জ্ঞান থেকে ভক্তি, ভক্তি থেকে মুক্তি |
শ্রীভগবান শ্রীকৃষ্ণের জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা

সপ্তম অধ্যায় — বিজ্ঞান যোগ (Jñāna–Vijñāna Yoga)
(Divine Knowledge and Realisation — পরমাত্মজ্ঞান ও অভিজ্ঞতার যোগ)
✨ অধ্যায়ের ভূমিকা (Intro):
গীতার সপ্তম অধ্যায়, “বিজ্ঞান যোগ”, মানব আত্মার জ্ঞান ও পরমাত্মার বাস্তব উপলব্ধির গভীরতম সংলাপ। এই অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে জানাচ্ছেন—কেবল বুদ্ধিগত জ্ঞান নয়, “বিজ্ঞান”, অর্থাৎ আত্মিক অনুভব ও বাস্তব উপলব্ধি—সেই জ্ঞানের সর্বোচ্চ রূপ।
এই অধ্যায়ে ভগবান প্রকাশ করেন—কীভাবে তিনি সর্বত্র বিরাজমান, প্রকৃতি ও চেতনার এক ও অভিন্ন উৎস।
তিনি বলেন,
“ময়া ততমিদং সর্বং জগদব্যক্তমূর্তিনা।”
অর্থাৎ—আমার অপ্রকাশ রূপে সমগ্র জগৎ পরিব্যাপ্ত।
জ্ঞান (বৈদিক দর্শনীয় সত্য) ও বিজ্ঞান (আত্মিক অভিজ্ঞতা)—এই দুইয়ের সংযুক্তি মানুষকে নিয়ে যায় ঈশ্বরজ্ঞান ও ভক্তির পূর্ণতায়।
এই অধ্যায় আমাদের শেখায়—
👉 ঈশ্বর কেবল পূজার বিষয় নন, তিনি প্রত্যেক কণায়, প্রতিটি শ্বাসে বিরাজমান।
👉 ভক্তিই সেই বিজ্ঞান, যা জ্ঞানকে জীবিত করে তোলে।
🌿 মূল ভাব:
এই অধ্যায় মানবজীবনের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য—“জ্ঞান থেকে অনুভবে” উত্তরণ।
যখন ভক্তি ও জ্ঞান মিলেমিশে এক হয়, তখন আত্মা পরমাত্মার সঙ্গে মিলিত হয়—এই হল “বিজ্ঞান যোগ”।
শ্রীভগবানুবাচ
১।।
অনুবাদঃ
শ্রীভগবান বললেন- হে পার্থ! আমাতে আসক্তচিত্ত হয়ে, আমাতে মনোনিবেশ করে
যোগাভ্যাস করলে, কিভাবে সমস্ত সংশয় থেকে মুক্ত হয়ে আমাকে জানতে পারবে, তা
শ্রবণ কর।
২।।
অনুবাদঃ আমি এখন তোমাকে বিজ্ঞান সমন্বিত এই জ্ঞানের কথা সম্পূর্ণরূপে বলব, যা জানা হলে এই জগতে আর কিছুই জানবার বাকি থাকে না।
।৩।।
অনুবাদঃ
হাজার হাজার মানুষের মধ্যে কদাচিৎ কোন একজন সিদ্ধি লাভের জন্য যত্ন করেন,
আর সেই প্রকার যত্নশীল সিদ্ধদের মধ্যে কদাচিৎ একজন আমাকে অর্থাৎ আমার
ভগবৎ-স্বরূপকে তত্ত্বত অবগত হন।
৪।।
অনুবাদঃ ভূমি, জল, বায়ু, অগ্নি, আকাশ, মন, বুদ্ধি ও অহঙ্কার-এই আট প্রকারে আমার ভিন্না জড়া প্রকৃতি বিভক্ত।
৫।।
অনুবাদঃ
হে মহাবাহো! এই নিকৃষ্টা প্রকৃতি ব্যতীত আমার আর একটি উৎকৃষ্টা প্রকৃতি
রয়েছে। সেই প্রকৃতি চৈতন্য-স্বরূপা ও জীবভূতা; সেই শক্তি থেকে সমস্ত জীব
নিঃসৃত হয়ে এই জগৎকে ধারণ করে আছে।
৬।।
অনুবাদঃ
আমার এই উভয় প্রকৃতি থেকে জড় ও চেতন সব কিছু উৎপন্ন হয়েছে। অতএব
নিশ্চিতভাবে জেনে রেখো যে, আমিই সমস্ত জগতের উৎপত্তি ও প্রলয়ের মূল কারণ।
৭।।
অনুবাদঃ হে ধনঞ্জয়! আমার থেকে শ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই। সূত্রে যেমন মণিসমূহ গাঁথা থাকে, তেমনই সমস্ত বিশ্বই আমাতে ওতঃপ্রোতভাবে অবস্থান করে।
৮।।
অনুবাদঃ হে কৌন্তেয়! আমিই জলের রস, চন্দ্র ও সূর্যের প্রভা, সর্ব বেদের প্রণব, আকাশের শব্দ এবং মানুষের পৌরুষ।
৯।।
অনুবাদঃ আমি পৃৃথিবীর পবিত্র গন্ধ, অগ্নির তেজ, সর্বভূতের জীবন এবং তপস্বীদের তপ।
১০।।
অনুবাদঃ হে পার্থ, আমাকে সর্বভূতের সনাতন কারণ বলে জানবে। আমি বুদ্ধিমানের বুদ্ধি এবং তেজস্বীদের তেজ।
১১।।
অনুবাদঃ হে ভরতর্ষভ! আমি বলবানের কাম ও রাগ বিবর্জিত বল এবং ধর্মের অবিরোধী কামরূপে আমি প্রাণীগণের মধ্যে বিরাজমান।
১২।।
অনুবাদঃ সমস্ত সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক ভাবসমূহ আমার থেকেই উৎপন্ন বলে জানবে। আমি সেই সকলের অধীন নই, কিন্তু তারা আমার শক্তির অধীন।
১৩।।
অনুবাদঃ (সত্ত্ব, রজ, ও তম) তিনটি গুণের দ্বারা মোহিত হওয়ার ফলে সমগ্র জগৎ এই সমস্ত গুণের অতীত ও অব্যয় আমাকে জানতে পারে না।
১৪।।
অনুবাদঃ আমার এই দৈবী মায়া ত্রিগুণাত্মিকা এবং তা দুরতিক্রমণীয়া। কিন্তু যাঁরা আমাতে প্রপত্তি করেন, তাঁরাই এই মায়া উত্তীর্ণ হতে পারেন।
১৫।।
অনুবাদঃ মূঢ়, নরাধম, মায়ার দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে এবং যারা আসুরিক ভাবসম্পন্ন, সেই সমস্ত দুস্কৃতকারীরা কখনও আমার শরণাগত হয় না।
১৬।।
অনুবাদঃ হে ভরতশ্রেষ্ঠ অর্জুন! আর্ত, অর্থার্থী, জিজ্ঞাসু ও জ্ঞানী-এই চার প্রকার পুণ্যকর্মা ব্যক্তিগণ আমার ভজনা করেন।
১৭।।
অনুবাদঃ
এই চার প্রকার ভক্তের মধ্যে নিত্যযুক্ত, আমাতে একনিষ্ঠ তত্ত্বজ্ঞানীই
শ্রেষ্ঠ। কেন না আমি তাঁর অত্যন্ত প্রিয় এবং তিনিও আমার অত্যন্ত প্রিয়।
১৮।।
অনুবাদঃ
এই সকল ভক্তেরা সকলেই নিঃসন্দেহে মহাত্মা, কিন্তু যে জ্ঞানী আমার
তত্ত্বজ্ঞানে অধিষ্ঠিত, আমার মতে তিনি আমার আত্মস্বরূপ। আমার অপ্রাকৃত
সেবায় যুক্ত হয়ে তিনি সর্বোত্তম গতিস্বরূপ আমাকে লাভ করেন।
১৯।।
অনুবাদঃ বহু জন্মের পর তত্ত্বজ্ঞানী ব্যক্তি আমাকে সর্ব কারণের পরম কারণ রূপে জেনে আমার শরণাগত হন। সেইরূপ মহাত্মা অত্যন্ত দুর্লভ।
২০।।
অনুবাদঃ
জড় কামনা-বাসনার দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে, তারা অন্য দেব-দেবীর
শরণাগত হয় এবং তাদের স্বীয় স্বভাব অনুসারে বিশেষ নিয়ম পালন করে দেবতাদের
উপাসনা করে।
২১।।
অনুবাদঃ
পরমাত্মরূপে আমি সকলের হৃদয়ে বিরাজ করি। যখনই কেউ দেবতাদের পূজা করতে
ইচ্ছা করে, তখনই আমি সেই সেই ভক্তের তাতেই অচলা শ্রদ্ধা বিধান করি।
২২।।
অনুবাদঃ সেই ব্যক্তি শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে সেই দেবতার আরাধনা করেন এবং সেই দেবতার কাছ থেকেই আমারই দ্বারা বিহিত কাম্য বস্তু অবশ্যই লাভ করেন।
২৩।।
অনুবাদঃ অল্পবুদ্ধি ব্যক্তিদের আরাধনা লব্ধ সেই ফল অস্থায়ী। দেবোপাসকগণ দেবলোক প্রাপ্ত হন, কিন্তু আমার ভক্তের আমার পরম ধাম প্রাপ্ত হন।
অনুবাদঃ
বুদ্ধিহীন মানুষেরা, যারা আমাকে জানে না, মনে করে যে, আমি পূর্বে অব্যক্ত
নির্বিশেষ ছিলাম, এখন ব্যক্তিত্ব পরিগ্রহ করেছি। তাদের অজ্ঞতার ফলে তারা
আমার অব্যয় ও সর্বোত্তম পরম ভাব সম্বন্ধে অবগত নয়।
২৫।।
অনুবাদঃ
আমি মূঢ় ও বুদ্ধিহীন ব্যক্তিদের কাছে কখনও প্রকাশিত হই না। তাদের কাছে আমি
আমার অন্তরঙ্গা শক্তি যোগমায়ার দ্বারা আবৃত থাকি। তাই, তাঁরা আমার অজ ও
অব্যয় স্বরূপকে জানতে পারে না।
২৬।।
অনুবাদঃ
হে অর্জুন! পরমেশ্বর ভগবানরূপে আমি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে
সম্পূর্ণরূপে অবগত। আমি সমস্ত জীব সম্বন্ধে জানি, কিন্তু আমাকে কেউ জানে
না।
২৭।।
অনুবাদঃ হে ভারত! হে পরন্তপ! ইচ্ছা ও দ্বেষ থেকে উদ্ভত দন্দ্বের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে সমস্ত জীব মোহাচ্ছন্ন হয়ে জন্মগ্রহণ করে।
২৮।।
অনুবাদঃ
যে সমস্ত পুণ্যবান ব্যক্তির পাপ সম্পূর্ণরূপে দূরীভূত হয়েছে এবং যাঁরা
দ্বন্দ্বমোহ থেকে মুক্ত হয়েছেন, তাঁরা দৃঢ় নিষ্ঠার সঙ্গে আমার ভজনা করেন।
২৯।।
অনুবাদঃ
যে সমস্ত বুদ্ধিমান ব্যক্তি জরা ও মৃত্যু থেকে মুক্তি লাভের জন্য আমাকে
আশ্রয় করে যত্ন করেন, তাঁরা প্রকৃতপক্ষে ব্রক্ষভূত, কেন না তাঁরা
অধ্যাত্মতত্ত্ব ও কর্মতত্ত্ব সব কিছু সম্পূর্ণরূপে অবগত।
৩০।।
অনুবাদঃ
যাঁরা অধিভূত-তত্ত্ব, অধিদৈব-তত্ত্ব ও অধিযজ্ঞ-তত্ত্ব সহ আমাকে পরমেশ্বর
ভগবান বলে অবগত হন, তাঁরা আমাতে আসক্তচিত্ত, এমন কি মরণকালেও আমাকে জানতে
পারেন।
🌼 সমাপনী ভাবনা:
“বিজ্ঞান যোগ” অধ্যায় আমাদের শেখায়—
শ্রদ্ধা, ভক্তি ও অভিজ্ঞতাই প্রকৃত জ্ঞান।
শুধু বুদ্ধি নয়, হৃদয় দিয়েই ঈশ্বরকে উপলব্ধি করতে হয়।
ভগবান সর্বত্র, সর্বকালে, প্রতিটি জীবের অন্তরে বিরাজমান।
যে ব্যক্তি এই সত্যকে উপলব্ধি করে, তার মধ্যে অহং বিলীন হয়,
সে আর কেহ নয়—ভক্ত, যোগী, জ্ঞানী, এবং আত্মদর্শী।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই অধ্যায়ে মানবজাতিকে সেই অনন্ত বাণী দিয়েছেন—
“ভক্ত্যা মামভিজানাতি, যাবান্যশ্চাস্মি তত্ত্বতঃ।”
অর্থাৎ, কেবল ভক্তির মাধ্যমেই আমায় যথার্থভাবে জানা যায়।
এখানেই গীতার জ্ঞানের পরিণতি—
জ্ঞান থেকে ভক্তি, ভক্তি থেকে উপলব্ধি, উপলব্ধি থেকে মুক্তি।
🙏 উপসংহার:
“বিজ্ঞান যোগ” আমাদের শেখায়,
জীবনের প্রতিটি কর্ম, চিন্তা ও অনুভূতির অন্তরালে
ঈশ্বরীয় উপস্থিতি অনুভব করাই সত্য সাধনা।
জ্ঞান যদি আলো হয়, তবে ভক্তি সেই আলোর উষ্ণতা—
এই দুই মিলেই মানুষকে পরম সত্তার দ্বারে পৌঁছে দেয়।
📖 জয় শ্রীকৃষ্ণ।
সপ্তম অধ্যায় — বিজ্ঞান যোগ (Jñāna–Vijñāna Yoga)
বই: “বাণীর আলোকে পথ চলা (Banir Aloke Poth Chala)” — Sri Sri Ramthakur-er Potransho-er Byakhya — লেখক: সুব্রত মজুমদার
বাংলা:
🌼 গীতা সপ্তম অধ্যায় — বিজ্ঞান যোগ | জ্ঞান থেকে ভক্তি, ভক্তি থেকে মুক্তি | শ্রীকৃষ্ণের জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা
English:
🌼 Bhagavad Gita Chapter 7 — Jnana Vijnana Yoga | From Knowledge to Devotion, From Devotion to Liberation | Teachings of Lord Krishna
🪔 Video Description (বিবরণ):
📖 শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা — সপ্তম অধ্যায় : বিজ্ঞান যোগ (Jñāna–Vijñāna Yoga)
এই অধ্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে শেখান — কেবল জ্ঞান নয়, সেই জ্ঞানের অন্তর্নিহিত অভিজ্ঞতা (বিজ্ঞান)-ই জীবনের আসল পথ।
জ্ঞান যখন ভক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়, তখনই মানুষ উপলব্ধি করে ঈশ্বরের প্রকৃত রূপ।
এই ভিডিওতে আমরা শুনব —
✨ “বিজ্ঞান যোগ”-এর মূল ভাবনা
✨ জ্ঞান ও ভক্তির যোগসাধনা
✨ গীতার আধ্যাত্মিক শিক্ষা — শ্রীকৃষ্ণের কণ্ঠে
✨ “বাণীর আলোকে পথ চলা” গ্রন্থের আলোচনায় সুব্রত মজুমদারের ব্যাখ্যা
📚 Source:
বই: “বাণীর আলোকে পথ চলা (Banir Aloke Poth Chala)” — Sri Sri Ramthakur-er Potransho-er Byakhya
লেখক: Subrata Majumder
🕉️ চ্যানেলের উদ্দেশ্য:
ভক্তি, জ্ঞান ও আত্মউন্নয়নের মাধ্যমে ঈশ্বরসচেতন জীবনযাপন শেখানো।
🔖 Hashtags (হ্যাশট্যাগ):
#গীতা #বিজ্ঞানযোগ #BhagavadGita #JnanaVijnanaYoga #SriKrishna #KrishnaTeachings #SubrataMajumder #BanirAlokePothChala #SriSriRamthakur #SpiritualGita #Bhakti #KnowledgeAndDevotion #GeetaInBengali #BanglaGita
🔍 Keywords (মূল শব্দসমূহ):
গীতা সপ্তম অধ্যায় বাংলা ব্যাখ্যা
বিজ্ঞান যোগ ব্যাখ্যা
Bhagavad Gita Chapter 7 explanation in Bengali
Jnana Vijnana Yoga meaning
শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ
Subrata Majumder Gita Series
Banir Aloke Poth Chala book
Sri Sri Ramthakur Gita interpretation
Spiritual teachings in Bengali
Devotional Gita video
No comments: