গুরু ভাই বোনসহ সকল সনাতনী ভাই বোনদের জানাই স্বাগত ,উদ্দেশ্য গুরু দেবের অমৃত বানী সকলের মাঝে প্রচার করা।

ঠাকুরের করুণা ও কঠোরতা — শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্রদেবের শাসনলীলা

 ঠাকুরের করুণা ও কঠোরতা — শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্রদেবের শাসনলীলা

শ্রীশ্রী কৈবল্যনাথে নমঃ
শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্রদেব ছিলেন অপরিসীম করুণাময়; তবু প্রয়োজন হলে কঠোরও। তিনি ভক্তের সংকটের আগে থেকেই প্রতিকার করতেন, আর অন্যায় দেখলে কঠোর শিক্ষকীয় রূপ ধারণ করতেন। আজকের এই কাহিনি সেই দ্বৈত গুণের এক উদাহরণ — কীভাবে করুণা ও শাসন একসাথে ভক্তিবলকে জাগ্রত করে।

ঠাকুর যেমন কোমল, তেমনি কঠোর ছিলেন।
ভক্তরা যখন দুঃখ-কষ্ট নিয়ে আসতেন, ঠাকুর সযত্নে সবার কথা শুনতেন এবং প্রয়োজনে শনাক্ত প্রতিকার দিতেন। কিন্তু ভক্তির প্রতি অবজ্ঞা বা অসতর্কতা দেখা দিলে তিনি কঠোরতার আশ্রয় নিতেন—এটাই ছিল তাঁর অনন্য পদ্ধতি।

শ্রীমতী কিরণবালা মজুমদার তাঁর স্মৃতিচারণায় লিখেছেন —

“ঠাকুর সাধারনত রান্না করা জিনিস গ্রহণ করতেন না; এজন্য আমাদের মনে কিছু মূল্যবান দুঃখ ছিল। একসময় ঠাকুর অনুগ্রহ করে কয়েকদিন রান্না গ্রহণ করতে রাজি হলেন। কর্ত্তা (কুঞ্জবাবু) নির্দেশ দিলেন—বেলা এগারোটার মধ্যে ভোগের রান্না করতে হবে।”

কিন্তু সেদিন সকালে ভক্তসমাগম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। বারবার চা-নাশ্তার জন্য রান্না করতে করতে সময় চলে গেল। বেলা এগারোটা পেরিয়ে গেলেও ভোগের জন্য উপযুক্ত রান্না প্রস্তুত করা যায়নি। কুঞ্জবাবু রাগে এসে বকাবকি করলেন এবং এমনকি বাড়িতে থাকা উনুন ভেঙে দিলেন। বিরক্ত হয়ে পরিবারের লোকেরা তাড়াহুড়ো করে অন্য উনুনে রান্না সম্পন্ন করল।

যেহেতু যে ঘরে ঠাকুর বসেছিলেন, তা রান্নাঘর থেকে অনেক দূরে—তাই ঠাকুর সেই অশান্তির কথা শুনতে পারার কথা ছিল না। তবুও ভোগের সময় ঠাকুর একটুও গ্রহণ করলেন না। এই নীরব প্রত্যাখ্যান সবার জন্য একটি স্পষ্ট শিক্ষা ছিল—ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে করা নয় এমন ভোগ গ্রহণযোগ্য নয়।

পরের দিন ঠাকুর বেরোনোর জন্য প্রস্তুত হলেন। সাধারণত কেউ এসে তাঁকে নিয়ে যেত, কিন্তু ওই দিন তিনি বললেন—“গাড়ি লাগবে না, আমি একা যাব।” তাঁর এই দৃঢ় ও কঠোর সিদ্ধান্তের সামনে কেউ কিছু বলতে সাহস পেল না। কিছুদিন পরে তিনি ফিরে এলেন, কিন্তু আর কখনও রান্না করা ভোগ গ্রহণ করলেন না।

এই ঘটনায় স্পষ্ট হল—ঠাকুরের করুণা সীমাহীন, কিন্তু ভক্তির অনুশাসনও তার সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

এই কাহিনি আমাদের শেখায়—ভক্তি কেবল অচেতন আচার নয়; তা পরিশুদ্ধ শ্রদ্ধা ও শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হবে।
ঠাকুর যে কঠোর রূপ দেখিয়েছেন, তা রাগ নয়—বরং শিক্ষামূলক শাসন। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে ভোগ হলো পবিত্রতা ও সম্মানের প্রতীক; যদি সেটি অনাদরে পরিণত হয়, তাহলে সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। এই শিক্ষা আজও প্রাসঙ্গিক—যে কাজই করা হোক, শ্রদ্ধা ও নীতিমালা মেনে করাই ভক্তির সার।

প্রিয় ভক্তবৃন্দ,
শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—করুণা ও শাসন একসাথে চললে ভক্তি পরিপূর্ণ হয়। যদি আমরা শ্রদ্ধা, শুচিতা ও সময়ানুবর্তিতা মেনে চলি, তাহলে প্রতিটি কাজই হয়ে উঠবে প্রকৃত ঠাকুরসেবা।

জয় শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্রদেব
জয় শ্রীশ্রী কৈবল্যনাথ

লেখকতা/উৎস: শ্রীমতী কিরণবালা মজুমদার

#শ্রীশ্রীঠাকুর #ঠাকুরেরবাণী #ঠাকুরেরকরুণা #ঠাকুরেরকঠোরতা #ভক্তি #শুচিতা #Ramthakur #SriSriRamthakur #DevotionalBangla #RamthakurLeela


ঠাকুরের করুণা ও কঠোরতা — শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্রদেবের শাসনলীলা ঠাকুরের করুণা ও কঠোরতা — শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্রদেবের শাসনলীলা Reviewed by শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ(SriSriramthakur O gan Ganer vhovon Youtube channel) on October 26, 2025 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.