নামের মাধ্যমে গুরুকে পাওয়া — শ্রীশ্রী ঠাকুরের অভিজ্ঞতা
শ্রীশ্রী ঠাকুরের বাণীর আলোকেই ব্যক্তিগত স্মৃতি ও ব্যাখ্যা।
www.srisriramthakur.com
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
শ্রীশ্রী ঠাকুর বলেছেন — ‘নাম করিলে ধাম খোলে। নাম আর ভগবান এক।’ নাম করিলেই গুরুকে পাওয়া যায়; নামের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে অন্তরের অদৃশ্য কেন্দ্র স্থাপিত হয়। নীচে একটি ব্যক্তিগত স্মৃতি ও নাম অনুশীলন সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো — কীভাবে নামকে অভ্যাস করলে প্রতিদিন গুরুকে অনুধাবন করা যেতে পারে।
মূল কাহিনী — একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
ঠাকুরের নিকট থেকে ‘নাম’ গ্রহণের পরে যে অদ্ভুত — অব্যক্ত পরমানন্দ আমি অনুভব করি, কথায় প্রকাশ করা সহজ নয়। সেই উপলব্ধি এতটাই ব্যক্তিগত ও প্রশান্ত ছিল যে তা আমার পরিবারের সবারও অভিজ্ঞতা হলে আমার মানসিক শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতো— এই প্রার্থনা বারবার আমি অন্তরে জানায়।
একবার আমি ঠাকুরকে বললাম — “আপনি ময়মনসিংহ গেলে আমার মেজ ভ্রাতা অবনী মোহন মুখুটিকে কৃপা করে নীরবভাবে নাম দিন।” ঠাকুর একটু হাসলেন; উত্তর কিছু বলেননি। মজার ব্যাপার — আমি যখন ভাবছিলাম, ঠিক সেই সময় আমার মেজ ভ্রাতা নিজেরই অন্তরে গুরু-নাম গ্রহণের তীব্র আকাঙ্খা অনুভব করছিলেন। তিনি খোঁজ করছিলেন, ঠাকুর কোথায় যাবেন—ময়মনসিংহ, ঢাকা, জামালপুর, সব জায়গায়।
শেষে ঠাকুর ময়মনসিংহে এলে মেজ ভ্রাতা তাঁকে আমাদের গৃহে নিয়ে এলেন। ঠাকুর সানন্দে শুধু মেজ ভ্রাতাকেই নয়, সবার প্রতি কৃপা করে ‘নাম’ দেন। পরবর্তীকালে মেজ ভ্রাতা কোর্ট-জীবনের মধ্যে থেকেও প্রতিদিন সন্ধ্যায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে নাম কীর্তন করতেন—এর ফলে তাঁর আধ্যাত্মিক জীবন গরিমাখ্যাত হয় এবং তিনি বেশ কিছু কীর্তন গ্রন্থও রচনা করেন।
ব্যাখ্যা — নাম কেন কার্যকর ও কিভাবে অনুশীলন করবেন
- নামের মূল উদ্দেশ্য: নাম হল বিষয়ের মতো একটি কেন্দ্র—নামের বার্তা যখন ধীরে ধীরে হৃদয়ে বসে, তখন সে কেন্দ্রটি মনে-মস্তিষ্কে ধারক হিসেবে কাজ করে এবং গুরুর ওপর আসক্তি গড়ে উঠে।
- প্রকৃত অভ্যাসগত পদ্ধতি (প্রস্তাবিত নিয়ম):
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়—সন্ধ্যা বা ভোরে—১০ থেকে ১৫ মিনিট নাম জপ।
- শিথিল শ্বাস-শ্বাস নিন; মনকে সংক্ষিপ্ত রাখুন; মন ঘুরলে কোমলভাবে নাম নিয়ে ফিরে আসুন।
- নামকীর্তন করলে মন ধীর হতে শুরু করে; বারবার নাম করলে ‘ধাম’ বা অনুভূতির দরজা খুলে যায়।
- গুরু-দানের গুরুত্ব: ঠাকুরের মত স্পষ্ট অনুপ্রেরণা বা অনুমোদন (নাম দান) ব্যক্তিকে মানসিক ও বাস্তব দিক থেকে অনুপ্রাণিত করে—একই সময় নাম নিজে গুরুর অনুপস্থিতিতেও তাঁকে অনুভব করাতে সক্ষম।
- ধীরে ধীরে ‘তত্ত্বমসি’ উপলব্ধি: নামের অনুশীলনে যখন মন শুদ্ধ হয়, তখন অন্তরেই ধীরে ধীরে ‘তত্ত্বমসি — তুমিই পরমব্রহ্ম’—এর উপলব্ধি আসে; নাম আর ভগবান একাকার লাগে।
- সাহায্যকারী অভ্যাস: নামের সঙ্গে সংযুক্ত থিওরি পড়া, গুরুর শিষ্যদের সঙ্গে মানসিক আলোচনা ও মিলিত কীর্তন অভিজ্ঞতাকে দ্রুততর করে।
আপাতত সারমর্ম: নামকে শুধুমাত্র শব্দ হিসেবে দেখা নয়; নাম এক অভ্যাস, এক কেন্দ্র স্থাপন, আর সেই কেন্দ্র থেকেই গুরুর অনুপস্থিতিতেও তাঁর উপস্থিতি অনুভব করা সম্ভব।
সমাপনী বার্তা ও প্রার্থনা
আপনি যদি প্রতিদিন নিঃশব্দভাবে বা কীর্তনে নাম করুন — ধীরে ধীরে সেই নাম আপনার অন্তরকে ভরিয়ে তুলবে। আমি প্রার্থনা করি—আপনার পরিবারের প্রত্যেকেই যদি ঠাকুরের নিকট থেকে নাম গ্রহণ করে কৃপা লাভ করেন, তাহলে অন্তরে স্থির শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। শেষে ঠাকুরের একটি সহজ অনুপ্রেরণা স্মরণ রাখুন—‘নাম করিতে করিতে ধাম খোলে।’
আদিশ্বর প্রার্থনা (مختصر): “ঠাকুরের নাম অমল — এই নামের দ্বারা অন্তর নির্মল হোক, তত্ত্বমসি-র উপলব্ধি স্থায়ী হোক, এবং সকলের জীবনে শান্তি ও করুণা বর্ষিত হোক।”
Reviewed by শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ(SriSriramthakur O gan Ganer vhovon Youtube channel)
on
October 24, 2025
Rating:






.jpg)
No comments: