ভগবান শিব: মহাদেব, আদিদেব ও কল্যাণময় ঈশ্বর
সংস্কৃত: Śiva — মঙ্গলময়, শুভ, কল্যাণময়
ভগবান শিবের পরিচয়
শিব ত্রিদেবের একজন — ব্রহ্মা (সৃষ্টিকর্তা), বিষ্ণু (পালনকর্তা) ও শিব (সংহারকর্তা)। তিনি শুধু ধ্বংসকারী নন, বরং সংহার ও পুনঃসৃষ্টির প্রভু। এজন্য তাঁকে বলা হয়:
- মহাদেব — সর্বোচ্চ দেব
- আদিদেব — সৃষ্টিরও পূর্ববর্তী
- পশুপতি — সকল জীবের ঈশ্বর
শিবের প্রধান রূপ ও বৈশিষ্ট্য
- মহাকাল – সময়েরও ঊর্ধ্বে, জন্ম ও মৃত্যুর নিয়ন্ত্রক।
- নটরাজ – তাণ্ডব নৃত্য সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের প্রতীক।
- অর্ঘ্যগ্রাহী যোগী – কৈলাসে ধ্যানস্থ, জটাজুটধারী, গলায় বাসুকি, মাথায় অর্ধচন্দ্র ও গঙ্গা।
- অরূপ-স্বরূপ – প্রকৃত রূপ নিরাকার, তবে ভক্তদের অনুকূলে রূপধারী।
শাস্ত্রীয় ভিত্তি
বেদে
ঋগ্বেদে শিবকে রুদ্র নামে বর্ণনা করা হয়েছে — “নমো রুদ্রায় বিশ্নবে মৃদুতাম যস্যী নঃ শম্ভভে নমঃ”।
উপনিষদে
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে বলা হয়েছে — “एको हि रुद्रो न द्वितीयाय तस्थुर्” অর্থাৎ, ঐক্যরূপ রুদ্রই একমাত্র সত্য।
ভগবদ্গীতা
শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন — “রুদ্রাণাং শংকরশ্চাস্মি” (গীতা ১০.২৩)।
শিব পুরাণ
এখানে শিবকে বলা হয়েছে পরমব্রহ্ম, যিনি নিরাকার অথচ ভক্তদের কল্যাণে সাকার রূপ ধারণ করেন।
শিবের শক্তি ও গুণাবলী
- সংহার ও সৃষ্টির প্রভু
- যোগীশ্বর — যোগ ও ধ্যানের পরম প্রতীক
- অভয়দাতা — ভক্তদের সকল ভয় ও দুঃখ থেকে মুক্তি দানকারী
- করুণাময় — সামান্য ভক্তিতেই ভক্তকে রক্ষা করেন
- ভস্ম-অলঙ্কৃত — সংসারের নশ্বরতার প্রতীক
শিবের শিক্ষা
ভগবান শিবের শিক্ষা মানবজীবনের মুক্তির পথ প্রদর্শন করে:
- আসক্তিহীন জীবনযাপন
- যোগ ও ধ্যানের মাধ্যমে ঈশ্বরপ্রাপ্তি
- অহংকার দমন
- ভক্তি, প্রেম ও করুণার চর্চা
উপসংহার
শিব একদিকে ভয়ংকর রুদ্র, অন্যদিকে মঙ্গলময় শম্ভু। তাঁর ধ্যান, নামস্মরণ ও উপাসনা ভক্তকে মুক্তি, শান্তি ও কল্যাণ প্রদান করে।
“শিবো হি শিভতাং শ্রেষ্ঠঃ” – শিবই সর্বোত্তম কল্যাণের আধার।
॥ HAR HAR MAHADEV ॥

No comments: