গুরু ভাই বোনসহ সকল সনাতনী ভাই বোনদের জানাই স্বাগত ,উদ্দেশ্য গুরু দেবের অমৃত বানী সকলের মাঝে প্রচার করা।

ঠাকুরের যাদবপুর গৃহপ্রবেশ: ক্ষিতিভূষণ ও পাদুকার কাহিনী

ঠাকুরের যাদবপুর গৃহপ্রবেশ: ক্ষিতিভূষণ ও পাদুকার কাহিনী | শ্রীশ্রী কৈবল্যধাম

ঠাকুরের যাদবপুর গৃহপ্রবেশ: ক্ষিতিভূষণ ও পাদুকার কাহিনী

নিবন্ধক: Subrata Majumder • বিভাগ: আধ্যাত্মিক গল্প • ভাষা: বাংলা
যাদবপুর গৃহপ্রবেশ — ছবি
যাদবপুর গৃহপ্রবেশের স্মৃতি

একদিন কথা প্রসঙ্গে ঠাকুর ইচ্ছা প্রকাশ করলেন, কেউ যদি নিরিবিলিতে একখানি কুঁড়ে ঘর করে দেয় তাহলে তিনি শান্তিতে থাকতে পারেন।

ঠাকুরের আশ্রিত আসামের করিমগঞ্জের চা-বাগানের মালিক ক্ষিতিভূষণ সেন মহাশয়। তিনি একদিন ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করলেন, "বাবা,যাদবপুরে আমার একটু জায়গা আছে,সেখানে একটা কোঠা করলে কেমন হয়?" ঠাকুর বললেন, "ভালোই হয়।"

ঘর তৈরী হবার পর ক্ষিতিবাবু এসে ঠাকুরকে বললেন, "বাবা, ঘর তৈয়ার প্রায় হইছে, ঘরের সামনে একটু বারান্দা করব?"

ক্ষিতিবাবুর মনে মনে ধারণা, বারান্দা না হলে যারা আসবেন তারা জলে ভিজবেন।

ঠাকুর বললেন, "খুব ভালোই হইবো।" বারান্দা তৈরী হলো। একতলার লোকের ভীড় হবে ভেবে তিনি স্থির করলেন আর একখানা ঘর ওপরে করবেন।

এই উদ্দেশ্য ক্ষিতিভূষণবাবু তারপর আর একদিন এসে ঠাকুরকে বললেন, "আমি মনে করছি যে দোতলায় আর একটি ঘর করি।" ঠাকুর সায় দিয়ে বললেন, "তবে ত আর কথাই নাই।"

ঠাকুর নিজ হাতেই এই বারান্দা দোতলায় ঘরসহ প্ল্যান করে দিলেন। সেই প্ল্যানমতোই সব তৈরী হলো। ওপরে নীচে দুতলাতেই ঘরের লাগা কল পায়খানা বন্দোবস্ত হলো। ঠাকুর নিজে পাঁজি দেখে গৃহ প্রবেশের জন্য ১৩ই ফাল্গুন ধার্য্য করলেন।

ঠাকুরের সম্মতি নিয়ে আশ্রিতদের ঐ তারিখে যাদবপুর গৃহ প্রবেশের উৎসবে উপস্থিত থাকতে নিমন্ত্রণ পত্র পাঠানো হলো। ঠাকুর বিশেষ করে বলে দিলেন যেন মায়েদের সঙ্গে আনা হয়। যারা আসবেন তাদের থাকা খাওয়ার জন্যে বাড়ি ঠিক রাখতে ঠাকুর বলে দিলেন।

১৩ই ফাল্গুন দিন স্থির,অথচ যাঁর আবাস হবে তিনি যাওয়ার কথা বলছেন না। ক্ষিতিভূষণবাবু অধীর ভাবে ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করলেন, "বাবা, আপনি কখন যাইবেন?"

ঠাকুর ধীরভাবে জানালেন যে দালানকোঠার তাঁর কোন প্রয়োজন নেই। বিস্মিতভাবে তিনি বললেন, "আমি কই যামু।" ক্ষিতিভূষণবাবু একটু আমতা আমতা করে বললেন, যে ঠাকুর নিজে নিরিবিলি থাকার ইচ্ছা জ্ঞাপন করেছিলেন, তাই যাদবপুরে এই বাড়িটি তৈরি করা হচ্ছে, লোকজন নিমন্ত্রণ করা হয়েছে, সব জোগাড় হয়েছে, এখন ঠাকুর নিজে না গেলে কি অবস্থা হবে।

ঠাকুর কিন্তু সেইখানে যেতে রাজী হলেন না। ঠাকুরের কথা শুনে ক্ষিতিভূಷণবাবুর বাকরোধ হয়ে গেল। অন্তরের গভীর দুঃখে তিনি হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন।

অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও ঠাকুর যখন নিজে কিছুতেই যেতে রাজী হলেন না, অথচ ঠাকুরমশাই তাকে বলছেন গৃহ প্রবেশ করতে, তখন তিনি কাঁদতে কাঁদতে ঠাকুরকে জিজ্ঞেস করলেন যে তিনি কি নিয়ে গৃহ প্রবেশ করবেন।

মধুর বাক্যে আশ্বাস দিয়ে ঠাকুর বললেন, "আমি ত আপনাদের কাছে সর্ব্বদাই আছি। পাদুকা লইয়া যান।"

ঠাকুর তাঁর ব্যবহার করা এক জোড়া কেড'স জুতো দেখিয়ে তাই নিয়ে যেতে ক্ষিতিভূষণে বললেন। জুতো জোড়াটি কিছুদিন আগেই আমার বড় মেয়ে কমলা ঠাকুরের ব্যবহারের জন্য এনে দিয়েছিলো। (এখানে বড় মেয়ে বলতে, কুঞ্জলাল মজুমদার ও শ্রীমতী কিরণবালা মজুমদার উনাদের বড় মেয়ে)।

ক্ষিতিভূষণবাবুর ভারাক্রান্ত মন ঠাকুরের আশ্বাস বাক্যে অনেকটা হালকা হয়ে গিয়েছিল। তিনি ঠাকুরের কথামতো পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে ঠাকুরের পাদুকা মাথায় করে নিয়ে গেলেন।

ঠাকুরের পাদুকা মাথায় নিয়ে ১৩ই ফাল্গুন ১৩৪৯সালে যাদবপুরে শ্রীশ্রীকৈবল্যধাম প্রতিষ্ঠিত হলো। বর্তমান শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের দক্ষিণ পশ্চিম কোণের দোতলা বাড়িটি এই বাড়ি।

ঘরের ঠাকুর শ্রী রামচন্দ্র
— শ্রীমতী কিরণবালা মজুমদার

ভিডিও

প্রকাশ: অনলাইন আর্কাইভ • লেখক: Subrata Majumder

আপনি চাইলে এই পাতা কাস্টমাইজ, অনুবাদ (ইংরেজি/হিন্দি), বা প্রিন্ট-ফ্রেন্ডলি সংস্করণ বানাতে আমাদের বলুন।

ঠাকুরের যাদবপুর গৃহপ্রবেশ: ক্ষিতিভূষণ ও পাদুকার কাহিনী ঠাকুরের যাদবপুর গৃহপ্রবেশ: ক্ষিতিভূষণ ও পাদুকার কাহিনী Reviewed by শ্রী শ্রী সত্যনারায়ণ নমঃ(SriSriramthakur O gan Ganer vhovon Youtube channel) on September 17, 2025 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.