গুরু ভাই বোনসহ সকল সনাতনী ভাই বোনদের জানাই স্বাগত ,উদ্দেশ্য গুরু দেবের অমৃত বানী সকলের মাঝে প্রচার করা।

নামই পরম ব্রহ্ম | বেদবাণী ১৩০ | শ্রীশ্রী রামঠাকুর ও গীতার বাণী” (Name is the Supreme Brahman | Sri Sri Ramthakur Vedbani & Gita Vision)

 



নামই পরম ব্রহ্ম | বেদবাণী ১৩০ | শ্রীশ্রী রামঠাকুর ও গীতার বাণী”
(Name is the Supreme Brahman | Sri Sri Ramthakur Vedbani & Gita Vision)




“জীবনের সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ—সবই কি কেবল আমাদের ভাগ্যের খেলা?
শ্রীশ্রীঠাকুর বলেন, প্রারব্ধের কারণে যে যা ভোগ করে, সেটাই তার অদৃষ্টের ফল।
কিন্তু নাম — সেই নামই আমাদের মুক্তির পথ।
আজ আমরা শুনব বেদবাণী তৃতীয় খণ্ড, পত্রাংশ ১৩০,
যেখানে ঠাকুর নামের মহিমা ও মনের পরিশুদ্ধির পথ দেখিয়েছেন — গীতার আলোয়।”



বর্ণনা:
এই ভিডিওতে উপস্থাপিত হয়েছে বেদবাণী তৃতীয় খণ্ড, পত্রাংশ নং (১৩০) — যেখানে শ্রীশ্রী রামঠাকুর মানবজীবনের প্রারব্ধ, মন, ও নামের মাহাত্ম্য সম্পর্কে বেদান্ত ও গীতার সঙ্গে মিলিয়ে গভীর বাণী প্রদান করেছেন।
নামই পরম ব্রহ্ম — এই ভাবনা গীতার “অন্যন্যাশ্চিন্তয়ন্তো মাম্” শ্লোকের অনুরূপ।
নামই মোক্ষ, নামই আনন্দ — এই শিক্ষাই জীবনের চরম সত্য।



📜 মূল বাণী (Main Script - Bengali Text)

“প্রারব্ধতা বশত:ই সংসারের ক্ষণের পরিচয়ে ভাল মন্দ ফল প্রকাশ পাইয়া থাকে।
আচার প্রাক্তন বশত:ই ভাল মন্দ রূপ ধারণা করিয়া যায়।
এই সকলি অদৃষ্টচক্র জানিয়া শান্তি লাভ করিতে পারে।
সংসারের ভাব সকলই মনের দ্বারা চলিয়া থাকে।
সেই মনের জন্য কোন প্রতিশোধনের চেষ্টা না করিয়া সর্ব্বদা নাম করিয়া যাইতে হয়।
নাম পরম ব্রহ্ম, মোক্ষ ধর্ম্ম, নামই সত্য, নামই আনন্দ,
নাম করিতে করিতে মনের প্রয়োজন হয় না।
নাম স্বভাবত:ই পবিত্র, নামকে চিন্তামণি বলিয়া ঋষিগণ প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন।”


🌺 পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ব্যাখ্যা (Point-wise Explanation with Gita Context)

1️⃣ প্রারব্ধ ও ফলভোগ:
ঠাকুর বলেন, প্রারব্ধ (আগের কর্মফল) অনুসারেই জীবনের সুখ-দুঃখ আসে।
👉 গীতার মিল: “প্রকৃত্যঃ ক্রিয়মানানি গুণৈঃ কর্মাণি সর্বশঃ।” (অধ্যায় ৩, শ্লোক ২৭)
অর্থাৎ, প্রকৃতি ও অতীত কর্মের প্রভাবে সবকিছু ঘটে।

2️⃣ আচার ও মনের গঠন:
আগের অভ্যাস বা সংস্কার (সংশ্কার) থেকেই ভাল-মন্দ ভাবনা তৈরি হয়।
👉 গীতা বলে, “সংস্কারজনিত মনই মানুষের শত্রু বা বন্ধু।”

3️⃣ অদৃষ্টচক্র ও শান্তি:
যে অদৃষ্ট বা ভাগ্যচক্র বোঝে, সে শান্ত হতে পারে।
👉 “যোগস্থঃ কুরু কর্মাণি” — গীতা ২/৪৮ — অর্থাৎ ফলের চিন্তা না করে কর্মে স্থিত হও।

4️⃣ মন সংসারের চালক:
মনই সংসারের সব ভাব-ভাবনার মূল।
👉 গীতা ৬/৫: “উদ্ধরেত আত্মনাত্মানং” — মনকেই মন দ্বারা উত্তোলন করতে হবে।

5️⃣ মন প্রতিশোধন নয়, নামস্মরণ:
ঠাকুর বলেন, মনকে দমন নয়, নামের পথে প্রবাহিত করো।
👉 “মামনুস্মর যুদ্ধ্য চ” (গীতা ৮/৭) — নামস্মরণই মুক্তির পথ।

6️⃣ নামই পরম ব্রহ্ম ও মোক্ষধর্ম:
নাম হল পরম সত্য, চেতনা ও আনন্দের রূপ।
👉 গীতায় কৃষ্ণ বলেন: “যঃ স্মরতি মাং সর্বদা, তস্যাহম্ সুদুর্লভঃ।”
অর্থাৎ, যিনি সদা নাম স্মরণ করেন, আমি তাঁর নিকটে সদা উপস্থিত।

7️⃣ নাম চিন্তামণি:
নাম মনোকামনা পূরণকারী চিন্তামণির মতো।
এটি মনকে পবিত্র করে ও পরম আনন্দে ভরিয়ে দেয়।

বিস্তারিত ব্যাখ্যা (Detailed Expanded Explanation)


1️⃣ প্রারব্ধ ও ফলভোগ

ঠাকুর বলেন: “প্রারব্ধতা বশতঃই সংসারের ক্ষণিক ভাল-মন্দ ফল প্রকাশ পাইয়া থাকে।”

মানুষের বর্তমান জীবন তার অতীত কর্মের ফল।
যে কর্ম অতীতে করা হয়েছে — তা এখন প্রারব্ধরূপে ভোগ করতে হয়।
এই ভোগই সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি, মান-অপমানের রূপে প্রকাশ পায়।
মানুষ ভাবে — “আমি দুঃখ পাচ্ছি,” কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা কেবল অতীত কর্মের প্রতিফলন।

👉 গীতার মিল:
“প্রকৃত্যঃ ক্রিয়মানানি গুণৈঃ কর্মাণি সর্বশঃ।” (গীতা ৩/২৭)
অর্থাৎ, প্রকৃতির গুণ (সত্ত্ব, রজ, তম) অনুসারে সমস্ত কর্ম ঘটে, কিন্তু মানুষ অহংকারে ভাবে — “আমি কর্ম করছি।”
এই অহংকারই দুঃখের মূল।

🔹 ঠাকুরের শিক্ষা:
নিজের প্রারব্ধ বুঝে শান্ত হও।
যে শান্তভাবে ফল ভোগ করে, সে মুক্তির পথে এগোয়।
অতীতের বোঝা নামের আলোয় গলে যায়।


2️⃣ আচার ও মনের গঠন

“আচার প্রাক্তন বশতঃই ভাল মন্দ রূপ ধারণা করিয়া যায়।”

আমাদের চিন্তা, বিচার, অভ্যাস — সবই পুরনো সংস্কার (Sanskar) দ্বারা গঠিত।
যেমন— যদি কেউ অহিংস মনোভাব নিয়ে জন্মায়, তবে তা পূর্বজন্মের সৎ আচার ফল।
মন যেমন খাদ্য পায়, তেমনই গড়ে ওঠে।

👉 গীতার সমর্থন:
“মনঃ শত্রুরূপে বা বন্ধুরূপে অবস্থান করে।” (গীতা ৬/৫)
অর্থাৎ, মনই মানুষকে পতন বা মুক্তি দিতে পারে।

🔹 ঠাকুরের ভাব:
মনকে তিরস্কার নয়, নামের দ্বারা রূপান্তর করতে হয়।
ভালো আচরণ, সৎ চিন্তা, নামস্মরণ — এগুলোই নতুন সংস্কার সৃষ্টি করে, যা মুক্তির পথ খুলে দেয়।


3️⃣ অদৃষ্টচক্র ও শান্তি

“এই সকলি অদৃষ্টচক্র জানিয়া শান্তি লাভ করিতে পারে।”

অদৃষ্ট অর্থ — অদেখা ভাগ্যের চক্র।
যে মানুষ বুঝতে পারে, “সবই ঈশ্বরের লীলা ও আমার প্রারব্ধের ফল,” সে আর অভিযোগ করে না।
তখন তার মনে জন্ম নেয় শান্তি

👉 গীতা বলে:
“যোগস্থঃ কুরু কর্মাণি।” (গীতা ২/৪৮)
অর্থাৎ, ফলের চিন্তা না করে কর্তব্যে স্থিত থাকো।

🔹 ঠাকুরের দৃষ্টিতে:
শান্তি কেবল তখনই আসে যখন মানুষ অদৃষ্টের প্রতি আস্থা রাখে।
যা ঘটে তা ঈশ্বরের ইচ্ছায়, তাই অভিযোগ নয় — কৃতজ্ঞতা প্রয়োজন।
নাম এই কৃতজ্ঞতাকে গভীর করে।


4️⃣ মন সংসারের চালক

“সংসারের ভাব সকলই মনের দ্বারা চলিয়া থাকে।”

জগৎ আসলে মন দ্বারা গঠিত।
যেমন স্বপ্নের জগৎ বাস্তব মনে হয়, তেমনি জাগতিক সংসারও মনপ্রসূত।
মন যেদিকে যায়, জগৎও সেদিকেই ঘোরে।

👉 গীতা (৬/৫):
“উদ্ধরেত আত্মনাত্মানং।” — মনকে মন দ্বারা উত্তোলন করতে হবে।
অর্থাৎ, মনকে নিম্নলোকে না টেনে, আত্মজ্ঞান দ্বারা উচ্চে তুলতে হবে।

🔹 ঠাকুরের ব্যাখ্যা:
মনকে বশে আনার চেষ্টা নয়,
মনকে নামের দিকে প্রবাহিত করা দরকার।
নামই মনকে প্রশান্ত ও পবিত্র করে তোলে।


5️⃣ মন প্রতিশোধন নয়, নামস্মরণ

“সেই মনের জন্য কোন প্রতিশোধনের চেষ্টা না করিয়া সর্ব্বদা নাম করিয়া যাইতে হয়।”

মনকে জোর করে শান্ত করা যায় না।
যত বেশি দমন করো, ততই মন বিক্ষিপ্ত হয়।
ঠাকুর বলেন — মনকে নামের পথে যেতে দাও।
নাম নিজেই মনকে পরিষ্কার করে, যেমন গঙ্গাজল নিজে পবিত্র করে।

👉 গীতা (৮/৭):
“মামনুস্মর যুদ্ধ্য চ।” — অর্থাৎ, যা-ই করো, আমার নাম স্মরণ করে করো।

🔹 ঠাকুরের ভাব:
নাম জপ শুধু মুখের কাজ নয়,
এটি মনকে ঈশ্বরমুখী করে তোলার এক অন্তর্মুখী প্রক্রিয়া।
যখন মন নামের সঙ্গে একাকার হয়, তখনই মুক্তি।


6️⃣ নামই পরম ব্রহ্ম ও মোক্ষধর্ম

“নাম পরম ব্রহ্ম, মোক্ষ ধর্ম্ম, নামই সত্য, নামই আনন্দ।”

নাম মানে ঈশ্বরের চেতন রূপ।
যখন কেউ নাম জপ করে, সে আসলে ব্রহ্মের স্পন্দন ধারণ করে।
নাম ও ব্রহ্ম আলাদা নয় — নামই তাঁর প্রকাশরূপ।

👉 গীতা (৯/২২):
“যঃ স্মরতি মাং সর্বদা, তস্যাহম্ সুদুর্লভঃ।”
অর্থাৎ, যিনি সদা আমার স্মরণে থাকেন, আমি তাঁকে কখনও ছাড়ি না।

🔹 ঠাকুরের ভাব:
নাম জপ হল ঈশ্বরের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ।
নাম হল ধ্যান, যোগ ও মুক্তির একত্র রূপ।
যেখানে নাম আছে, সেখানেই আনন্দ — কারণ নামই আনন্দময় ব্রহ্ম।


7️⃣ নাম চিন্তামণি

“নাম স্বভাবতঃই পবিত্র, নামকে চিন্তামণি বলিয়া ঋষিগণ প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন।”

চিন্তামণি মানে — এমন রত্ন, যা চিন্তা করলেই ইচ্ছা পূরণ হয়।
ঋষিরা বলেন, নামই সেই চিন্তামণি, কারণ নাম জপে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়।

কিন্তু ঠাকুর বলেন —
নাম জপে বাহ্য কামনা পূর্ণ হওয়ার থেকেও বড় প্রাপ্তি হল অন্তর শান্তি
নাম মনকে এমনভাবে রূপান্তরিত করে,
যেখানে আর কামনা থাকে না, কেবল আনন্দ ও প্রেম থাকে।

👉 গীতার অনুরণন:
“সুখদুঃখে সমে কৃত্বা, লাভালাভৌ জয়াজয়ৌ।”
যখন মন নামের জপে নিমগ্ন, তখন সব দ্বৈত ভেদ মিলিয়ে যায়।

🔹 ঠাকুরের দর্শন:
নাম শুধু মুক্তি দেয় না, নামই প্রেম।
যে নামের মধ্যে থাকে, সে ব্রহ্মের সঙ্গেই একাকার হয়ে যায়।
তখন বলে—
“নামই পরম ব্রহ্ম, নামই আনন্দ।”


🌼 উপসংহার (Conclusion)

বেদবাণী ১৩০ আমাদের শেখায়—

  • ভাগ্যের উপর রাগ নয়, নামের উপর আস্থা রাখো।

  • মনকে দমন নয়, নামের পথে নিয়ে যাও।

  • নামের মধ্যেই ব্রহ্ম, নামের মধ্যেই মুক্তি।

🪔 “নাম পরম ব্রহ্ম — নামই অনন্ত শান্তি।”


💠 সংক্ষিপ্ত সার (Summary)

শ্রীশ্রীঠাকুর আমাদের শেখাচ্ছেন—
🔹 জীবনযাত্রার সুখদুঃখকে প্রারব্ধফল হিসেবে গ্রহণ করো।
🔹 মনকে জোর করে শোধন নয়, নামের আলোয় উজ্জ্বল করো।
🔹 নামই মুক্তির দরজা, নামই পরম সত্য।
🔹 নামের মধ্যে আছে চিন্তামণি শক্তি — যা মন, মোক্ষ ও আনন্দকে একত্র করে।


🎵 সমাপ্তি (End Script)

🎙️ বক্তব্য:
“শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী আমাদের শেখায় —
মন দমন নয়, নাম জপই মুক্তির পথ।
যেখানে নাম আছে, সেখানে ঈশ্বর স্বয়ং উপস্থিত।
তাই বলি —
‘নাম পরম ব্রহ্ম, নামই আনন্দ।’
🌸 জয় গুরু জয় রামঠাকুর 🌸”


🔔 সাবস্ক্রিপশন অনুরোধ (Subscription Request)

🙏 যদি ভিডিওটি ভালো লেগে থাকে, তাহলে—
📌 Like | Share | Comment | Subscribe করুন
👉 এবং ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট
🌐 www.srisriramthakur.com
বাণীর আলোকে পথ চলা – শ্রীশ্রী রামঠাকুরের পত্রাংশের ব্যাখ্যা
ধর্ম, গীতা ও বেদবাণীর মিলিত আলোয় সত্যের সন্ধান

🔹 Website: www.srisriramthakur.com
🔹 Script & Narration: Subrata Majumder
🔹 From the Book: বাণীর আলোকে পথ চলা – Sri Sri Ramthakur-er Potransho-er Byakhya
🔹 Hashtags:
#SriSriRamthakur #VedBani #GitaDarshan #NamMahima #Bhakti #SpiritualBangla


নামই পরম ব্রহ্ম | বেদবাণী ১৩০ | শ্রীশ্রী রামঠাকুর ও গীতার বাণী” (Name is the Supreme Brahman | Sri Sri Ramthakur Vedbani & Gita Vision) নামই পরম ব্রহ্ম | বেদবাণী ১৩০ | শ্রীশ্রী রামঠাকুর ও গীতার বাণী” (Name is the Supreme Brahman | Sri Sri Ramthakur Vedbani & Gita Vision) Reviewed by শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ(SriSriramthakur O gan Ganer vhovon Youtube channel) on October 22, 2025 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.