গুরু ভাই বোনসহ সকল সনাতনী ভাই বোনদের জানাই স্বাগত ,উদ্দেশ্য গুরু দেবের অমৃত বানী সকলের মাঝে প্রচার করা।

গীতার আলোকে বৃক্ষের সেবাধর্ম: নিঃস্বার্থ কর্মের এক মহান শিক্ষা | Published Oct 27, 2025

গীতার আলোকে বৃক্ষের সেবাধর্ম: নিঃস্বার্থ কর্মের এক মহান শিক্ষা

Published on: October 27, 2025  |  Author: Subrata Majumder

এক বিস্তৃত বৃক্ষ—সবুজ পাতা, ফল ফোটানো শাখা; বৃক্ষের সেবাধর্ম ও নিঃস্বার্থ কর্মের প্রতীক
Image description: বিস্তৃত ছায়া দেওয়া একটি বৃক্ষ — প্রকৃতির সেবা ও নিঃস্বার্থ কর্মের প্রতীক। Keywords: বৃক্ষ, নিঃস্বার্থ সেবা, স্থিতপ্রজ্ঞ, নিষ্কাম কর্ম, গীতা।

Introduction to the Topic

ডাঃ খগেন্দ্রনাথ গুপ্তের এই গভীর ভাবনাটি আমাদের প্রকৃতির প্রতি এক নতুন দৃষ্টিকোণ দেয়। এটি কেবল একটি কবিতা বা দার্শনিক চিন্তা নয়, বরং এটি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার নিষ্কাম কর্মযোগের এক সুন্দর রূপক। গীতা আমাদের কর্ম করতে শেখায়, কিন্তু তার ফল বা প্রত্যাশা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে বলে। বৃক্ষ এই নিষ্কাম কর্মের এক জীবন্ত উদাহরণ। আসুন, গীতার আলোকে এই ভাবনার গভীরে প্রবেশ করি।

মূল বিষয়বস্তু

গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে কর্মের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, "কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন" — অর্থাৎ, তোমার অধিকার শুধু কর্মের ওপর, তার ফলের ওপর নয়। এই বাণীটি বৃক্ষের জীবনযাত্রার সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়।

১. বৃক্ষের জীবন ও নিষ্কাম কর্ম

বৃক্ষ তার জীবনচক্র জুড়ে নিরন্তর কর্ম করে চলে। বীজ থেকে অঙ্কুর, তারপর শাখা-প্রশাখা, ফুল-ফল— এই সবই তার স্বাভাবিক কর্ম। কিন্তু বৃক্ষ এই কর্মের ফল, যেমন তার ফুল বা ফল, নিজের জন্য সংরক্ষণ করে না। সে নিঃস্বার্থভাবে তা মানুষ, পশুপাখি, এমনকি দেবতাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে। এটিই নিষ্কাম কর্ম। আমাদেরও উচিত বৃক্ষের মতো কোনো ফল বা প্রতিদানের আশা না করে নিজেদের কর্তব্য পালন করা।

২. বৃক্ষের নির্বিকারভাব ও স্থিতপ্রজ্ঞতা

গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তির লক্ষণ বর্ণনা করেছেন। স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি হলেন যিনি সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি, জয়-পরাজয়ে নির্বিকার থাকেন। বৃক্ষও ঠিক তেমনই। সে ঝড়-বৃষ্টি, রোদ-ঝড় সবকিছু সহ্য করে, নির্বিকার চিত্তে। তার কোনো ব্যক্তিগত বাসনা বা কামনা নেই। সে কেবল নিজের অস্তিত্বের মাধ্যমে বিশ্বজগতের সেবা করে। এই নির্বিকারভাবই আমাদের জীবনে প্রকৃত শান্তি আনতে পারে।

৩. ফল ও সেবা

গীতার মতে, আমাদের কাজের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত জগতের কল্যাণ। বৃক্ষ তার ফল উৎপন্ন করে, কিন্তু সেই ফলের ওপর তার কোনো দাবি থাকে না। মানুষ সেই ফল ভোগ করে, পশুপাখি তার ছায়ায় আশ্রয় নেয়, এবং সেই ফল ভগবানের পূজায় অর্পিত হয়। এই উদাহরণ আমাদের শেখায় যে, আমাদের শ্রমের ফল যেন কেবল আমাদের ব্যক্তিগত ভোগের জন্য না হয়ে অপরের সেবায়ও ব্যবহৃত হয়। এটিই প্রকৃত সেবা।

উপসংহার

ডাঃ খগেন্দ্রনাথ গুপ্তের ভাবনাটি গীতার শিক্ষাগুলোকে একটি সহজ ও বাস্তবসম্মত রূপক দিয়ে আমাদের সামনে তুলে ধরেছে। বৃক্ষ আমাদের জীবনের এমন একটি শিক্ষক, যে মৌনভাবে আমাদের নিষ্কাম কর্ম, নিঃস্বার্থ সেবা এবং স্থিতপ্রজ্ঞতার গভীর জ্ঞান দান করে। আসুন আমরা বৃক্ষের এই শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করি এবং আমাদের প্রতিটি কর্মকে জগতের কল্যাণে উৎসর্গ করি।

প্রয়োগিক টিপ: প্রতিদিন একটি ছোট্ট কাজ করুন — যেমন একটি গাছ লাগানো, একটি মুঠো শালি দান করা বা কাউকে বিনামূল্যে সাহায্য করা—এই ছোট নিঃস্বার্থ কর্মগুলো গীতার নিষ্কাম-ভাব অবলম্বনের পথে আপনার পদচিহ্ন হবে।

হ্যাশট্যাগ ও মূলশব্দ

#গীতা #নিষ্কামকর্ম #নিঃস্বার্থসেবা #বৃক্ষেরশিক্ষা #স্থিতপ্রজ্ঞ #ভগবানেরসেবা #কর্মফল #গীতারব্যাখ্যা

Author: Subrata Majumder • Published: October 27, 2025

© 2025 Vedbani. All rights reserved.

Reviewed by শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ(SriSriramthakur O gan Ganer vhovon Youtube channel) on September 07, 2025 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.