শ্রীশ্রীঠাকুরের সত্যনারায়ণ সিন্নিদান ও একত্ব সাধনা শ্রী কৈবল্যধাম মাহাত্ম্য থেকে - শ্রী সুরেন্দ্র বিজয় চৌধুরী
শ্রীশ্রীঠাকুরের সত্যনারায়ণ সিন্নিদান ও একত্ব সাধনা
শ্রী কৈবল্যধাম মাহাত্ম্য থেকে - শ্রী সুরেন্দ্র বিজয় চৌধুরী
ভূমিকা
পাঁচ বাটি সিন্নি প্রতীকী রূপে পঞ্চভৌতিক দেহের নিদর্শন। ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুত ও ব্যোম – এই পাঁচ উপাদানই আমাদের দেহের মূল ভিত্তি। রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শব্দ—সব মিলিয়েই গঠিত হয় এই সিন্নির প্রতীকী ব্যাখ্যা।
সিন্নিদান ও আত্মনিবেদন
সিন্নিদান আসলে মন, বুদ্ধি, অহঙ্কার ও পঞ্চেন্দ্রিয় যুক্ত দেহকে সর্ব্বাত্মরূপে আত্মনিবেদন করার একটি উপায়। এই আত্মনিবেদনের মধ্য দিয়েই মানুষ গুণ থেকে গুণাতীত, সাকার থেকে নিরাকার এবং সসীম থেকে অসীমের পথে যাত্রা করে। শুভ্র বস্ত্র ও ক্ষুদ্র আসন আসলে অনন্ত অসীমের প্রতীক।
দ্বৈত থেকে অদ্বৈতের যাত্রা
শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন—“যুগল ভজন করে যারা প্রেমানন্দে ভাসে তারা।” যুগল মানেই এক বস্তু, দুইয়ের মিলিত রূপ। রাধা-কৃষ্ণ যুগল মিলন রূপে প্রকাশিত হন শ্রীগৌরচন্দ্র। আবার গৌর-নিতাই যুগল মিলিত রূপে প্রকাশ পান শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্র দেব হিসেবে, যিনি শ্রীসত্যনারায়ণ। এখানে দ্বৈত ও অদ্বৈতের কোনো দ্বন্দ্ব নেই; আছে কেবল দ্বন্দ্বাতীত ভাব—“দ্বন্দ্বাতীত বিমৎসর” (গীতা)।
সমন্বয় সাধনা
বৈদিক বিভিন্ন ধর্মপথের সমন্বয় সাধন করেছেন শ্রীশ্রীঠাকুর সত্যনারায়ণের সেবার মাধ্যমে। সিন্নিদান তাই কেবল আচার নয়, বরং একত্ব সন্ধান ও সত্যরূপে আত্মনিবেদন। বহু সত্ত্বার মাঝ থেকে একত্বের সন্ধানই শ্রীসত্যনারায়ণ পূজার মূল শিক্ষা।
উপসংহার
শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীতে সিন্নিদান কেবল উপাচার নয়; এটি জীবনের সর্বোচ্চ সাধনার প্রতীক। বহুত্ব থেকে একত্বে, দ্বৈত থেকে অদ্বৈতে, সসীম থেকে অসীমে পৌঁছানোর এক সহজ ও স্বাভাবিক পথ। এই সমন্বয়ের মধ্য দিয়েই মানুষের আত্মা মুক্তির পথ খুঁজে পায়।

No comments: