শ্রীশ্রী গোবিন্দ: সৃষ্টি, আধ্যাত্মিক শক্তি ও সাধনা
১. শ্রী শ্রী গোবিন্দের সৃষ্টি তত্ত্ব
শাস্ত্র অনুসারে গোবিন্দ নামেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পরম কারণ বলা হয়।
ব্রহ্মসংহিতা (৫.১):
“ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ। অনাদিরাদির্ গোবিন্দঃ সর্বকারণকারণম্॥”
অর্থাৎ, কৃষ্ণ বা গোবিন্দ হলেন চূড়ান্ত ঈশ্বর, যিনি আনন্দময়, চিরন্তন সচ্চিদানন্দময় বিগ্রহ। তিনি অনাদি, তবুও সমস্ত কিছুর আদি কারণ।
শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ (১০.৮.১৪) অনুযায়ী, গোবিন্দ হলেন বিশ্বরক্ষক ও সমগ্র সৃষ্টির মূল আশ্রয়।
২. শ্রী শ্রী গোবিন্দের আধ্যাত্মিক শক্তি
ভগবান গোবিন্দ তিন প্রকার প্রধান শক্তির অধীশ্বর:
- অন্তরঙ্গ শক্তি: স্বরূপ শক্তি দ্বারা ভক্তরা চিরন্তন প্রেমসেবায় যুক্ত থাকে।
- বহিরঙ্গ শক্তি: মায়া শক্তি দ্বারা জড় জগতের সৃষ্টি, পালন ও লয় ঘটে।
- তটস্থ শক্তি: জীবশক্তি; অসংখ্য জীবাত্মার সৃষ্টি ও অবস্থান।
ভগবদ্গীতা (৯.১০) অনুযায়ী, “ময়াধ্যক্ষেণ প্রকৃতিঃ সূযতে সচরাচরম্।” অর্থাৎ, আমার অধীনে প্রকৃতি সমগ্র জগতের সৃষ্টি করে।
৩. শ্রী শ্রী গোবিন্দের সাধনা পদ্ধতি
- শ্রবণ ও কীর্তন: ভগবানের নাম, গুণ, লীলা শ্রবণ ও কীর্তন করা। (শ্রীমদ্ভাগবত ১.২.১৭)
- স্মরণ: গোবিন্দের নাম ও রূপ সর্বদা হৃদয়ে স্মরণ করা।
- পূজা ও সেবা: মন্দির পূজা, আরতি, নৈবেদ্য প্রদান, গরু সেবা ও ব্রজবাসী সেবা।
- জপ: মহামন্ত্র জপ:
“হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥” - সৎসঙ্গ ও গুরুভক্তি: সত্যসঙ্গ গ্রহণ করে আচার্য ও গুরুজনের নির্দেশ অনুসারে ভক্তি পালন।
৪. সাধনার ফল
- চিরন্তন শান্তি ও আনন্দ
- মুক্তি: জন্ম-মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্তি
- গোলোকে প্রবেশ: ভক্ত শ্রী শ্রী গোবিন্দের নিত্যলীলায় যোগদান
সারসংক্ষেপ
শ্রী শ্রী গোবিন্দ পরমেশ্বর ভগবান, যিনি সমস্ত সৃষ্টির মূল কারণ ও সমস্ত শক্তির অধিপতি। তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তি বিশ্বজগৎকে চালিত করে, আর তাঁকে লাভ করার একমাত্র পথ হল ভক্তি-সাধনা। ভক্তি, নাম-জপ, কীর্তন, সেবা ও স্মরণের মাধ্যমে গোবিন্দকে লাভ করা যায়।
II KRISHNA KRISHNA GOBINDAY II

No comments: