্তাধীনে ভগবান।” বিদূরের ক্ষুদ-কুড়া কিংবা তাঁর স্ত্রীর কদলীর খোসাও ভগবান উপেক্ষা করেননি।
অন্তর্যামী ভগবান: তামাক প্রসঙ্গ
চৌমুহনীর নরেনদা ও উপেনদা তামাক সেবন করতেন; তবে শ্রীশ্রীরামঠাকুরের সম্মুখে তার চিহ্ন রাখতে চাইতেন না। একদিন রাত্রি-বেলা, নরেনদা ঠাকুরের চরণ সেবা করছেন, উপেনদা মাথায় বাতাস দিচ্ছেন—তখন ঠাকুর অকস্মাৎ বললেন, “বাগানে তো সব শস্যই করিয়াছেন, তামাক গাছটিই বাকী!” পরদিন বাগান দেখে আসার পর নরেনদা তামাকের সরঞ্জাম সরিয়ে নিলেন।
ভক্তের প্রশ্নে নরেনদার জবাব— “গোপনে খেয়েও দেখেছি; তিনি তো সর্বত্রই—জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে—বিদ্যমান। গোপন করে লাভ কি?”
Why it matters (আজকের পাঠকের জন্য)
১) আন্তরিকতা > আনুষ্ঠানিকতা
ভোগের বিধি নয়, ভক্তের ভাবই মুখ্য—intention is the offering.
২) উপস্থিতি-চেতনা
ভগবান সর্বব্যাপী জ্ঞান—দৈনন্দিন আচরণেও সততার অনুশাসন।
৩) সাধনার সরলতা
সারল্য, নম্রতা ও কৃতজ্ঞতাই ভক্তির কেন্দ্রবিন্দু।
FAQs
‘ভক্তাধীনে ভগবান’ বলতে কী বোঝায়?
ভক্তের নিবেদন যদি হৃদয় থেকে আসে, ভগবান তা-ই গ্রহণ করেন—বহিরঙ্গ নিয়ম তার অনুষঙ্গ মাত্র।
এই লীলার আলোকে আমার কী অনুশীলন হতে পারে?
প্রতিদিন ছোট একটি কাজ বেছে নিন—কৃতজ্ঞতা জার্নাল, ৫ মিনিট নামস্মরণ, বা নীরব সৎসঙ্গ—এবং সেটিকে হৃদয়-ভোগ করে তুলুন।

No comments: