গুরু কর্তা: শ্রীশ্রী রামঠাকুরের অপূর্ব দেবদেবী তত্ত্ব
~~ শুভ সকাল । ~~
গুরু কর্তা ।
দেবদেবী তারই সহচর ও সহচরী ।
জয় গুরু <> জয় রাম <>
জয় গোবিন্দ * * * * * * *
অতুলবাবুর স্ত্রীর মনে মাঝে মাঝেই একটি প্রশ্ন প্রকট হয়ে উঠে । একদিন ঠাকুরকেই তা জিজ্ঞেস করে বসলেন ,
আপনার ভক্ত তো আপনার শ্রীচরণে সব দেবদেবীর পূজা করেন , তাহলে দেবদেবীর এতগুলি ফটো ঘরে রাখার দরকার কি ?
সঙ্গে সঙ্গে ঠাকুর বলে উঠলেন ,
ক্যান আপনি কি একলা থাকতে ভালবাসেন ? সেই রকম আমিও একলা থাকতে ভালবাসি না ।
ঠাকুর দেবতা কাহাকেও বিসর্জন দিতে নাই , আবার আবাহন কইরা আনিতে নাই । যে দেবতার আসার ইচ্ছা হয় সে নিজেই আসে ।
ঘরের কর্তাকে রেখে আর সবাইকে কি তাড়িয়ে দেওয়া যায় ? গুরু কর্তা । দেবদেবী তাঁরই সহচর ও সহচরী ।
রাস্তার লোক ডেকে তার কেউ সেবা করে না । কিন্তু কোন অতিথি এলে তাকে দিতে হয় যথার্থ মর্যাদা । দেবদেবীর বেলাও একই কথা।
তাই তো ঠাকুর দিলেন অপূর্ব সমাধান - কাউকে ডেকে আনবেন না । কিন্তু কেউ এলে তাকে বিসর্জন দেওয়া যায় না ।
শিক্ষা ও ব্যাখ্যা (Education)
এই কথোপকথনের মাধ্যমে শ্রীশ্রী রামঠাকুর ভক্তদের কাছে এক গভীর আধ্যাত্মিক সত্য উন্মোচন করেছেন। এই তত্ত্বের মূল কথাগুলি হলো:
#১. গুরু কর্তা: মূল আশ্রয়
ঠাকুর বলছেন, 'গুরু কর্তা'। অর্থাৎ, গুরুই ঘরের প্রধান। তিনিই মূল আশ্রয় ও আরাধ্য। দেবদেবী হলেন সেই কর্তারই 'সহচর ও সহচরী'। এটি হিন্দুধর্মের সনাতন গুরু-তত্ত্বকে দৃঢ় করে, যেখানে গুরুকে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর সকল দেবতার ঊর্ধ্বে বা তাঁদেরই সম্মিলিত রূপ হিসেবে দেখা হয়।
#২. ঐকান্তিক ভক্তি ও স্থান
শ্রীশ্রী রামঠাকুরের উত্তর— 'ক্যান আপনি কি একলা থাকতে ভালবাসেন?'— থেকে বোঝা যায়, আধ্যাত্মিক জগতের সৌন্দর্য ঐশ্বরিকতার বহুত্বের মধ্যে। ভক্তের হৃদয়ে একবার গুরু প্রতিষ্ঠিত হলে, অন্যান্য দেবদেবী স্বাভাবিকভাবেই তাঁরই অঙ্গরূপে স্থান পান। জোর করে কাউকে 'আবাহন কইরা আনিতে' হয় না, আবার কাউকে 'বিসর্জন' দিয়ে তাড়িয়েও দেওয়া যায় না।
#৩. অতিথির মর্যাদা
দেবদেবীকে 'অতিথি'র সঙ্গে তুলনা করে ঠাকুর বোঝালেন, কেউ যখন স্ব-ইচ্ছায় বা ভক্তের টানে ঘরে বা জীবনে আসেন, তখন তাঁকে 'যথার্থ মর্যাদা' দিতে হয়। এটি সকল প্রকার ঐশ্বরিক সত্তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার বার্তা দেয়।

No comments: