শ্রীশ্রীরামঠাকুরের বেদবাণী (পত্রাংশ নং ১২৬) ও ভগবদ্গীতা — জীবনের সত্য শক্তি কী?
এই নিবন্ধে আমরা বেদবাণী (১২৬)-এর মূল বক্তব্য তুলে ধরব এবং সেটি কিভাবে ভগবদ্গীতার শাস্ত্রীয় শিক্ষার সঙ্গে মিশে জীবনের বাস্তব নির্দেশনা দেয় তা ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করব।
🔹 মূল বাণী (বেদনিষ্ঠ পাঠ)
“এই জগতে পুরুষের আধিপত্য উপস্থিত হইলে নানান রকম উপাধিতে নানান ভাবে নানাদিকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণে কেবল মহৎ প্রকৃতির নিকটই ঘুরিয়া বেড়ায়। মহৎশক্তিসম্পন্ন বিজ্ঞজন ঐ সকল গুণ-বিগুণ তরঙ্গের বেগে পড়িয়া ধৈর্য্য শক্তির শরণ নিয়া সর্ব্বদা থাকিতে চেষ্টা করিয়া থাকেন, অধীর হ’ন না। অদৃষ্টচক্রে যাহাই আবির্ভাব হইবে তাহাই সহিষ্ণুতা দিয়া ক্ষয় করিতে চেষ্টা রাখাই উচিত।”
🔹 সারসংক্ষেপ ও মূল ভাব
এই বাণী বলছে— যখন কোনো ব্যক্তি বা শ্রেণি-সমষ্টির উপর আধিপত্য বা প্রভাব বাড়ে, তখন সমাজ নানা উপাধি, সম্মান ও আকর্ষণের মাধ্যমে মানুষকে টানে। তবে প্রকৃত ক্ষমতা ও গুণ-গুণধর্মী মানুষের প্রতি এই আকর্ষণ বেশি গভীর হয়। সত্যনিষ্ঠ ও বুদ্ধিমান মহাজনরা এই ঢেউয় ভেসে না গিয়ে ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা ধারণ করে স্থির থাকেন। ভাগ্যের ওঠা-নামা (অদৃষ্টচক্র) যতই আসে—সে সব সহিষ্ণুতা ও আত্মসংযমে কেটে দেয়াই প্রকৃত উপদেশ।
🔹 পয়েন্ট-বাই-পয়েন্ট ব্যাখ্যা
- পুরুষের আধিপত্য কী বোঝায়?
এখানে 'পুরুষ' শব্দটি লিঙ্গের সীমাবদ্ধ নয়—বরং সামাজিক বা ব্যক্তিগত প্রভাব, ক্ষমতা ও প্রতিনিধিত্বকে বোঝায়। - আকর্ষণ কাদের দিকে কাজ করে?
সমাজ সাধারণত মহৎ চরিত্র, জ্ঞান ও সংযমের প্রতি অভিমুখী হয়—তাই এই আকর্ষণ সৎ, শক্তিশালী ও বিজ্ঞ ব্যক্তিদের দিকে বেশি গড়ায়। - মহৎশক্তিসম্পন্ন বিজ্ঞজনের করণীয়
গুণ-গুণের তরঙ্গ বা সমাজের প্রশংসায় ভেসে না থেকে ধৈর্য ধরে নিজের পথ অবলম্বন করা—এটাই উপযুক্ত। - অধীরতা ও ধৈর্যের গুরুত্ব
জীবনে অধৈর্য হলে সহজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়; দীর্ঘমেয়াদি মূল্যবোধকে ধরে রাখতে ধৈর্য অপরিহার্য। - অদৃষ্টচক্র (ভাগ্যের ওঠা-নামা)
ভাগ্যের উত্থান-পতন আসে যায়—তাকে সহিষ্ণুতা দিয়ে মোকাবেলা করাই জীবনকে স্থিতিশীল করে।
🔹 ভগবদ্গীতার সাথে সংযোগ
ভগবদ্গীতা বহুস্থানে একই মনোভাবকে উৎসাহিত করে—স্থিতধীরতা, সমদৃষ্টি ও কर्तব্যনিষ্ঠা। নিচে গুরুত্বপূর্ণ মিলগুলো সংক্ষেপে দেওয়া হলো:
1) আধিপত্য ও আকর্ষণ
গীতায় বলা হয়েছে যে গুণ-গুণধর্মেই মানুষ আকৃষ্ট হয়; তাই গুণ-গুণের মোহে আটকে না থেকেও তার ঊর্ধ্বে উঠতে হবে।
2) মহৎদের অনুকরণ
গীতা বলে— যেসব কর্ম মহৎ, সাধারণ লোক তা অনুসরণ করে; তাই মহৎজনদের দায়িত্ব বাড়ে—তারা স্থির ও ন্যায়পরায়ণ হতে হবে।
3) ধৈর্য ও স্থিতধীরতা
গীতার মূল শিক্ষা— সুখ-দুঃখে সমভাবে স্থির থাকা; সেটাই মুক্তির যোগ্যতা বাড়ায়।
4) ইন্দ্রিয়প্রবণতা ও ক্ষণস্থায়ী অনুভূতি
ইন্দ্রিয়সংবেদনায় আসা সুখ-দুঃখ ক্ষণস্থায়ী—সুতরাং তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে ধৈর্য ধারণ করাই শ্রেয়।
🔹 বাস্তব জীবনে প্রয়োগ (Practical Takeaways)
- আপনি যদি নেতৃত্বে থাকেন, তখন সম্মান-মোহে विलীন না হয়ে পরিশুদ্ধ চরিত্র ধরে রাখুন।
- সমাজের প্রশংসা বা বিচারের ঢেউ আপনাকে পরিবর্তন করতে দিলে নিজের মূল নীতিকে পরীক্ষা করুন।
- জীবনের ওঠা-নামায় সহিষ্ণুতা অনুশীলন করুন—যোগব্যায়াম, ধ্যান বা নিয়মিত আত্ম-পর্যালোচনা সাহায্য করবে।
- গোটা সমাজকে ভালো দিক দেখানোর জন্য ধারাবাহিক, ধৈর্যশীল ও ন্যায়পরায়ণ আচরণ মডেল করুন।
🔹 উপসংহার
শ্রীশ্রীরামঠাকুরের বেদবাণী ও ভগবদ্গীতার শিক্ষা এককথায় বলে— আধিপত্য ও আকর্ষণের ঢেউয় ভেসে না গিয়ে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা ধারণ করো; সেটাই জীবনের প্রকৃত শক্তি।
🔹 ভিডিও ও সোশ্যাল কল-টু-অ্যাকশন
এই আলোচনার একটি ভিডিও ভার্সন আছে — যদি আপনি দেখেন, তাহলে নিচের কাজগুলো করুন:
- ভিডিও দেখুন
- ভিডিওটি লাইক / শেয়ার করুন এবং চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।
- কমেন্টে বলুন—আপনার জীবনে কখন ধৈর্য সবচেয়ে বড় সাহায্য করেছে?

No comments: