🌺 ঘরের ঠাকুর শ্রী রামচন্দ্র
✍️ লেখক: শ্রীমতী কিরণবালা মজুমদার
(বেদবানী ও ঠাকুর-লীলা স্মৃতি থেকে)
💫 আশ্রিতের সুখের জন্য ঠাকুরের ত্যাগ
আশ্রিতদের কল্যাণের জন্য ঠাকুর শ্রী রামচন্দ্র নিজের শরীরে অসংখ্য ব্যাধি ধারণ করেছিলেন। তিনি যেন মানবদেহে ঈশ্বরের ত্যাগের এক জীবন্ত প্রতিমূর্তি।
একবার ঠাকুর বহুদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ। সারাদিনে কেবল দু’-তিনটি ডাব ও অল্প দুধ—এইটুকুই গ্রহণ করেন। পেটে প্রবল ব্যথা।
বেলেঘাটা থেকে কৈলাসবাবু, এক এলোপ্যাথ ডাক্তার, ঠাকুরের সেবা করতে এলেন। ঠাকুর নিজেই বললেন—
“হোমিওপ্যাথিক ওষুধে কিছুই হয় নাই, আপনি এলোপ্যাথিক ওষুধ দিন।”
কৈলাসবাবু পরীক্ষার পর ওষুধ দিলেন, কিন্তু ব্যথা আরও বেড়ে গেল। ঠাকুরের যন্ত্রণা অসহ্য হয়ে উঠল—তিনি কখনও বসছেন, কখনও কাঁদছেন, কখনও খালি মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। সকলের চোখে জল।
🌿 ঠাকুরের কষ্ট দেখে সবার অশ্রু
ঠাকুর কাতর কণ্ঠে বলছেন—
“আমি আর সহ্য করতে পারি না... মাগো, আমি আর কত কষ্ট পাবো!”
এই কথা শুনে ঘরের সকলে অঝোরে কেঁদে উঠল। কর্ত্তা (কুঞ্জবাবু) খবর পাঠালেন ডাক্তার দাশগুপ্তকে। কিন্তু ঠাকুর তাঁকে সামনে আসতে নিষেধ করলেন।
ডাক্তারবাবু পাশে ঘরে বসে আছেন। পরে ঠাকুর বললেন—
“আসছে যখন দেইখা যাউক, এখানে আসতে বলেন।”
দীর্ঘদিন পর ডাক্তার দাশগুপ্ত ঠাকুরের সামনে এলেন। এতকাল দর্শনের অনুমতি পাননি। আজ যখন এলেন, তখন ঠাকুরের এই দুঃসহ অবস্থা।
ডাক্তারবাবুর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে—তিনি ঠাকুরের পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন।
🕉️ কৈলাসবাবু ও ডাক্তার দাশগুপ্তের সামনে ঠাকুরের মহা শিক্ষা
ঠাকুর বললেন—
“বড়ই কষ্ট পাইতেছি। কৈলাসবাবু ওষুধ দিচ্ছেন, কিছু হইলো না।”
তারপর বললেন—
“কৈলাসবাবু, একটু ভালো ওষুধের ব্যবস্থা কইরা দেন।”
এরপর ঠাকুর ডাক্তার দাশগুপ্তকে বললেন—
“ডাক্তারবাবু, আপনি লেখেন।”
দুইজনই হতবাক। ডাক্তার দাশগুপ্ত, যিনি ইউরোপ-ফেরত, নামী চিকিৎসক, তাঁকে বলা হলো—কৈলাসবাবু বলবেন, আর আপনি লিখবেন!
ঠাকুর বললেন—
“আপনে বলেন (কৈলাসবাবু), আর আপনি লেখেন (দাশগুপ্ত)।”
সকলেই অবাক! কিন্তু ঠাকুরের ইচ্ছায় তাই হলো। কৈলাসবাবু ওষুধের নাম বললেন, আর দাশগুপ্তবাবু লিখলেন।
🌼 অহমিকার দমন: ঠাকুরের লীলা
পরবর্তীতে ডাক্তার দাশগুপ্ত নিজেই বলেন—
তিনি মনে মনে ভেবেছিলেন, “আমার ডাক পড়েছে, এবার আমিই ঠাকুরকে সুস্থ করব।”
কিন্তু ঠাকুর তো অন্তর্যামী। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই অহংকার বা ‘আমি’-বোধ ভেঙে দিলেন।
এই ঘটনার মাধ্যমে ঠাকুর শেখালেন—
“যেখানে ‘আমি’ আছে, সেখানে ঈশ্বর নেই। ঈশ্বর কেবল বিনয় ও আত্মসমর্পণের মাঝে বাস করেন।”
ডাক্তারবাবু বলেন—
“ঠাকুরের বকা মানেই আশীর্বাদ। তাঁর কটুকথার মধ্যেই প্রেম লুকানো থাকে।”
🔱 কালীয়দমন ও ‘আমি’-বোধের শিক্ষা
ঠাকুরের বকুনি ছিল যেন কালীয়দমন—
যে ‘আমি’ নামক কালীয়নাগ মানবমনে ফণা তোলে, ঠাকুর তা ভেঙে চুরমার করেন তাঁর করুণায়।
এই শিক্ষা শুধু ডাক্তার দাশগুপ্ত নয়, সকল ভক্তের জন্য এক চিরন্তন বার্তা—
“যে নিজের অহংকে ঠাকুরের চরণে সমর্পণ করে, তার জীবনে আর দুঃখ থাকে না।”
🌸 উপসংহার: ঠাকুরের কষ্টই ভক্তের শিক্ষা
ঠাকুরের এই ব্যাধিভোগ ছিল শুধু দেহযন্ত্রণা নয়,
এ ছিল ভক্তদের অহংকার বিনাশের এক তপস্যা।
তিনি নিজের কষ্টের মধ্য দিয়ে দেখালেন—
“সেবাই ঈশ্বরপ্রাপ্তির পথ। বিনয়ই মুক্তির দ্বার।”
আধ্যাত্মিক আলোচনা (Ādhyātmik Ālocanā)
🔖 মূল বার্তা
“এই সংসারে আমি-ভাব যতদিন আছে, ততদিন কষ্টও আছে। ঠাকুরের বকাঝকা সেই কালীয়দমন—অহংকারের বিনাশ।”
🕊️ সূত্র
📜 ‘ঘরের ঠাকুর শ্রী রামচন্দ্র’ — শ্রীমতী কিরণবালা মজুমদার
🪔 ভক্ত স্মৃতি ও বেদবানীর আলোকে সংকলন ও সম্পাদনা: সুব্রত মজুমদার
নামই ভগবান” — শ্রীশ্রী রামঠাকুরের নামতত্ত্ব ও আত্মসমর্পণের বেদবানীIশ্রীশ্রী রামঠাকুরের বেদবানী ২য় খণ্ড থেকে নেওয়া এই উক্তিতে তিনি নাম ও ভগবানের অভিন্নতা, নামস্মরণের গুরুত্ব, আত্মসমর্পণ ও মোক্ষের পথ নিয়ে গভীর আধ্যাত্মিক শিক্ষা দিয়েছেন। পড়ুন এই অনন্য ভাবনা।
🔍 SEO ট্যাগ (বাংলা)

No comments: