কার্তিক মাস বা দামোদর মাসের মাহাত্ম্য ও ব্রতবিধি
💛 দামোদর মাস পরিচয়
লীলা পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ মাতা যশোদার দামবন্ধন স্বীকার করে বিশুদ্ধ বাৎসল্যরস অনুভব করেছিলেন। এই কারণে কার্তিক মাসকে ‘দামোদর মাস’ বলা হয়।
-
আরম্ভ: ২১শে আশ্বিন / ৭ই অক্টোবর, মঙ্গলবার পূর্ণিমা
-
সমাপন: ২০শে কার্তিক / ৫ই নভেম্বর, বুধবার পূর্ণিমা
📖 ব্রত ও নিয়ম
দামোদর ব্রতের মূল উদ্দেশ্য: ভগবান শ্রীদামোদরের প্রতি ভক্তি ও সেবা, যার মাধ্যমে মানব জীবনে পাপ দূর হয় এবং আধ্যাত্মিক সাফল্য প্রাপ্ত হয়।
নিত্য কর্মসমূহ:
-
সকাল-সন্ধ্যা তুলসী পূজা ও পরিক্রমা
-
হরি জাগরণ ও আরতি
-
শ্রীদামোদর অর্চন, দীপদান
-
শ্রীদামোদরাষ্টক স্তোত্র পাঠ
-
ভক্তিভাবে হরিনাম স্রবণ ও জপ
-
মন্দিরে প্রদক্ষিণ ও গ্রন্থ পাঠ
বর্জনীয় খাদ্য ও বস্তু:
-
মৎস্য, মাংস, ডিম, ছত্রাক, রাজমাষ, শিম, পান্তা ভাত
-
কলমী শাক, পটল, বেগুন, আচার, তৈল মর্দন, পরশয্যা, পরধন
-
মধু, পঁচা বাসি, নিম, তাল, নারিকেল, লাউ ইত্যাদি
🌟 মাহাত্ম্য
-
স্কন্দপুরাণ ও পদ্মপুরাণ অনুযায়ী কার্তিক মাসে ব্রত পালন বা দীপদান করলে কোটি-পুণ্য লাভ হয়।
-
কার্তিকে একবারও পূজা বা দীপদান করলে সকল বাধা দূর হয়, স্বর্গপ্রাপ্তি সহজ হয়।
-
শ্রীদামোদরের প্রতি নিবেদিত প্রেম ও সেবা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।
🙏 সংকল্প ও প্রার্থনা
সংকল্প:
“হে জনার্দন! হে দামোদর! শ্রীরাধার সাথে আপনার প্রীতির জন্য কার্তিকে আমি প্রাতঃস্নান ও দীপদান করব। আমার প্রদত্ত অর্ঘ্য গ্রহণ করুন।”
প্রার্থনা:
“হে ভগবান! আপনার প্রসাদে আমার সমস্ত পাপ বিনাশ হোক এবং নিত্য ধ্যান ও সেবায় আমি সমৃদ্ধ হই।”
লীলা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মাতা যশোদার দামবন্ধন স্বীকার করে নিজে বিশুদ্ধ বাৎসল্যরস আস্বাদন করেছেন এবং নিজের অস্বাতন্ত্র্য তথা ভক্তাধীনতার পরমোৎকর্ষ প্রদর্শন করেছেন। কার্তিক শুক্লা প্রতিপদেই তিনি সেই পরমোৎকৃষ্ট দামোদর লীলা প্রকটিত করেন। এজন্যই কার্তিক মাস ‘দামোদর মাস' নামে প্রসিদ্ধ।
২১শে আশ্বিন ০৭ই অক্টোবর মঙ্গলবার পূর্ণিমাঃ শ্রীদামোদরকে প্রদীপ দান আরম্ভ।

২০শে কার্তিক ০৫ই নভেম্বর বুধবার পূর্ণিমাঃ শ্রীদামোদরকে প্রদীপ দান সমাপন।

বিভিন্ন
পুরাণাদিতে কার্তিক তথা দামোদর মাসের মহিমা বিস্তারিত ভাবে বর্ণিত হয়েছে।
বৈষ্ণবস্মৃতিশাস্ত্র শ্রী হরিভক্তিবিলাসের ষোড়শ অধ্যায়ে দামোদর ব্রত বা
নিয়ম সেবার বিধি সংকলিত হয়েছে। বিধি ও রাগমার্গী উভয় সাধকের জন্যই
দামোদর মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শাস্ত্রাদিতে এই মাসে প্রত্যহ শ্রীশ্রী
রাধাদামোদর অর্চন ও সত্যব্রত মুনি কর্তৃক গ্রথিত ‘শ্রীদামোদরাষ্টক’ স্তোত্র
পাঠের নির্দেশ দেওয়া আছে । এই স্তোত্র নিত্যসিদ্ধ এবং শ্রীদামোদর-কৃষ্ণকে
আকর্ষণ করতে সমর্থ । এই মাসে ভগবান শ্রীদামোদরের সাথে শ্রীমতি রাধারাণীর
আরাধনা করা উচিত। কেননা স্বীয় হ্লাদিনী শক্তি উর্দ্ধেশ্বরী শ্রীমতি রাধিকা
ব্যতীত ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কোনো সেবাই গ্রহণ করেন না। শ্রীদামোদরাষ্টকের শেষ
শ্লোকেও তাই প্রতিপন্ন হয়েছে ।
(কার্তিক কৃত্যসমূহ)
কার্তিক মাসের অধিষ্ঠাতৃদেব শ্রীরাধিকার সাথে শ্রীদামোদরে আমি প্রপন্ন হই । যার প্রভাবে তাঁর প্রিয়তম কার্তিক মাস সেবিত হবেন।

কার্তিকব্রতের নিত্যতা

স্কন্দপুরাণে ব্রহ্মা-নারদ সংবাদে–
দুর্লভ মনুষ্যজন্ম লাভ করে যে মানব কার্তিক ব্রতে বর্ণিত ধর্ম আচরণ করে না, হে ধার্মিকবর তাকে মাতৃপিতৃ ঘাতক জানবে।

দামোদর প্রিয় কার্তিকমাস যে মানব ব্রতহীনভাবে অতিবাহিত করে, সে মানব সর্বধর্ম বর্জিত হয়ে পশুপাখি জন্ম লাভ করে।

হে মুনিবর! যে মানব কার্তিক ব্রত করে না, সে ব্রহ্মঘাতী, গোঘাতী, স্বর্ণচোর ও সর্বদা মিথ্যাবাদী।

যে বিধবা নারী কার্তিক ব্রত করে না, হে মুনিশ্রেষ্ঠ! সে সত্যিই নরকে গমন করে ।

কার্তিক মাসে যে গৃহী ব্রত না করে, তার যজ্ঞদানাদি বৃথা হয় এবং কল্পকাল নরকবাসী হয় ।

কার্তিক মাস প্রাপ্ত হয়ে যে দ্বিজ ব্রত বিমুখ, দেবরাজসহ দেবগণ সকলে তার প্রতি বিমুখ।

হে বিপেন্দ্র! বহু যজ্ঞ দ্বারা পূজা করে এবং শতবার শ্রাদ্ধ করেও এই কার্তিকে ব্রত না করার ফলে স্বর্গ প্রাপ্ত হয় না।

কার্তিকে ব্রত না করলে যে উৎকৃষ্ট দান, সুমহান তপস্যা ও জপ সকলই বিফল হয় ।

হে নারদ! কার্তিক মাসে উত্তম বৈষ্ণব ব্রত না করলে সপ্ত জন্মার্জিত পুণ্য বৃথা হয় ।

হে মহামুনে! যারা কার্তিকে পবিত্র বৈষ্ণব্রত করে না ইহলোকে সেই মানবগণকে পাপমূর্তি বলে জানবেন ।

(পদ্মপুরাণে শ্রীনারদ-শৌনকাদি মুনিগণ-সংবাদে -)
কার্তিকে বিশেষসানদানাদি সৎকর্মের নিত্যতা

স্কন্দপুরাণে কার্তিকব্রত মাহাত্ম্যে–
হে পুত্র! যারা কার্তিকে দান, হোম, জপ, স্নান ও শ্রীহরিব্রত করে না, সেই দ্বিজগণ নরাধম ।

যারা কার্তিকে ভক্তিভাবে কেশবদেবের অর্চনা না করল, তারা যমদূতগণ কর্তৃক বন্ধিত হয়ে নরকে গমন করবে ।

সহস্র কোটি জন্মের সাধনের ফলে দুর্লভ মানবজন্ম প্রাপ্ত হয়ে যে কার্তিকে শ্রীবিষ্ণুর অর্চন করল না, তার জন্ম বিফলে গেল।

যার কার্তিক মাসে বিষ্ণুপূজা, বিষ্ণুকথা, বৈষ্ণবগণের দর্শন না হয় তার দশবার্ষিক পুণ্য নষ্ট হয় ।

কার্তিক মাহাত্ম্য

স্কন্দপুরাণে কার্তিক প্রসঙ্গে–
সর্বর্তীর্থে যে স্নান, সর্বদানের যে ফল, অংশের একাংশেরও সমান হয় না । কার্তিক মাসের কোটি

অংশের একাংশেরও সমান হয় না ।
একদিকে
সর্বতীর্থ, দক্ষিণাসহ সর্বযজ্ঞ, পুস্করে বাস, কুরুক্ষেত্র ও হিমাচলে বাস,
মেরুতুল্য সুবর্ণ দান। হে বৎস! অন্যদিকে সর্বদা কেশবপ্রিয় কার্তিক মাস ।

কার্তিকে শ্রীবিষ্ণুর উদ্দেশ্যে যা কিছু পুণ্য করা হয়। হে নারদ! তোমার নিকট সত্য বলছি, তা সকল অক্ষয় হয়।

হে
নারদ! হে বিপ্রেন্দ্র! যেমন নদীসমূহের, পর্বতসমূহের, হে বিপ্রর্ষে!
সমুদ্রসমূহের ক্ষয় জানা যায় না, সেই রকম হে ব্রহ্মণ্! হে মুনে! কার্তিক
মাসে যে যৎকিঞ্চিৎ পুণ্য করা যায় তার ক্ষয় নাই, এই রকম পাপেরও ক্ষয় নাই ।

কার্তিকের সমান মাস নাই, সত্যযুগের সমান যুগ নাই, বেদের সমান শাস্ত্র নাই । গঙ্গার সমান তীর্থ নাই ।

পদ্মপুরাণে কার্তিক মাহাত্ম্যে

দ্বাদশ
মাস মধ্যে কার্তিক মাস শ্রীকৃষ্ণ প্রিয়। তাতে অল্প উপায়ন দ্বারা তিনি
সম্যক্ পূজিত হয়ে বিষ্ণুলোক দান করেন, এই রকম আমি নিশ্চয় করেছি ।

যেমন দামোদর ভক্তবৎসল সর্বজন বিদিত, তার এই দামোদর মাস সেইরূপ ভক্তবৎসল; স্বল্প সেবাকেও বহু করে নেন।

দেহধারীগণের মধ্যে মানবদেহ দুর্লভ ও ক্ষণভঙ্গুর, তার মধ্যেও দুর্লভ কাল শ্রীহরিপ্রিয় কার্তিক মাস।

কার্তিকে দ্বীপদান দ্বারা এই পরমেশ্বর শ্রীহরি প্রীত হন, পরদত্ত দীপ প্রবোধন ফলেও শ্রীহরি সুগতি দান করেন ।

স্কন্দপুরাণে কার্তিক মাহাত্ম্যে -

এই জগতে ব্রতসমূহের ফল মাত্র এক জন্ম অনুগমন করে কিন্তু নাম। কার্তিকে ব্রতের ফল তজন্ম অনুগমন করে।

হে
বিপ্ৰেদ্ৰ। কার্তিক ব্রতে মথুরায় অক্রুর তীর্থে সম্পূর্ণ উপবাস করে ও
স্নান করে যে ফল প্রাপ্ত হয়, কার্তিকব্রতের নিয়ম শ্রবণ করেও সেই ফল
প্রাপ্ত হয়।

বারাণসীতে, কুরুক্ষেত্রে, নৈমিষারণ্যে, পুষ্করে ও অর্বুদতীর্থে গমন করে যে ফল লাভ হয়, কার্তিকে ব্রত করে সেই ফল লাভ হয়।

সর্বদা যজ্ঞসমূহ দ্বারা যজন না করেও পিতৃগণের শ্রাদ্ধ না করেও কার্তিকমাসে ব্রতদ্বারা বিষ্ণুধামে গমন করে ।

নিত্যভক্ষ্য দ্রব্যসমূহের মধ্যে কার্তিকে কিঞ্চিৎ নিয়ম সঙ্কোচ করেন করলে নিশ্চয়ই পবিত্র কৃষ্ণসারূপ্য প্রাপ্ত হয় ।

হে মুনিশাৰ্দ্দুল! কার্তিকে নিজশক্তি অনুসারে বিষ্ণুব্রত শাস্ত্রবিধিমত যিনি করেন, সংসার-মুক্তি তাঁর হস্তগত ।

কার্তিকে কর্মবিশেষের মাহাত্ম্য

স্কন্দপুরাণে–
হে দ্বিজোত্তম! কার্তিকে অন্নাদি দান, হোম, তপস্যা, জপ যা কিছু করলে তা অক্ষয় ফলপ্রদ বলে কথিত ।

মানবগণ কর্তৃক কার্তিকে বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে যা কিছু প্রদত্ত হয় তাই অক্ষয় ফল হয়, বিশেষতঃ অন্নন্দান ।

যিনি এক সম্বৎসর পূর্ণ নিত্য হোম অনুষ্ঠান করেন, কার্তিকে যিনি স্বস্তিক রচনা করে থাকেন তিনিও তার সমান ফল পান, এতে সন্দেহ নাই ।

যে মানবী কার্তিকে শ্রীভগবানের মন্দিরে মণ্ডল রচনা অর্থাৎ আল্পনা দেন, তিনি স্বর্গাস্থিতা হয়ে কপোতীর ন্যায় শোভিতা হন ।

কার্তিকে তিলদান, নদীতে স্নান, সৎকথা শ্রবণ, সাধুসেবন পলাশ পত্রে ভোজন সংসার মুক্তিপ্রদ । ,

কার্তিকমাসে অরুণোদয়ে যে মানব দামোদরের অগ্রে জাগরণ করে, হে বিপ্রেন্দ্র! তিনি সহস্র গাভীদানের ফল লাভ করেন ।

হে মহামুনে! কার্তিকে রাত্রির শেষ প্রহরে শ্রীবিষ্ণুর নিকট যিনি জাগরণ করেন, ভগবদ্ধাম লাভ তার করতলগত ।

হে মুনিশ্রেষ্ঠ! কৃষ্ণপ্রিয় কার্তিকমাসে পিতৃগণের উদ্দেশ্যে অন্নজল যাই দান করবে তাই অক্ষয় হয় ।

কার্তিকে শাস্ত্রালোচনার মাহাত্ম্য

স্কন্দপুরাণে
যে মানব কার্তিকমাস গীতা শাস্ত্রাভ্যাস দ্বারা যাপন করে, হে শ্রীনারদ! তার সংসারে পুনরাগমন দেখি না।

যে মানব কার্তিকে শ্রীবিষ্ণু মন্দির প্রদক্ষিণ করে সে পদে পদে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফলভাগী হয়।

যে মানব কার্তিকে শ্রীহরির সম্মুখে নৃত্য, গীত, বাদ্য ভক্তিসহ করে, সে অক্ষয়পদ বিষ্ণুধাম প্রাপ্ত হয়।

কার্তিকে যে মানব শ্রীহরির সহস্রনাম স্তোত্র এবং গজেন্দ্রমোক্ষণ পাঠ করে তার সংসারে পুনর্জন্ম লাভ হয় না ।

হে মহামুনে! কার্তিকে সর্বধর্ম পরিত্যাগ করে ভগবৎসম্মুখে পবিত্র শাস্ত্রব্যাখ্যা শ্রবণ কর্তব্য।

হে মুনিশাৰ্দ্দুল! কার্তিকে মঙ্গলার্থ বা লোভ বুদ্ধিতে যিনি হরিকথা কীর্তন করেন, তিনি শতকুল উদ্ধার করেন ।

কার্তিকে শ্রীমধুসূদন শাস্ত্রকথা আলাপ দ্বারা যেমন তুষ্ট হন, দানসমূহ, যজ্ঞসমূহ, গো-দান, হস্তিদানাাাদি দ্বারা সে রকম তুষ্ট হন না।

হে মুনিশ্রেষ্ঠ! কার্তিকে যিনি হরিকথা শ্রবণ করেন, তিনি শতকোটি জন্মের আপদসমূহ থেকে নিস্তার পান ।

হে মুনে! যিনি কার্তিকে যত্নসহ নিত্য শ্রীমদ্ভাগবতের একটি শ্লোকও পাঠ করেন, তিনি অষ্টাদশপুরাণ পাঠের ফল পান।

পদ্মপুরাণেও কার্তিকব্রত প্রসঙ্গে

কার্তিকে
যিনি ব্রহ্মচারী, ভূমিশায়ী, হবিষ্যভোজী, পলাশপত্রে ভোজনকারী,
শ্রীদামোদরের অর্চন করেন, তিনি সর্বপাপ মুক্ত হয়ে শ্রীবৈকুণ্ঠধামে
শ্রীহরির নিকট ভজনানন্দে পরিপূর্ণ বিষ্ণু সদৃশ আনন্দভোগ করেন।

পরিপূর্ণ কার্তিক মাসে প্রাতঃস্নানকারী, জিতেন্দ্রিয়, জপকারী, হবিষ্যভোজী ও বহিরিন্দ্রিয় সংযমকারী সর্বপাপ থেকে মুক্ত হয় ।

কার্তিকে প্রভু শ্রীহরি পূজিত হয়ে পূজকের সহস্র অপরাধ ও মহামহাপাতকসমূহ ক্ষমা করেন ।

পদ্মপুরাণে শ্রীকৃষ্ণ সত্যা সংবাদে–

কার্তিকে যে মানব স্নান নিশিজাগরণ, দীপদান, তুলসীবন পালন করেন, তারা শ্রীবিষ্ণুর সারূপ্য লাভ করেন ।

এইভাবে কার্তিকে তিনদিনও যাঁরা সেবা করেন, তাঁরা দেবগণেরও বন্দনীয়, আর যাঁরা আজন্ম ঐ সেবা করেন, তাঁদের আর কি বলব।

কার্তিকব্রতের অঙ্গসমূহ

পদ্মপুরাণে–
রাত্রিশেষে হরি জাগরণ, প্রাতঃস্নান, তুলসীবন সেবন, দীপদান, শেষে উৎসব উদযাপন- কার্তিকে এই সকল ব্রত ।

সম্পূর্ণ কার্তিক মাসে ব্রতকারী পাঁচটি ব্রত অঙ্গ পালন দ্বারা ভুক্তি মুক্তি ফল প্রাপ্ত হন ।

কার্তিকে হরি জাগরণ বিষ্ণুমন্দিরে, শিবালয়ে, অশ্বত্থমূলে বা তুলসীবনে করবে ।

কার্তিক-ব্রতী
বিপদাপন্ন হয়ে স্নানের জন্য যখন জল না পাবেন,অথবা ব্যাধিবশতঃ স্নানে
অসমর্থ হলে শ্রীবিষ্ণুর নাম দ্বারা মন্ত্র স্নান করবেন।

ব্রতকারী হয়ে যিনি উদযাপন বিধি করতে অসমর্থ, তিনি ব্রত সংপূর্তির জন্য যথাশক্তি ব্রাহ্মণগণকে ভক্তিপূর্বক ভোজন করাবেন ।

কার্তিকে দীপদানে অসমর্থ হলে পরের প্রদত্ত দীপকে উদ্দীপিত করবে অথবা যত্নসহকারে বাতাসাদি হতে পর দীপকে রক্ষা করবে।

তুলসী
সেবার অভাবে বৈষ্ণব দ্বিজকে পূজা করবেন, ব্রতী এ সকলের অভাবে ব্রত
সম্পূর্ণের জন্য ব্রাহ্মণগণের, গাভীগণের বা অশ্বত্থ ও বটবৃক্ষের সেবা করবে ।

স্কন্দপুরাণে কার্তিক মাহাত্ম্যে–
কার্তিকে নিমেষাৰ্দ্ধকাল দীপদান ফলে সহস্রকোটিকল্প অর্জিত বহু পাপ বিলুপ্ত হয়।
হে
বিপেন্দ্ৰ! কার্তিকে কেশবপ্রিয় দীপদানের মাহাত্ম্য শ্রবণ কর, ক দীপদান
দ্বারা পৃথিবীতে আর পুনর্জন্ম হয় না।কুরুক্ষেত্রে সূর্যগ্রহণে,
চন্দ্রগ্রহণে নর্মদাতে যে স্নানফল, কার্তিকে দীপদানে তার কোটিগুণ ফল হয় ।
১০২। কার্তিকে যার দীপ, ঘৃত বা তিলতৈল দ্বারা প্রজ্জ্বলিত হয়। হে মুনিবর
তার অশ্বমেধ যজ্ঞে কি ফল? ১০৩। কার্তিকে জনার্দনে দীপদান ফলে মন্ত্রহীন,
ক্রিয়াহীন, শৌচহীন সকলই সম্পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় ।
কার্তিকে
কেশবের অগ্রে যিনি দীপ দান করেন, তার সর্বযজ্ঞ দ্বারা যজন ও সর্বতীর্থে
স্নান হয় । কার্তিকে কেশবের যে পর্যন্ত দীপজ্যোতি প্রজ্জ্বলিত না হয়, সে
পর্যন্ত পুণ্যসমূহ স্বর্গে, মর্ত্যে ও রসাতলে গর্জন করে । হে দ্বিজ!
পুরাকালীয় পিতৃগণ গাথা কীর্তিত হতে শোনা যায় আমাদের কুলে পৃথিবীতে
পিতৃভক্ত পুত্র জন্মগ্রহণ করবে, যে পুত্র কার্তিকে কেশবকে দীপদান দ্বারা
প্রসন্ন করবে এবং চক্রপাণির প্রসাদে আমরা নিশ্চয়ই মুক্তি পাব । মেরু ও
মন্দর পর্বত সদৃশ অশেষ পাপসমূহ করলেও কার্তিকে দীপদান প্রভাবে সর্বপাপ দগ্ধ
হয়- এতে সন্দেহ নাই । কার্তিকে বাসুদেবের সম্মুখে গৃহে বা আয়তনে দীপদানে
মহাফল বৈকুণ্ঠলোক প্রাপ্ত হয় । যিনি কার্তিক মাসে মধূসুদনের অগ্রে দীপদান
করেছেন, তিনিই মনুষ্যলোকে জন্ম সার্থক করেছেন। তিনি ধন্য, তিনি কীর্তিমান ।
কার্তিকে অতি অল্পকাল মাত্র দীপদানের যে তা দ্বারা বা তীর্থশত স্নান
দ্বারা প্রাপ্য নয় ।য়পর যে ফল, তা যজ্ঞশত সর্বপ্রকার অনুষ্ঠানহীন, আর
সর্বপাপরত হলেও কার্তিকে দীপদান প্রভাবে পবিত্র হয়, এতে সন্দেহ নেই । হে
নারদ! ত্রিভুবনে এমন কোন পাপ নাই, যা কার্তিকে শ্রীকেশবের অগ্রে দীপদান
দ্বারা শোধন করতে পারে না। কার্তিকে শ্রীবাসুদেবের অগ্রে দীপদান করে সকল
বাধা মুক্ত হয়ে নিত্যধাম প্রাপ্ত হয়। যিনি কার্তিক মাসে কর্পূর দ্বারা
দীপ প্রজ্জ্বলিত করেন, বিশেষতঃ দ্বাদশীতে তার পুণ্য তোমাকে বলছি । হে নারদ!
তার কুলে যারা জন্মেছে এবং যারা জন্মাবে, আর যারা বহু অতীতে যাদের সংখ্যা
নাই। তারা চক্রপাণি শ্রীকৃষ্ণের প্রসাদে দেবলোকে ইচ্ছামতো সুদীর্ঘকাল
ক্রীড়া করে সকলে মুক্তিলাভ করবে।
হে
বিপ্ৰেদ্ৰ! দ্যূতক্রীড়া ছলে কার্তিকে শ্রীহরিমন্দির যে ব্যক্তি আলোকিত
করে, হে মহাভাগ! সে তার সপ্তপুরুষ পবিত্র করে। পর্যন্ত কুলকে কার্তিকে
বৈষ্ণবগৃহে যে মানব দীপদান করে, তারও সর্বদা ধন, পুত্র, যশ, কীর্তি হয় ।
যেমন মন্থন দ্বারা সর্বকোষ্ঠে অগ্নি দৃষ্ট হন, সেইরূপ দীপদান প্রভাবে ধর্ম
সর্বত্র দৃশ্য হন- এতে সংশয় নাই ।হে বিপ্ৰেদ্ৰ! নির্ধন ব্যক্তিরও
আত্মবিক্রয় করে কার্তিকে পূর্ণিমা যাবৎ দীপদান কর্তব্য । হে মুনে!
কার্তিকে বিষ্ণুমন্দিরে যে মূঢ়ব্যক্তি দীপদান না করে সে বৈষ্ণব মধ্যে
স্বীকৃত নয় ।
পদ্মপুরাণে- কার্তিকে শ্রীহরিমন্দিরে যিনি অখণ্ড দীপ দান করেন, তিনি শ্রীহরিধামে দিব্যজ্যোতিঃ শ্রেষ্ঠ বিমানে ক্রীড়া করেন ।

শিখার দীপ মাহাত্ম্য–

স্কন্দপুরাণে–
শ্রীমন্দিরে কলসের উপরে যখন দীপ উজ্জ্বল হয়, হে মুনিশ্রেষ্ঠ! তখন পাপরাশি দ্রবীভূত হয়
যে
মানবগণ ব্রাহ্মণগণকে সমুদ্রবেষ্টিত পৃথিবী দান করে, তার ফল শ্রীহরি
মন্দিরের চূড়ায় প্রদত্ত দীপ দানের এক কলার সমানও নয়। যে ব্যক্তি সবৎসা
দুগ্ধবতী কোটি ধেনু দান করে, তার ফল শ্রীহরিমন্দিরের চূড়ায় প্রদত্ত দীপের
ফলের এক কলার সমান নয়। হে মহামুনে! বৈষ্ণবগণের উদ্দেশ্যে সর্বস্ব দান করে
যে ফল, শ্রীহরিমন্দিরের উপরে প্রদত্ত দীপদানের এক কলার সমান নয়। হে
মহামুনে! শ্রীহরিমন্দিরের শিখরের উপরে ও মধ্যে প্রদত্ত প্রদীপ যিনি মূল্য
দ্বারা ক্রয় করেছেন, তিনি নিজ শতকুল করেন। উদ্ধার কার্তিকে শ্রীকেশবদেবের
আলোকদীপ্ত উচ্চতর প্রাসাদ মহাভক্তিসহ যারা দর্শন করেন, তাদের কুলে কেউ
নরকবাসী হয় না। বিষ্ণুদীপ প্রদানকারীকে স্বর্গে দেবগণ নিরীক্ষণ করতে থাকেন
যে, কখন এই দীপদানকারী ভক্তসহ আমাদের মিলন হবে।হে মুনিশ্রেষ্ঠ! কার্তিকে
পূর্ণিমা পর্যন্ত শ্রীহরিমন্দিরের উপরে যিনি দীপদান করেন, তার পক্ষে
ইন্দ্রপদ দুর্লভ নয়।
মন্দিরোপরি দীপমালা মাহাত্ম্যে–

স্কন্দপুরাণে কার্তিক-মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে–
শ্রীহরিমন্দিরের
বাহিরে ও অভ্যন্তরে দীপমালা যিনি রচনা করেন, তিনি শ্রীবিষ্ণুর পার্ষদ ।
যিনি শ্রীহরিমন্দিরে দীপমালা রচনা করেন, তার বংশে উদ্ভুত লক্ষপুরুষের নরক
গমন হয় না । হে মুনে! শ্রীবিষ্ণুমন্দিরের বাহির-ভেতর যিনি দীপযুক্ত করেন,
তাঁর পরমধাম গমনকালে পথে দেবগণ দীপ হাতে অপেক্ষা করতে থাকে ।
ভবিষ্যপুরাণেও

যিনি
কার্তিকমাসে বিশেষত উত্থান একাদশী ও দ্বাদশীতে অতি সুন্দর দীপমালিকা রচনা
করেন, তিনি দশ সহস্র সূর্যতেজ সদৃশ জ্যোতিদ্বারা দশদিক্ আলোকিত করে
জ্যোতির্ময় বিমানে জগৎ আলোকিত করে বিষ্ণুলোকে গমন করেন এবং যত সংখ্যা
প্রদীপ ঘৃতপূর্ণ করে শ্রীভগবার্নের জাগরণ করেন, তত সহস্রবর্ষ
শ্রীবিষ্ণুলোকে বিরাজ করেন ।
আকাশদীপ মাহাত্ম্য–

যে
মানব কার্তিকে উচ্চ আকাশে দীপ দান করেন, তিনি সর্বকুল উদ্ধার করে
বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হন । যে মানব কার্তিকে শ্রীবিষ্ণুর উদ্দেশ্যে আকাশে ও
জলে দীপ দান করেন, তার যে ফল তা শ্রবণ করুন । হে বিপ্রগণ- এইরূপভাবে যিনি
দীপদান করেন, তিনি ধনধান্য, সমৃদ্ধিশালী, পুত্রবান্ ও ঐশ্বর্যশালী হন, তাঁর
নয়নযুগল সুশোভন হয় এবং তিনি বিদ্বান হয়ে জন্মগ্রহণ করেন । কার্তিকমাসে
বিপ্রগৃহে যিনি দীপদান করেন, মনীষিগণ বলেন তাঁর অগ্নিষ্টোম যজ্ঞের ফল হয়।
চৌরাস্তায়, রাজপথে, ব্রাহ্মণ গৃহে, বৃক্ষমূলে, গোষ্ঠে, মাঠে, অরণ্যেও
দীপদানে সর্বত্র মহাফল প্রাপ্ত হবে।
আরম্ভ কাল নির্ণয়–

শ্রীকৃষ্ণ সত্যভামা সংবাদে, কার্তিকে মাহাত্ম্যে–
আশ্বিনমাসের
যে শুক্লা একাদশী হবে বা পূর্ণিমাতে, নিরলসভাবে কার্তিক মাসের ব্রতসমূহ ঐ
দিন হতে আরম্ভ করবে। নিত্য শ্রীভগবানকে জাগরণ করাবার জন্য রাত্রির শেষ
প্রহরে উঠে শুচি হয়ে শ্রীভগবানকে জাগিয়ে অনন্তর স্তোত্রপাঠ সহ প্রভুর
আরতি করবে । বৈষ্ণববৃন্দ সহ আনন্দে বৈষ্ণবধর্মসমূহ শ্রবণ করে গীতবাদ্যাদিসহ
প্রাতঃকালে প্রভু দামোদরদেবকে আরতি করবে। নদী আদি জলাশয়ে গিয়ে
আচমনপূর্বক সংকল্প করবে। প্রভুকে প্রার্থনা জানিয়ে পরে তাঁকে যথাবিধি
অর্ঘ্যদান করবে।
সংকল্পমন্ত্র- হে জনার্দন! হে দেবেশ! হে দামোদর! শ্রীরাধিকাসহ আপনার প্রীতির জন্য কার্তিকে আমি প্রাতঃস্নান করব।

প্রার্থনা মন্ত্র- হে দেবেশ! তোমার ধ্যানসহ এই জলে আমি স্নান করতে উদ্যত, হে দামোদর! তোমার প্রসাদে আমার পাপ বিনাশ যাক।

অর্ঘ্যমন্ত্র- আমি কার্তিক মাসে বিধিবৎ স্নানকারী, হে দামোদর! হে
দনুজেন্দ্ৰনিসূদন আমার প্রদত্ত অর্ঘ্য গ্রহণ কর । হে হরে। নিত্যনৈমিত্তিক
সমস্ত পাপশোষণ করে কার্তিক মাসে আমার প্রদত্ত অর্ঘ্য রাধিকাসহ গ্রহণ কর।
নিজদেহকে তিলকদ্বারা লেপন করে শ্রীকৃষ্ণ নারায়াণাদি নাম উচ্চারণ পূর্বক
স্নান করে নিজ বিধিমতে সন্ধ্যা উপাসনা করে গৃহে আগমন করবে। দেবমন্দির অগ্রে
মার্জনা করে স্বস্তিকমণ্ডল রচনা করে প্রভুকে তুলসী, মালতী, পদ্ম, অগস্ত
(বক) পুষ্পাদি দ্বারা অর্চন করবে। নিত্য বৈষ্ণব সঙ্গে ভগবৎ কথা সেবন,
অহোরাত্র ঘৃত, দীপ বা তিল দ্বারা অর্চন করবে। কার্তিক মাসে বিশেষ বিশেষ
নৈবেদ্য অর্পন করবে, সেই রকম অষ্টোত্তর শত প্রণাম, যথাশক্তি একবার আহারাদি
ব্রত আচরণ করবেন।

পদ্মপুরাণে কার্তিক প্রসঙ্গে

প্রাতঃকালে
উত্থান শৌচাদি করে পবিত্র জলাশয়ে গিয়ে বিধিব স্নান, অতপর দামোদর অর্চন
কর্তব্য। বৈষ্ণববৃন্দসহ কৃষ্ণকথা আলাপ দ্বারা দিন যাপন, কার্তিক মাসে ব্রত
সংকল্প পালন । আশ্বিনে শুক্লপক্ষের হরিবাসরে আরম্ভ, অথবা পৌর্ণমাসি হতে
অথবা তুলারাশি আগমে সংক্রান্তিতে আরম্ভ । শ্রীবিষ্ণুর নিকট অখণ্ড দীপদান,
দেবালয়ে, তুলসীতে, আকাশে উত্তম দীপ দান করবেন। কার্তিকব্রতে মানব
শ্রীদামোদরের প্রীতির জন্য রৌপ্য, দীপ, স্বর্ণদীপ, মুক্তাফলাদি দান করবেন।
কার্তিকব্রতে বর্জনীয় দ্রব্যসকল–

পদ্মপুরাণে ব্রহ্ম-নারদ সংবাদে–
কার্তিক
মাসে রাজমাষ (বরবটি) ও শিমসমূহ ভক্ষণ করলে ,হে মুনিবর কল্পকাল নরকবাসী
হয়। কার্তিক মাসে যে ব্যক্তি কলমী শাক, পটল, বেগুন, আচার (চাটনি) ত্যাগ না
করে, তাকে কল্পকাল নরকবাসী হতে হয় । ধর্মাত্মা ব্যক্তি কার্তিক মাসে
ভক্ষণ করবেন না । পরান্ন, পরশয্যা, পরধন, পরস্ত্রী-কার্তিকে প্রাজ্ঞ
ব্যক্তি বিশেষভাবে বর্জন করবেন। মৎস্য ও মাংস কার্তিক মাসে তৈল মর্দন,
শয্যা, পরান্ন ও কাসার পাত্রে ভোজন ত্যাগ করলে পরিপূর্ণ ব্রতী হওয়া যায় ।
কার্তিক মাস উপস্থিত হলে পরান্ন দর্শন করে যে মানব বর্জন করে, প্রতিদিন
কৃচ্ছব্রতের ফল প্রাপ্ত হন । কার্তিকে তৈল, মধু, কাসার পাত্র ও পঁচা বাসি
অম্ল দ্রব্য, আচার ইত্যাদি বর্জন করবে।
হে সুভ্রু। মৎস্য, কচ্ছপ মাংস ঔষধ হিসেবেও অন্য মাংস ভক্ষণ করবে না। কার্তিকে মাংস ভক্ষণে চণ্ডাল হয়।
কার্তিক মাসে কি কি খেতে নেই এবং কেন


পদ্মপুরাণের স্বর্গখন্ডের ৪৭ নং অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-
১) কার্তিক মাসে মাংসভোজনে চিররোগী ও বহুপাপের ভাগী হতে হয়।
২) মিষ্টিকুমড়া ভক্ষণে ধনহানী হয়
৩) পটোল ভক্ষণে বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
৪) নিম ভক্ষণে তীর্যক যোনী (পশুযোনী) প্রাপ্ত হয়
৫) তাল ভক্ষণে শরীর নাশ হয়।
৬) নারিকেল ভক্ষণে মূর্খতা বৃদ্ধি পায়
৭) বর্তুলাকার লাউ ভক্ষণ গোমাংসতুল্য
৮) কলিন্দ গোবধ তুল্য
৯) শিম ভক্ষণে পাপ হয়
১০) পূতিকা ব্রহ্মঘাতিকা
১১) শ্বেত বেগুণ ভক্ষণে পুত্রনাশ
এছাড়াও
কার্তিক মাস ব্রতীগণ মাষ, মধু, রাজমাস, জাম্বুরা, মসূর, পান্তা অন্ন,
মাছ-মাংস-ডিম, মাশরুম(ছত্রাক), ঈস্ট, সজিনা, কাংসপাত্রে ভোজন ত্যাগ করবেন।
শ্রীরাধাদামোদর পূজাবিধি–

পদ্মপুরাণে কার্তিকব্রতে–
শ্রীকৃষ্ণের
প্রিয়তমা, গোপিকাগণ মধ্যে শ্রেষ্ঠা, কার্তিকে শ্রীদামোদর নিকটে
শ্রীরাধিকার পূজা করা উচিত ব্রজবাসী ব্রাহ্মণ এবং তৎপত্নীকে বস্তু, অলঙ্কার
ও ভোজনাদ দান দ্বারা পূজা করা কর্তব্য। হে বিপ্লগণ। কার্তিকে শ্রীরাধিকার
সন্তোষের জন্য যিনি শ্রীরাধিকা প্রতিমাকে পূজা করে তার প্রতি শ্রীমান্
দামোদর হরি তুষ্ট হন। কার্তিকে প্রতিদিন ‘দামোদরাষ্টকম্' নামক স্তোত্র
(সত্যব্রত মুনি কথিত) পাঠ করবে, তা দামোদরের অর্চন স্বরূপ ও শ্রীদামোদরের
আকর্ষণকারী ।
দামোদর ব্রতের (নিয়ম সেবা) সংকল্প:

‘হৃষীকেনং
হৃষীকেশ সেবনং ভক্তিরুচ্যতে' সর্বান্তকরণে ইন্দ্রিয়সমূহ দ্বারা
ইন্দ্ৰিয়াধিপতি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের তথা সেবাই ভক্তি। কিভাবে সময়ের
সর্বোচ্চ উপযোগ করে ভগবানের সেবা করা যায় সেটাই দামোদর ব্রতের সংকল্প
হওয়া উচিত। তবে সর্বাগ্রে এটা খেয়াল রাখা উচিত যে, নিয়মগুলো (সংকল্প)
যেন লোকদেখানো বা শুধুই নিয়মমাত্র থেকে না যায়। ব্রতের সময়সীমা পর্যন্ত
যেন সেগুলো পালনযোগ্য হয় সেটাও বিবেচনা করতে হবে। ইষ্টদেবের
প্রীতিবিধানার্থ নানাবিধ ব্রতনিয়ম বা সংকল্প করা যেতে পারে। যেমন–
১ । নিত্য মঙ্গলারতি দর্শন ও গুরুপূজায় অংশগ্রহণ ।
২। নিত্য ভাগবত ক্লাসে যোগদান ।
৩। হবিষ্যান্ন গ্রহণ ।
৪। সন্ধ্যায় আরতিতে অংশগ্রহণ ও দামোদরের জন্য দীপদান ।
৫। বেশি সংখ্যক হরিনাম জপ
৬ । সকাল-সন্ধ্যা প্রতিদিন তুলসী পূজা ও পরিক্রমা ।
৭। মন্দির পরিক্রমা।
৮। বেশি সংখ্যক গ্রন্থ প্রচার ।
৯ । প্রতিদিন 'দামোদরাষ্টকং' পাঠ ।
১০ । ‘লীলাপুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ’, ‘শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ’, ‘শ্রীমদভাগবত' প্রভৃতি গ্রন্থাদি পাঠ।
দামোদর মাসে ব্রত পালনের বিধিসমূহ


দামোদর মাসের মাহাত্ম্য-

১. যে কোনও দেশে কার্তিকে স্নান ও দান বিশেষতঃ পূজাতে তা অগ্নিহোত্র সমফল।
২.
কুরুক্ষেত্রে কোটিগুণ ফল, গঙ্গায়ও তৎসম ফল, তার থকে অধিক পুস্করে, হে
ভার্গব! দ্বারকায়ও অধিক। কার্তিক মাসে স্নানও শ্রীভগবৎপূজন
শ্রীকৃষ্ণসালোক্যপ্রদ।
৩. হে মুনিগণ! মথুরা ব্যতীত, অন্যপুরী সকল তার সমান, যেহেতু মথুরা-মণ্ডলেই শ্রীহরির দামোদর লীলা প্রকট হয়েছিল।
৪. অতএব কার্তিকে মথুরায় শ্রীগোবিন্দের প্রীতিবর্দ্ধন, কার্তিকে মথুরাতেই চরম ফল প্রাপ্তি হয়।
৫. যেমন মাঘে প্রয়াগতীর্থ, বৈশাখে জাহ্নবী, কার্তিকে মথুরা সেবা তা থেকে উৎকর্ষ আর নাই।
৬. কার্তিকে মথুরাতে মানবগণ স্নান করে দামোদরের পূজা করলে তারা কৃষ্ণসারূপ্য প্রাপ্ত জানবেন, এ বিষয়ে বিচার কর্তব্য নয়।
৭. হে বিপ্র! এই জগতে মানবগণের পক্ষে মথুরাতে কার্তিক মাস দুর্লভ। যেখানে পূজিত হয়ে দামোদর নিজরূপ ভক্তগণকে প্রদান করেন।
৮.
শ্রীহরি অর্চিত হয়ে অন্যত্র সেবিত ভক্তগণকে ভুক্তি মুক্তি দান করেন, এই
শ্রীহরি কিন্ত ভক্তি দান করেন না, যেহেতু শ্রীহরির বশ্যকারী।
৯. কার্তিকে মথুরা-মণ্ডলে একবারও শ্রীদামোদরের পূজা থেকে সেই ভক্তি কিন্তু অনায়াসে মানবগণ শ্রীহরি হতে লাভ করে।
১০. শ্রীদামোদরদেব কার্তিকে মথুরা-মণ্ডলে মন্ত্র-দ্রব-বিহীন পূজাকেও স্বীকার করেন।
১১.
যে পাপের মরণান্তেই বিনিষ্কৃতি হয় তার শুদ্ধির জন্য কার্তিক মাসে
মথুরাপুরীতে হরিপূজাই সুনিশ্চয়, এই প্রায়শ্চিত্ত শাস্ত্রে উক্ত হয়েছেন।
১২.
বালক ধ্রুব কার্তিকে মথুরা-মণ্ডলে শ্রীদামোদরের পূজা ও ধ্যান দ্বারা
যোগিগণ দুর্লভ শ্রীভগবানকে শীঘ্র দর্শন প্রাপ্ত হয়েছিলেন। পৃথিবীতে মথুরা
সুলভা, সেই রকম প্রতিবছর কার্তিক মাস সুলভ, তথাপি এই জগতে মূঢ় মানবগণ
ভবসমুদ্রে জন্ম-মৃত্যু প্রবাহে ভাসছে।
১৩.
যজ্ঞসমূহের কি প্রয়োজন, তপস্যার কি প্রয়োজন, অন্য তীর্থসমূহের সেবাতে কি
প্রয়োজন? যদি কার্তিকে মথুরা-মণ্ডলে শ্রীরাধিকা প্রিয় শ্রীদামোদরের অর্চিত
হন।
১৪. সকল পবিত্র তীর্থ, নদ-নদী, সরোবর কার্তিক মাসে এই মথুরা-মণ্ডলে সকলেই বাস করেন।
১৫. কার্তিকে কেশবদেবের জন্মস্থানে যে মানবগণ একবার প্রবিষ্ট হয়, তারা পরম অব্যয় শ্রীকৃষ্ণকে প্রাপ্ত হন।
১৬.
কার্তিক মাসে মথুরাতে হরিপূজাকের উপহার উদ্দেশ্যে হরিপূজা দ্বারা দুর্লভ
পদ প্রাপ্ত হওয়া যায়, তখন ভক্তিমান হয়ে পূজা করলে যে কি ফল, তার আর কি বলব।
কার্তিক মাসে ব্রত পালনের বর্জনীয় দ্রব্যসমূহ 


পদ্মপুরাণে ব্রহ্ম-নারদ সংবাদে বলা হচ্ছে-
১. কার্তিক মাসে রাজমাষ (বরবটি) ও শিমসমূহ ভক্ষণ করলে, হে মুনিবর কল্পকাল (১ হাজার চতুর্যুগ) নরকাবাসী হয়।
২. কার্তিক মাসে যে ব্যক্তি কলমী শাক, পটল, বেগুন, আচার (চাটনি) ত্যাগ না করে, তাকে কল্পকাল (১ হাজার চতুর্যুগ) নরকবাসী হতে হয়।
৩. ধর্মাত্মা ব্যক্তি কার্তিক মাসে মৎস্য ও মাংস ভক্ষণ করবেন না।
৪. পরান্ন, পরশয্যা, পরধন, পরস্ত্রী-কার্তিককে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি বিশেষভাবে বর্জন করবেন।
৫. কার্তিক মাসে তৈল মর্দন, শয্যা, পরান্ন ও কাসার পাত্রে ভোজন ত্যাগ করলে পরিপূর্ণ ব্রতী হওয়া যায়।
৬. কার্তিক মাস উপস্থিত হলে পরান্ন দর্শন করে যে মানব বর্জন করে, প্রতিদিন কৃচ্ছব্রতের ফল প্রাপ্ত হন।
পদ্মপুরাণে শ্রীরুক্মাঙ্গদ-মোহিনী-সংবাদে বলা হচ্ছে-
৭. কার্তিকে তৈল, মধু, কাসার পাত্র ও পঁচা বাসি অম্ল দ্রব্য, আচার ইত্যাদি বর্জন করবে।
৮. হে সুভ্রু! মৎস্য, কচ্ছপ মাংস ঔষধ হিসেবেও অন্য মাংস ভক্ষণ করবে না। কার্তিকে মাংস ভক্ষণে চণ্ডাল হয়।
কার্তিক-কৃত্য-বিধি-

১. আশ্বিন মাসের যে শুক্লা একাদশী হবে বা পূর্ণিমাতে, নিরলসভাবে কার্তিক মাসের ব্রতসমূহ ঐ দিন হতে আরম্ভ করবে।
২. নিত্য শ্রীভগবানকে জাগরণ করাবার জন্য রাত্রির শেষ প্রহরে উঠে শুচি হয়ে শ্রীভগবানকে জাগিয়ে অনন্তর স্তোত্র পাঠসহ প্রভুর আরতি করবে।
৩. বৈষ্ণববৃন্দসহ আনন্দে বৈষ্ণবধর্মসমূহ শ্রবণ করে গীতবাদ্যাদিসহ প্রাতঃকালে প্রভু দামোদরদেবকে আরতি করবে।
৪. নদী আদি জলাশয়ে গিয়ে আচমনপূর্বক সংকল্প করবে। প্রভুকে প্রার্থনা জানিয়ে পরে তাঁকে যথাবিধি অর্ঘ্যদান করবে।
৫. সংকল্পমন্ত্র- হে জনার্দন! হে দেবেশ! হে দামোদর! শ্রীরাধিকাসহ আপনার প্রীতির জন্য কার্তিকে আমি প্রাতঃস্নান করব।
৬. প্রার্থনা মন্ত্র- হে দেবেশ! তোমার ধ্যানসহ এই জলে আমি স্নান করতে উদ্যত, হে দামোদর! তোমার প্রসাদে আমার পাপ বিনাশ যাক।
৭. অর্ঘ্যমন্ত্র-আমি কার্তিক মাসে বিধিবৎ স্নানকারী, হে দামোদর! হে দনুজেন্দ্রনিসূদন আমার প্রদত্ত অর্ঘ্য গ্রহণ কর।
৮. নিজদেহকে তিলকদ্বারা লেপন করে শ্রীকৃষ্ণ নারায়াণাদি নাম উচ্চারণ পূর্বক স্নান করে নিজ বিধিমতে সন্ধ্যা উপাসনা করে গৃহে আগমন করবে।
৯. দেবমন্দির অগ্রে মার্জনা করে স্বস্তিকমণ্ডল রচনা করে প্রভুকে তুলসী, মালতী, পদ্ম, অগস্ত (বক) পষ্পাদি দ্বারা অর্চনা করবে।
১০. নিত্য বৈষ্ণব সঙ্গে ভগবৎ কথা সেবন, অহোরাত্র ঘৃত, দীপ বা তিল দ্বারা অর্চন করবে।
১১. কার্তিক মাসে বিশেষ বিশেষ নৈবেদ্য অর্পন করবে, সেই রকম অষ্টোত্তর শত প্রণাম, যথাশক্তি একবার আহারাদি ব্রত আচরণ করবেন।
পদ্মপুরাণে কার্তিক মাস প্রসঙ্গে-

১২. প্রাতঃকালে উত্থান শৌচাদি করে পবিত্র জলাশয়ে গিয়ে বিধিবৎ স্নান, অতপর দামোদর অর্চন কর্তব্য।
১৩. কার্তিক ব্রতধারী মৌন অবলম্বনে ভোজন, ঘৃত দ্বারা বা তিল তৈল দ্বারা দীপাদান কর্তব্য।
১৪. বৈষ্ণববৃন্দসহ কৃষ্ণকথা আলাপ দ্বারা দিন যাপন, কার্তিক মাসে ব্রত সংকল্প পালন।
১৫. আশ্বিনে শুক্লপক্ষের হরিবাসরে আরম্ভ, অথবা পৌর্ণমাসি হতে অথবা তুলারাশি আগমে সংক্রান্তিতে আরম্ভ।
১৬. শ্রীবিষ্ণুর নিকট অখণ্ড দীপদান, দেবালয়ে, তুলসীতে, আকাশে উত্তম দীপ দান করবেন।
১৭. হে ভাবিনি! কার্তিকমাসে কার্তিকব্রত গৃহে করবে না, বিশেষতঃ তীর্থে কার্তিকব্রত সর্বপ্রযত্নে করবে।
শ্রীরাধাদামোদর-পূজাবিধি-

১. শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়তমা, পোপিকাগণ মধ্যে শ্রেষ্ঠা, কার্তিকে শ্রীদামোদর নিকটে শ্রীরাধিকার পূজা করা উচিত।
২. ব্রজবাসী ব্রাহ্মণ এবং তৎপত্নীকে বস্ত্র, অলঙ্কার ও ভোজনাদি দান দ্বারা পূজা করা কর্তব্য।
৩. হে বিপ্রগণ! কার্তিকে শ্রীরাধিকার সন্তোষের জন্য যিনি শ্রীরাধিকা প্রতিমাকে পূজা করে তার প্রতি শ্রীমান্ দামোদর হরি তুষ্ট হন।
৪.
কার্তিকে প্রতিদিন ‘দামোদরাষ্টকম্’ নামক স্তোত্র (সত্যব্রত মুনি কথিত) পাঠ
করবে, তা দামোদরের অর্চন স্বরূপ ও শ্রীদামোদরের আকর্ষণকারী।
দীপদান’ এবং ‘আকাশ দীপ’ এর মহিমা


স্কন্দপুরাণে
পূর্বকালে দ্রাবিড়দেশে বুদ্ধ নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিল
খুবই দুষ্টা প্রকৃতির এবং দুরাচার সম্পন্না। ঐ স্ত্রীর সংসর্গে থাকার ফলে
ব্রাহ্মণের আয়ু ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হলেন। পতির মৃত্যুর
পরেও ঐ স্ত্রীলোকটি আরও বিশেষভাবে ব্যভিচারে লিপ্ত হলো। এমনকি লোকনিন্দার
ভয় না করে সে নির্লজ্জের মতো ব্যবহার করতে লাগল। তার কোনো পুত্র বা ভাই ছিল
না। সে সর্বদাই ভিক্ষার অন্ন ভোজন করত। নিজের হাতে প্রস্তুত না করে
সর্বদাই ভিক্ষার অন্ন ভোজন করত। নিজের হাতে প্রস্তুত না করে সর্বদাই পরের
বাড়ি থেকে ভিক্ষা করে বাসি অন্ন খেত এবং অনেক সময় অপরের বাড়িতে রান্না করতে
যেত।
তীর্থযাত্রা আদি থেকে সর্বদাই দুরে থাকত। সে কখনও কোনো ভালো কথায় কর্ণপাত করত না।
একদিন
এক বিদ্ধান তীর্থযাত্রী ব্রাহ্মণ তার গৃহে আগমন করল। যার নাম ছিল কুৎস।
তাকে (ঐ স্ত্রীকে) ব্যভিচারে আসক্ত দেখে সেই ব্রহ্মর্ষি কুৎস বললেন- ওরে
মুর্খ নারী! মনোযোগে সহকারে আমার কথা শ্রবণ কর। পৃথ্বি আদি পঞ্চভূত দ্বারা
তৈরী এই রক্তমাংসের শরীর, যা কেবল দুঃখেরই কারণ, তুই তাকে যত্ন করছিস? এই
দেহ জলের বুদবুদের মতো, একদিন যা অবশ্যই বিনষ্ট হবে। এই অনিত্য শরীরকে যদি
তুই নিজ বলে মানিস্ তাহলে নিজের বিচার পূর্বক এই মোহ পরিত্যাগ কর। ভগবান
বিষ্ণুকে স্মরণ কর এবং তাঁর লীলাকাহিনী শ্রবণ কর। এখন কার্তিক মাস আগত হবে,
তখন ভগবান দামোদরের প্রীতি বিধানের জন্য, স্নান, দান আদি কর্ম করে গৃহে বা
মন্দিরে বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে দীপ নিবেদন করে শ্রীবিষ্ণুকে পরিক্রমা করবে এবং
তাঁকে প্রণাম করবে। এই ব্রত বিধবা এবং সৌভাগ্যবতী নারী উভয়েরই অবশ্য
পালনীয়। যার ফলে সমস্ত প্রকারের পাপের শাস্তি তথা সকল উপদ্রব নষ্ট হয়।
কার্তিক
মাসে দীপদান নিশ্চিতরূপে ভগবান বিষ্ণুর প্রীতি বর্ধন করে। এই কথা বলে
ব্রাহ্মণ কুৎস অপর একটি গৃহে গমন করলেন। তখন ঐ ব্রাহ্মণী ব্রহ্মর্ষি কুৎসের
এই রকম উপদেশ শ্রবণ করে নিজ কর্মের জন্য অনুতাপ করতে লাগল এবং সে স্থির
করল যে সে অবশ্যই কার্তিক মাসে এই ব্রত পালন করবে।
তারপর
যখন কার্তিক মাস আগত হলো তখন সে পুরো মাস সূর্যোদয়ের সময় প্রাতঃস্নান তথা
বিষ্ণুকে দীপদান সহ নিষ্ঠা সহকারে এই ব্রত পালন করল। তারপর কিছুকাল বাদে
আয়ু শেষ হলে তার মৃত্যু হলো। তখন সে স্বর্গলোকে গমন করল এবং পরে মুক্তি লাভ
করল। সে সমস্ত মানুষ কার্তিক ব্রত পালন ও দীপদান আদি সম্পন্ন করে তারা যদি
এই ইতিহাস শ্রবণ করে তাহলে তারাও মোক্ষ লাভ করে।
ব্রহ্মা
এরপর বললেন- নারদ! এখন আকাশ দীপের মহিমা শ্রবণ কর। কার্তিক মাস আগত হলে
যিনি নিয়মিত ব্রাহ্মমুহূর্তে স্নান করে আকাশদীপ দান করেন তিনি সমস্ত লোকের
প্রভু এবং অন্তে মোক্ষ লাভ করেন। এই জন্য কার্তিক মাসে স্নান, দান আদি কর্ম
করার সাথে সাথে ভগবান বিষ্ণুর মন্দিরে এই একমাস দীপদান করা অবশ্য কর্তব্য।
মহারাজ সুনন্দ চন্দ্রশর্মা নাম ব্রাহ্মণের পরামর্শ অনুসারে এই একমাস
বিধিপূর্বক ব্রত অনুষ্ঠান করেছিলেন। কার্তিক মাসে প্রতিদিন প্রাতঃস্নান করে
পবিত্র হয়ে কোমল তুলসীদল দ্বারা ভগবান বিষ্ণুর পূজা এবং রাত্রিতে আকাশ দীপ
দিতেন।
দীপ প্রদানের সময় তিনি এই মন্ত্র পাঠ করতেন-
দামোদরায় বিশ্বাস বিশ্বরূপধরায় চ।
নমস্কৃত্যা প্রদাস্যামি ব্যোমদীপং হরিপ্রিয়ম্॥
নমামীশ্বরং সচ্চিদানন্দরূপং লসৎ-কুণ্ডলং গোকুলে ভ্রাজমানম্।
যশোদভিয়োলূখলাব্ধাবমানং পরামৃষ্টমত্যং ততো দ্রুত্য গোপ্যা॥১॥
অনুবাদ:
যিনি সচ্চিদানন্দ-স্বরূপ, যাঁর কর্ণযুগলে কুণ্ডল আন্দোলিত হচ্ছে, যিনি
গোকুলে পরম শোভা বিকাশ করছেন এবং যিনি শিক্য অর্থাৎ শিকায় রাখা নবনীত
(মাখন) অপহরণ করায় মা যশোদার ভয়ে উদূখলের উপর থেকে লম্ফ প্রদান করে অতিশয়
বেগে ধাবমান হয়েছিলেন এবং মা যশোদাও যাঁর পশ্চাতে ধাবিত হয়ে পৃষ্টদেশ ধরে
ফেলেছিলেন, সেই পরমেশ্বর শ্রীদামোদরকে প্রণাম করি॥১॥

রুদন্তং মুহুর্নেত্রযুগ্মং মৃজন্তং করাম্ভোজযুগ্মেন সাতঙ্কনেত্রম্।
মুহুঃশ্বাসকম্প-ত্রিরেখাঙ্ককণ্ঠ-স্থিত-গ্রৈব-দামোদরংভক্তিবদ্ধম্॥২॥
অনুবাদ:
যিনি জননীর হস্তে যষ্ঠি দেখে রোদন করতে করতে দু'খানি পদ্মহস্ত দ্বারা
বারবার নেত্রদ্বয় মার্জন করছেন, যিনি ভীতনয়ন হয়েছেন ও সেইজন্য মুহুর্মুহুঃ
শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত কম্প-নিবন্ধন যাঁর কণ্ঠস্থ মুক্তাহার দোদুল্যমান হচ্ছে
এবং যাঁর উদরে রজ্জুর বন্ধন রয়েছে, সেই ভক্তিবদ্ধ শ্রীদামোদরকে বন্দনা
করি॥২॥

ইতিদৃক্ স্বলীলাভিরানন্দকুণ্ডে স্বঘোষং নিমজ্জন্তমাখ্যাপয়ন্তম্।
তদীয়েশিতজ্ঞেষু ভক্তৈর্জিতত্ত্বং পুনঃ প্রেমতস্তং শতাবৃত্তি বন্দে॥৩॥
অনুবাদ:
যিনি এইরকম বাল্যলীলা দ্বারা সমস্ত গোকুলবাসীকে আনন্দ-সরোবরে নিমজ্জিত
করেন এবং যিনি ভগদৈশ্বর্য-জ্ঞান -পরায়ণ ভক্তসমূহে 'আমি ভক্ত কর্তৃক পরাজিত
অর্থাৎ ভক্তের বশীভূত'---এই তত্ত্ব প্রকাশ করেন, সেই ঈশ্বররূপী দামোদরকে
আমি প্রেম-সহকারে শত শতবার বন্দনা করি॥৩॥

বরং দেব! মোক্ষং ন মোক্ষাবধিং বা ন চান্যং বৃণেঽহং বরেশাদপীহ।
ইদন্তে বপুর্নাথ! গোপালবালং সদা মে মনস্যাবিরাস্তাং কিমন্যৈঃ॥৪॥
অনুবাদ:
অনুবাদঃ হে দেব! তুমি সবরকম বরদানে সমর্থ হলেও আমি তোমার কাছে মোক্ষ বা
মোক্ষের পরাকাষ্ঠাস্বরূপ শ্রীবৈকুণ্ঠলোক বা অন্য কোন বরণীয় বস্তু প্রর্থনা
করি না, তবে আমি কেবল এই প্রর্থনা করি যে, এই বৃন্দাবনস্থ তোমার ঐ
পূর্ববর্ণিত বালগোপালরূপ শ্রীবিগ্রহ আমার মানসপটে সর্বদা আবির্ভূত হোক। হে
প্রভো! যদিও তুমি অন্তর্যামিরূপে সর্বদা হৃদয়ে অবস্থান করছ, তবুও তোমার ঐ
শৈশব লীলাময় বালগোপাল মূর্তি সর্বদা সুন্দররূপে আমার হৃদয়ে প্রকটিত হোক॥৪॥

ইদন্তে মুখাম্ভোজমব্যক্তনীলৈ- র্বৃতং কুন্তলৈঃ স্নিগ্ধ-রক্তৈশ্চ গোপ্যা।
মুহুশ্চুম্বিতং বিম্ব-রক্তাধরং মে মনস্যাবিরাস্তামলং লক্ষলাভৈঃ॥৫॥
অনুবাদ:
হে দেব! তোমার যে বদন-কমল অতীব শ্যামল, স্নিগ্ধ ও রক্তবর্ণ কেশসমূহে
সমাবৃত এবং তোমার যে বদনকমলস্থ বিম্বফলসদৃশ রক্তবর্ণ অধর মা যশোদা বারবার
চুম্বন করছেন, সেই বদনকমলের মধুরিমা আমি আর কি বর্ণন করব? আমার মনোমধ্যে
সেই বদন -কমল আবির্ভূত হোক। ঐশ্বর্যাদি অন্যবিধ লক্ষ লক্ষ লাভেও আমার কোনও
প্রয়োজন নেই---আমি অন্য আর কিছুই চাই না॥৫॥

নমো দেব দামোদরানন্তবিষ্ণো প্রসীদ প্রভো দুঃখজালাব্ধিমগ্নম্।
কৃপাদৃষ্টি-বৃষ্ট্যাতিদীনং বতানু- গৃহানেশ মামজ্ঞমেধ্যক্ষি দৃশ্যঃ॥৬॥
অনুবাদ:
হে দেব! হে দামোদর! হে অনন্ত! হে বিষ্ণো! আমার প্রতি প্রসন্ন হও। হে
প্রভো! হে ঈশ্বর! আমি দুঃখপরম্পরারূপ সমুদ্রে নিমগ্ন হয়ে একেবারে মরণাপন্ন
হয়েছি, তুমি কৃপাদৃষ্টিরূপ অমৃত দ্বারা আমার প্রাণ রক্ষা কর॥৬॥

কুবেরাত্মজৌ বদ্ধমূর্ত্যৈব যদ্বৎ ত্বয়া মোচিতৌ ভক্তিভাজৌ কৃতৌ চ।
তথা প্রেমভক্তিং স্বকাং মে প্রযচ্ছ ন মোক্ষে গ্রহোমেঽস্তি দামোদরেহ॥ ৭॥
অনুবাদ:
হে দামোদর! তুমি যেরকম গো অর্থাৎ গাভী-বন্ধন-রজ্জু দ্বারা উদূখলে বদ্ধ হয়ে
শাপগ্রস্থ নলকুবের ও মণিগ্রীব নামক কুবের পুত্রদ্বয়কে মুক্ত করতঃ তাদের
ভক্তিমান্ করেছ, আমাকেও সেইরকম প্রেমভক্তি প্রদান কর। এই প্রেমভক্তিতেই
আমার আগ্রহ; মোক্ষের প্রতি আমার আগ্রহ নেই॥৭॥

*#নমস্তেঽস্তু দাম্নে স্ফুরদ্দীপ্তি-ধাম্নে ত্বদীয়োদরায়াথ বিশ্বস্য ধাম্নে।
নমো রাধিকায়ৈ ত্বদীয়-প্রিয়ায়ৈ নমোঽনন্তলীলায় দেবায় তুভ্যম্॥* ৮॥
অনুবাদ:
হে দেব! তোমার তেজোময় উদরবন্ধন রজ্জুতে এবং বিশ্বের আধার-স্বরূপ তোমার
উদরে আমার প্রণাম থাকুক। তোমার প্রিয়তমা শ্রীরাধিকাকে আমি প্রণাম করি এবং
অনন্তলীলাাময় দেব তোমাকে নমস্কার করি॥৮॥

ইতি - সত্যব্রতমুনি প্রোক্তং দামোদরাষ্টকং সম্পূর্ণম্।।
আমলকী বৃক্ষের মাহাত্ম্য।

কার্তিক মাসে কেন আমলকী ফল নিবেদন করবেন 


কার্তিক
মাসের শুক্লা চতুর্দশীতে আমলকি বৃক্ষের জন্ম। সৃষ্টির শুরুতে ব্রহ্মা
ভগবানকে দেখার জন্যে আবেগে আপ্লুত হোন আর ব্রহ্মার সেই চোখের জল থেকে আমলকি
বৃক্ষের জন্ম। আর এই আমলকি বৃক্ষকে দেখতে সমস্ত দেব দেবীরা এসেছিল। তখন
ভগবান বললেন এই আমলকি বৃক্ষ আমার খুব প্রিয়। তাই এই বছরে ২৯ নভেম্বর রবিবার
আমলকির বৃক্ষের আবির্ভাব তিথি পরেছে। এই দিনে আমলকি উচ্চারন করলে হাজার
গুন ফল লাভ হয়। আর আমলকি ভগবানকে দিয়ে খেলে এর দ্বিগুন ফল লাভ হয়। পরমেশ্বর
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন করুণাসাগর। সাধু ও শাস্ত্র সিদ্ধান্ত আমাদের
জানিয়েছেন, আমরা ভগবানের কৃপা পেতে যত না উৎসুক, ভগবান আমাদের কৃপা করতে
সহস্রগুণ বেশি উৎসুক। তবে, ভগবান ভক্তদের যশস্বী করতে চান বলেই কিছু
নিয়মাদি দিয়েছেন,আবার অল্পের জন্য বিশাল প্রতিদানের কথা দিয়েছেন, যাতে আমরা
সহজেই সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভগবানের প্রিয় হতে পারি। তাছাড়া কৃপা মানেই
হলো, 'নির্দিষ্ট কৃত্য করার ফলে যা লাভ হয়।' এই দিনে আমলকি বৃক্ষকে
প্রদক্ষিন, আমলকি বৃক্ষের নিচে শাস্ত্র অধ্যায়ন, আমলকি ফল ভগবানকে নিবেদন
করে খাওয়া।
দামোদর
মাস এমনই একটি সুযোগ, যার মাধ্যমে আমরা যেকোনো ভক্তিমূলক সেবায় সহস্র গুণে
বেশী কৃপা লাভ করতে পারি। দামোদর মাসে দীপদান, তুলসীকাষ্ঠের প্রদীপ
নিবেদনের পাশাপাশি আরেকটি সুযোগ হলো ভগবানের সেবায় আমলকী নিয়োজন।
অতি
ক্ষুদ্র, মধুরতাবিহীন এই ফলটিকেই বৈদিক শাস্ত্রে বিশদ ভাবে মহিমান্বিত করা
হয়েছে। পুরাণে বলা হয়েছে, কোনো এক কল্পে দেবী লক্ষ্মী ও পার্বতী একত্রে
হরিকথা আলোচনার সময় ভক্তিপূর্ণ অশ্রু বিসর্জন করায় সেই প্রেমাশ্রু থেকে
আমলকীর উৎপত্তি। এরহ পরবর্তী কোনো কল্পে জড়জগতে আদিবৃক্ষরূপে আমলকীর
আবির্ভাব।
কার্তিক মাসে অগস্তফুল বা বকফুল— এর বিশেষ মাহাত্ম্য।

যিনি
কার্তিক মাসে অপরাপর অন্য পুষ্প বাদ দিয়ে কেবল মাত্র অগস্ত পুষ্প দ্বারা
শ্রী হরির অর্চনা করেন, তাঁহার অশ্বমেধ যজ্ঞানুষ্ঠানের ফল লাভ হইয়া থাকে।
শ্রী হরির অগস্ত পুষ্প এত প্রিয় যে, কার্তিক মাসে যে অগস্ত পুষ্প দ্বারা
শ্রী হরির অর্চনা করেন, গগন মন্ডলে যত দিন চন্দ্র সূর্য থাকে তত কাল তিনি
শ্রীহরির সমীপে বাস করেন। অযুতসংখ্যক গো দানে যে ফল লাভ হয় কার্তিক মাসে
শ্রী হরির পাদপদ্মে একটি মাত্র অগস্ত পুষ্প অর্পন করলে সেই ফল লাভ হয়।
পদ্মপুরাণে কার্তিক মাহাত্ম্যে,—

"মুনিপুষ্পৈর্যদি হরিঃ
পূজিতঃ কার্তিকে নরৈঃ
মুনিনামেব গতিদো
জ্ঞানীনামুদ্ধর্রেতসাম॥"
কার্তিক
মাসে অগস্তপুষ্প দ্বারা শ্রী হরির পূজা করিলে প্রভু তাহাদিগকে উর্দ্ধরেতা
গনের গতি প্রদান করেন। সর্বোপরি এই দামোদর মাসে শ্রী শ্রী রাধা দামোদর
দেবের প্রিয় অগস্ত পুষ্প তাঁর সন্তুষ্টি বিধানের উদ্দ্যেশ্যে পূর্ন নিষ্কাম
ভাবে নিবেদন করাই কর্তব্য।

সদা
সর্বদা শ্রীশ্রী রাধা ও কৃষ্ণের পাদপদ্মের কথা স্মরণ করুন, তাহলে
শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা আপনার জন্য বরাদ্দকৃত কার্য সম্পাদন করতে কোনও অসুবিধা
অনুভব করতে হবে না। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের কৃপার প্রতি অগাধ
বিশ্বাস ও ভরসা রাখতে হবে। শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নামটিতে অসাধারণ আধ্যাত্মিক
শক্তি রয়েছে কারণ শ্রীকৃষ্ণের নাম স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের থেকে আলাদা নয়
ঐকান্তিক ভালবাসা এবং নিষ্ঠার সাথে এই নামগুলি জপ করুন তবেই আপনি চিণ্ময়
আনন্দ অনুভব করবেন:
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।। (১০৮ বার)
হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন এবং সুখী হন ...
জয় শ্রীল প্রভুপাদ





জয় শ্রীল গুরুদেব
শুভ কার্তিক মাসের পবিত্রতায় আপনারা যেভাবে ভগবান শ্রীদামোদরের সেবা ও ব্রত পালন করেছেন, তাতে আপনি সকল পাপমুক্তি লাভ করবেন এবং ভগবানের অশেষ অনুগ্রহ প্রাপ্ত হবেন।
✨ Visual: প্রদীপ জ্বলে উঠছে, ভক্তরা অঞ্জলি দিচ্ছে।
📜 Narrator:
কার্তিক মাসের এই মহিমা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—নিয়মিত ব্রত পালন, ভক্তি, দান ও জাগরণ দ্বারা কেবলমাত্র ভগবানকে প্রীত করা যায়। এই মাসে শ্রীদামোদরের প্রতি সত্যিকারের প্রেম ও নিষ্ঠা রাখাই পরম ফলের মূল।
🌺 Visual: ভক্তরা রাধাদামোদরের স্তোত্র পাঠ করছেন, মন্দিরে প্রদীপ দান চলছে।
🙏 Narrator:
আপনারা এই কার্তিক মাসে প্রতিদিন ছোট বড় সব প্রার্থনা, নৈমিত্তিক ব্রত ও দীপদান অব্যাহত রাখুন। হে ভক্তগণ, মনে রাখুন—ভগবান শ্রীদামোদর আপনার ভক্তিকে সর্বদা স্বীকার করবেন এবং আপনাকে ধন্য করবেন।
✨ Visual: আকাশে দীপমালা, ভক্তদের আনন্দমুখর দৃশ্য।
🎵 Music rises slightly 🎵
📣 Narrator / Closing Words:
এই কার্তিক মাসে প্রতিটি দিন হোক আপনার জীবনে ভগবান শ্রীদামোদরের অশেষ আনন্দ, শান্তি ও দীক্ষা নিয়ে আসুক।
🌸 Text Overlay:
“শুভ কার্তিক মাস। ভগবান শ্রীদামোদরের অশেষ কৃপায় ধন্য হোন।”

শুভ কার্তিক মাসের পবিত্রতায় আপনারা যেভাবে ভগবান শ্রীদামোদরের সেবা ও ব্রত পালন করেছেন, তাতে আপনি সকল পাপমুক্তি লাভ করবেন এবং ভগবানের অশেষ অনুগ্রহ প্রাপ্ত হবেন।
✨ Visual: প্রদীপ জ্বলে উঠছে, ভক্তরা অঞ্জলি দিচ্ছে।
📜 Narrator:
কার্তিক মাসের এই মহিমা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—নিয়মিত ব্রত পালন, ভক্তি, দান ও জাগরণ দ্বারা কেবলমাত্র ভগবানকে প্রীত করা যায়। এই মাসে শ্রীদামোদরের প্রতি সত্যিকারের প্রেম ও নিষ্ঠা রাখাই পরম ফলের মূল।
🌺 Visual: ভক্তরা রাধাদামোদরের স্তোত্র পাঠ করছেন, মন্দিরে প্রদীপ দান চলছে।
🙏 Narrator:
আপনারা এই কার্তিক মাসে প্রতিদিন ছোট বড় সব প্রার্থনা, নৈমিত্তিক ব্রত ও দীপদান অব্যাহত রাখুন। হে ভক্তগণ, মনে রাখুন—ভগবান শ্রীদামোদর আপনার ভক্তিকে সর্বদা স্বীকার করবেন এবং আপনাকে ধন্য করবেন।
✨ Visual: আকাশে দীপমালা, ভক্তদের আনন্দমুখর দৃশ্য।
🎵 Music rises slightly 🎵
📣 Narrator / Closing Words:
এই কার্তিক মাসে প্রতিটি দিন হোক আপনার জীবনে ভগবান শ্রীদামোদরের অশেষ আনন্দ, শান্তি ও দীক্ষা নিয়ে আসুক।
🌸 Text Overlay:
“শুভ কার্তিক মাস। ভগবান শ্রীদামোদরের অশেষ কৃপায় ধন্য হোন।”
.jpg)
No comments: