ঠাকুর: মাছ-মাংস কি খাওয়া যাবে? না ছাড়তে হবে?
জয় রাম ঠাকুর
ঠাকুর মাছ মাংস কি খাওয়া যাবে? না ছাড়তে হবে? এই বিষয়ে ঠাকুর যাহা বিস্তারিত বলিয়াছিলেন তাহা উপস্থাপন করিলাম। ঠাকুর বলিয়াছিলেন:
"খাইয়েন। কিন্তু যখন ইচ্ছা করবো না তখন আর খাইয়েন না।"
কেন জানিনা জগদীশ্বরের ভজনের বেলায় ভোজন টাও বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। কেহ কেহ বলেন মাছ মাংস খেলে সাধন-ভজন হয়না, ঈশ্বর মিলে না। তাই এসব ছাড়তে হবে, নিরামিষ খেতে হবে। এই প্রস্তাবনা অতি উৎকৃষ্ট ও অতি চমৎকার।
কিন্তু যে প্রশ্নটি মনে জাগে তা হলো শুধু মাছ মাংস ছাড়লেই নিরামিষভোজন করলেই ঈশ্বর দর্শন মিলবে? নাকি একসাথে আরো কিছু লাগবে?
অন্তরের কামনা-বাসনা লালসা অহংকার অভিমান চালবাজি ঠকবাজি ধান্দাবাজি না ছেড়ে শুধু মাছ-মাংস ছেড়ে কি কোনো লাভ হবে? আর মাছ মাংসকে ভয় করেই বা লাভ কি?
এ দেহই তো একটা মাংসপিণ্ড। এই হৃদিস্থানেই ঈশ্বর সদা বিরাজমান। তিনিও একটি রক্তমাংসের দেহ মন্দিরে অবস্থান করেন। তাই এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ কি? যে জিহ্বায় যে কন্ঠে ঈশ্বরের নাম সংকীর্তন হয় সকল দেব দেবীর নাম ও ভজন পূজন হয় তাও তো রক্তমাংসের। যে নিত্যানন্দ মৃদঙ্গ বাজিয়ে নামানন্দ কীর্তন হয় এতেও যদি জীবের চামড়াই থাকে তাহলে বাচ বিচার করব কাকে?
তবে যখন কোন কিছু খেতে অনিচ্ছা হয় তাতো আর খাওয়া যায় না। জোর করে খেলেও বমি হয়ে বেরিয়ে যায়। আর তাই মাছ-মাংস খেতে যখন অনিচ্ছা হয় তখনই এটা প্রকৃত ত্যাগ হয়। না হলে অন্তরে আসক্তি থেকে গেলে বাইরে ছাড়তে চেষ্টা করলে তা প্রকৃত ত্যাগ হয় না। তবে এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করে কোন লাভ নেই — এ হলো যার যার ভাব সিদ্ধি লাভ।
তাঁর সেবায় সাত্ত্বিক আহারই কাম্য ও অতি উত্তম। তবে ঠাকুর এসব না খেতে কাহাকেও বাধ্য করেননি, খেতে বাঁধাও দেননি।
শ্রীঠাকুর বলেন, প্রারব্ধভোগ সকলকেই ভুগতে হয়, কেবল নামেই কিছুটা প্রারব্ধ কাটে।
কুঞ্জলাল মজুমদারের বাড়ীতে শ্রীশ্রী রামঠাকুর ভক্তদের সাথে কথা বলছেন, হঠাৎ ঠাকুর জোরে কুঞ্জবাবুকে ডেকে দরজাটা বন্ধ করে দিতে বললেন। "কুঞ্জবাবু দরজাটা বন্ধ কইরা দেন — যে লোকটা আসতাছে তার মুখ আমি দেখতে চাই না"।
কুঞ্জবুর দরজা কিছু দেরী হওয়াতে উক্ত ভদ্রলোক ঠাকুরের ঘরে ঢুকে পড়লেন। ভদ্রলোকটিকে দেখে ঠাকুর বললেন, "আপনি ভাবছেন আমারে প্রণাম কইরা গিয়া কড়িকাঠে ঝুলবেন, আপনার এতো বড়ো সাহস। আপনারে দফায় দফায় জন্ম নিতে হইব — এই ঋণ শোধ করার জন্য।"
ঠাকুর ভদ্রলোককে পূর্বজন্মের কূকীর্তি দর্শান দেন এবং পরামর্শ দেন — "যান এ স্ত্রীকেই গিয়া সেবা করেন, আপনার স্ত্রীর মধ্যেই আমি আছি"।
শ্রীশ্রীঠাকুর বলেন, প্রারব্ধভোগ সকলকেই ভুগতে হয়, কেবল নামেই কিছুটা প্রারব্ধ কাটে।
...
নোট: আপনারা চাইলে উপরের কাহিনী ও বাণী থেকে উপসংহার টেনে নিজের জীবনচর্চায় প্রয়োগ করতে পারেন। ধর্মীয় বিষয় ওআচরণে সর্বোত্তম নির্দেশনা হলো অন্তরের সৎ intención ও ভক্তি।

No comments: