শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্রদেবের লীলা মাধুরী
একদিন ফেণী হইতে শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিয়ে রেলগাড়ীতে ইন্টার ক্লাশে চাঁদপুর কিংবা কুমিল্লা রওনা হইয়াছি, ঠিক মনে নাই। গুণবতী ষ্টেশন হইতে গাড়ী ছাড়ার পর শ্রীশ্রীঠাকুর আমাকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন — “বলেন ত, গাড়ী কি বলিতেছে?” আমি বলিলাম — “গাড়ী ঝকড় ঝকড় শব্দ করিতেছে।” কিন্তু ঠাকুর হাসিয়া বলিলেন — “না, তাহা নহে। গাড়ীখানা বলিতেছে — জগজ্জননী, জগজ্জননী।”
এই বলিয়া হাসিতে লাগিলেন। এক একদিন এমন ভাবে এক একটা কথা বলিয়া হাসিয়া কুটপাট হইতেন। তাঁর শ্রীদেহে হাড় ও চামড়া ব্যতীত কিছু ছিল না বলিয়া মনে হইত। কিন্তু তাহাতে যে কি শক্তি নিহিত ছিল তাহা ভক্ত মাত্রই অনুভব করিতে পারিতেন।
ঠাকুরের হাত-পা ও শরীর মর্দ্দনের সৌভাগ্য অনেকদিন আমার হইয়াছিল। একদিন বলিলেন — “আরও জোরে টিপিতে হয়।” আমি ভাবিলাম এর চেয়ে বেশী জোরে টিপিলে সহ্য করিবেন কি করিয়া। আমার সমস্ত শক্তি দিয়া টিপিয়াও তাঁহার ইচ্ছামত টিপিতে পারিলাম না। ভাবিলাম — এই ক্ষীণ দেহেও কোন ব্যথা পান না; ইহা একমাত্র সর্বশক্তিমানেরই পরিচায়ক।
এত শক্তিধর হয়েও আমাদের নিকট এত প্রচ্ছন্ন থাকিতেন যে কিছু বুঝিবার ক্ষমতা আমাদের ছিল না। শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্রদেবের লীলা সত্যিই বিশ্বভক্তের কাছে অনন্ত প্রেরণার উৎস।
হ্যাশট্যাগ
#শ্রীশ্রীঠাকুর #রামচন্দ্রদেব #লীলা_মাধুরী #ভক্তি #দেবলীলা #SriSriRamThakur
শ্রীশ্রীঠাকুর নাম নেওয়া আর নাম পাওয়া সমন্ধে
প্রকাশের তারিখঃ 22 আগস্ট, 2024 | বিভাগঃ শ্রীশ্রীঠাকুর প্রসঙ্গে

জয়গোবিন্দ। শ্রীশ্রীঠাকুর নাম নেওয়া আর নাম পাওয়া সমন্ধে যাহা বুঝাইলেন, তাতে আমাদের নিজেদের দেখা দরকার — সত্যি কি আমরা নাম *পেয়েছি*, নাকি শুধুই নাম *নিয়েছি*।
একদিন এক ভক্ত শ্রীশ্রীঠাকুরকে বলিলেন — “ঠাকুর মশাই, যাহা দিয়াছেন তাহা তো হইয়া গেল, এখন আবার নূতন কিছু দেন যাহাতে একটু বেশী শক্তি পাইয়া অগ্রসর হইতে পারি।” এই বাক্য শুনিয়া ঠাকুরের চোখ বিস্ফারিত হইল। তিনি অতি মৃদুস্বরে স্নেহভরে বলিলেন — “আপনি কি পাইয়াছেন তা'র পরীক্ষা দিতে পারেন? আপনার কিছুই হয় নাই।”
ভক্ত আবার বলিলেন — “আপনি যে ভাবে নাম করিতে বলেছেন, সে ভাবেই তো নাম কত্তে আছি।” ঠাকুর কোমল কণ্ঠে উত্তর দিলেন — “নাম নিছেন, নাম পান নাই। নাম পাইলে স্বভাব এই রকম হয় না।”
তিনি আরও বলিলেন — “নাম সত্য, নাম নিত্য, নাম অখণ্ড, নাম স্থির। নামের কোন অংশ নাই, কম্প নাই। নাম প্রতিষ্ঠা হইলে অসত্য বা অস্থিরতা থাকে না। যার বিশুদ্ধ সমুদ্রজলে পিপাসা মিটে না, সে গেছে পচা ডোবার জলে আশ মিটাইতে।”
ঠাকুর আরও বলিলেন — “এই সামান্য ক্ষণিক শক্তি দেইখ্যাই মুগ্ধ হইয়া গেছেন, নামের প্রকৃত শক্তি কি কইরা অনুভব হইব? এই সামান্য শক্তি ছয় মাস চেষ্টা করলে সকলেই পাইতে পারে। আবার থাকেও ছয় মাস। আপনে যে নাম পাইছেন তা ভুইলা যান। কিন্তু অব্যাহতি নাই, আমি ছাড়ুম না, সুদে আসলে সবই আদায় কইরা লইমু।”
এই বাণী আমাদের মনে করায় — শুধুমাত্র নাম মুখে উচ্চারণ করাই যথেষ্ট নয়; নামের আসল পরিচয় হ'ল সেই অন্তর্লীন *স্থিতি ও শান্তি*, যেখানে মন অবিচল ও কম্পনশূন্য হয়।
গুরুবাণী
গুরুকৃপাহি কেবলম্
গুরুকৃপাহি কেবলম্
গুরুকৃপাহি কেবলম্
হ্যাশট্যাগ
#শ্রীশ্রীঠাকুর #রামচন্দ্রদেব #নামজপ #ভক্তি #আধ্যাত্মিকতা #SriSriRamThakur #GuruKripahiKebalam
রাম ঠাকুরের কথা 🌹
একদিন ভোরবেলায় গড়ের মাঠে রামঠাকুরের এক অনুসারী ধনাঢ্য ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয়। সে ব্যক্তি অনেক সম্পত্তি ও টাকার অভাবের কথা বলছিলেন, যা শুনে ঠাকুরের ভক্ত মনে করেন—অভাব নয়, অভাববোধই আসল দারিদ্র্য। এই উপলব্ধি থেকে রামঠাকুর বলতেন, "নাই নাই চাই চাই" যার মধ্যে যত বেশি, সে তত দরিদ্র; যার মধ্যে যত কম, সে তত বেশি ধনী।
ধর্ম ও ‘লেগে থাকা’
ঠাকুরের স্পষ্ট বাণী—ধর্ম ধরে থাকলে সংসারের সকল দিক বজায় থাকে, বাহ্যিক ধন-সম্পত্তির সঙ্গে আসল সম্প্রীতির যোগাযোগ নেই। তিনি বলতেন, "লেগে থাকলে মেগে খায় না", অর্থাৎ যিনি ঈশ্বর-সংলগ্ন, তিনি চাহিদায় অভাববোধে জর্জরিত হন না, বরং আত্মবিশ্বাসও দৃঢ় থাকে।
‘লেগে থাকা’ ব্যাখ্যা
ঠাকুর ছোট একটি উদাহরণ দিতেন—বানরের বাচ্চা নিজের শক্তিতে মাকে ধরে রাখতে চেষ্টা করে আর মার্জার (বিড়াল) বাচ্চা পুরোপুরি মায়ের উপর নির্ভরশীল। মানুষের জন্য মার্জারবুদ্ধি—সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের ওপর নির্ভর—শ্রেষ্ঠ। গুরুর নিকটে থাকার আকাঙ্ক্ষা ও তাঁর আদেশ-উপদেশ মেনে চলাই ‘লেগে থাকা’-র আসল অর্থ।
আশ্বাস ও করুণা
ঠাকুর তাঁর ভক্তদের আশ্বস্ত করতেন—"আপনি ছাড়তে পারেন, কিন্তু সে (গুরু/ঈশ্বর) ছাড়বে না"। এমন জীবন্ত আশ্বাসে তিনি সকলকে আত্মবিশ্বাস আরিত করতেন, যেকোনো অবস্থায় ঈশ্বর বা গুরু-সংলগ্ন জীবনে সংকট কাটে—এই বিশ্বাসে ভরসা রাখার উপদেশ দিতেন।
.png)
No comments: