শ্রীরামঠাকুরের লীলা — ভক্তি ও কৃপার অসাধারণ ঘটনা

শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই ছিল এক একটি শিক্ষা, এক একটি দিশারী আলো। চৌমুহনীতে অবস্থানকালে এমনই কিছু অলৌকিক লীলা ভক্তদের হৃদয়ে অমর হয়ে আছে।
ভক্তদের জন্য চাদর
একবার চৌমুহনীতে ভক্ত সমাগম একটু বেশী হয়েছিল। ভক্তদের বসবার জায়গা পাচ্ছেন না দেখে, ঠাকুর নিজে খাট থেকে নেমে তাঁর গায়ের চাদরখানাই ভক্তদের বসবার জন্য বিছিয়ে দিলেন।
সবাই চলে যাবার পর ঠাকুর তাঁর চাদরখানা খুঁজতে লাগলেন। তখন এক ভক্ত এসে বললেন— “চাদরখানা আমি রেখে দিয়েছি, ভাল করে ধুয়ে দেব বলে।”
ঠাকুর হেসে বললেন— “না, আমার চাদর আমারে দেন।”
চাদর ফিরে পেয়ে ঠাকুরের আনন্দ দেখে কে! চাদরখানা গায়ে জড়াচ্ছেন আর বলছেন— “আহা! ভক্তপদরজঃ… ভক্তপদরজঃ…” এই কথার মধ্য দিয়েই প্রকাশ পেল ভক্তপ্রেমে ভরপুর তাঁর অন্তর।
এক মুচির প্রতি কৃপা
চৌমুহনী স্টেশনে প্রতিদিন এক মুচি জুতা সেলাই করত। সে অবাক হয় দেখত, কাতারে কাতারে মানুষ ঠাকুর দর্শনে যাচ্ছে।
একদিন কাজ শেষে সরল হৃদয়ে, হাতে যন্ত্রপাতির ব্যাগ নিয়েই ঠাকুরের ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। তখন কেউ একজন তাকে বাধা দিয়ে বলল— “ওটা আর ভিতরে নিও না, ওখান থেকেই প্রণাম কর।”
ঠাকুর বললেন— “ওনাকে আসতে নিষেধ করেন কেন? আপনে ভিতরে আসেন।”
মুচি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ঠাকুরের কাছে এগিয়ে গেল। কাছে যেতেই ঠাকুর হাত বাড়িয়ে তাকে আলিঙ্গন করলেন। এ যেন সমাজের সব ভেদাভেদ ভেঙে দিয়ে ঠাকুর নিজ হাতে দেখিয়ে দিলেন— প্রত্যেক মানুষই তাঁর কাছে সমান।
এই কাহিনী আমাদের শেখায়— ভক্তি-ভালোবাসাই সর্বস্ব। ঠাকুরের দৃষ্টিতে কোনো জাত, কোনো বর্ণ, কোনো ভেদাভেদ নেই। তাঁর কৃপা সব জীবের জন্য সমানভাবে উন্মুক্ত।

No comments: