রামঠাকুরের কৃপা: স্বপ্নদর্শনের অলৌকিক পূর্বাভাস ও বিবাহ
মনোরঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণে উঠে আসে এক আশ্চর্য কাহিনি—বিবাহের কয়েক দিন আগে শাশুড়ীমাতার স্বপ্ন, সেই স্বপ্নের অলৌকিক সত্যতা, এবং পরবর্তীতে শ্রীশ্রী রামঠাকুরকে দর্শন করেই স্বপ্নের সৌম্যমূর্তির রহস্য উন্মোচন।

ভূমিকা
বাংলা আধ্যাত্মিক সাহিত্যে শ্রীশ্রী রামঠাকুরের নাম উচ্চারণেই ভক্তহৃদয় শুচিতায় ভরে ওঠে। ‘কৃপাসিন্ধু রামঠাকুর’ গ্রন্থে মনোরঞ্জন মুখোপাধ্যায় যে ঘটনাটি লিখে গেছেন, তা ভক্তির পথের এক অনুপম উদাহরণ—স্বপ্ন, সংকেত ও কৃপালাভের পরম অনুভব।
স্বপ্নদর্শনের ঘটনা
আমার সঙ্গে বিবাহের ২/৩ দিন পূর্বে আমার ভাবী শাশুড়ী ঠাকুরানী স্বপ্ন দেখলেন—গলায় তুলসীর মালা, গায়ে ফতুয়া ও হাঁটুর উপরে ধুতি পরিহিত একজন সৌম্যমূর্তি বলছেন, “আপনার মাইয়ার শীঘ্রই বিবাহ হইবো, তবে একটু ব্যয় করতে হইবো।” তিনি কাউকে কিছু না বলে মনের মধ্যে রাখলেন—স্বপ্ন সত্য হয় কি না পরীক্ষা করবার মানসে।
পূর্বাভাসের সিদ্ধি
সত্যিই কয়েক দিনের মধ্যেই ঘটক উপস্থিত। অনায়াসে যোগাযোগ স্থাপিত হলো এবং বিবাহ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হল। শাশুড়ীমাতার মনে তখন প্রশ্ন—স্বপ্নে দেখা সেই সৌম্যমূর্তি কে?
রামঠাকুর দর্শন ও বিস্ময়
কয়েক মাস পর শ্বশুরমশাই ঢাকার বাড়ি বিক্রি করে দক্ষিণ কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। ঠিক তখনই শ্রীশ্রী রামঠাকুরের নামকীর্তি শোনে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে ‘নাম’ গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। কালীঘাটে ডাঃ অনন্ত সেন মহাশয়ের বাসভবনে রামঠাকুর অবস্থানকালে আমরা দর্শনে যাই।
শাশুড়ীমাতা রামঠাকুরকে দর্শনমাত্রই চমকে উঠলেন। জানতে চাইলে তিনি বিবাহের পূর্বস্বপ্নের কথা বললেন। তখনই স্পষ্ট হলো—স্বপ্নের সেই সৌম্যমূর্তি আর কেউ নন, শ্রীশ্রী রামঠাকুর স্বয়ং। আমি বিস্মিত ও অভিভূত হলাম।
আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা
- সংকেত ও কৃপা: ভক্তের জীবনে গুরু স্বপ্নরূপে সংকেত দেন—যা ভবিষ্যতকে আলোকিত করে।
- নাম-মহিমা: ‘নাম’ গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা স্বপ্ন-স্মৃতির দ্বারা দৃঢ়তর হয়; নামই জীবনের আশ্রয়।
- বিশ্বাসের পরীক্ষা: স্বপ্ন গোপন রাখার মধ্যে ছিল এক নীরব পরীক্ষা—সিদ্ধির সাথে সাথে বিশ্বাসও পুষ্ট হলো।
শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা
- গুরুকৃপা নানা পথ দিয়ে আসে—স্বপ্নও তার একটি মাধ্যম।
- সত্যের পথে স্থির বিশ্বাস রাখলে সংকেত নিজেই সত্যায়িত হয়।
- রামনাম ধারণই উত্তরণের পরম উপায়—জয় রাম।
প্রশ্নোত্তর
প্রঃ স্বপ্ন কি আধ্যাত্মিক জীবনে গ্রহণযোগ্য?
উঃ যখন তা গুরুকৃপায় আলোকিত হয় এবং জীবনের পথে ধর্মময় সিদ্ধান্তে সহায়তা করে—তখন তা আশীর্বাদ।
প্রঃ এই কাহিনি থেকে আজকের ভক্ত কী শিখবে?
উঃ নীরব বিশ্বাস, নামধারণ এবং গুরুদর্শনের আকাঙ্ক্ষা—এই ত্রয়ী মিললেই কৃপা অবতীর্ণ হয়।
উৎস– “কৃপাসিন্ধু রামঠাকুর” — মনোরঞ্জন মুখোপাধ্যায় (উদ্ধৃত ও সম্পাদিত)।

No comments: